বাংলাদেশ অনলাইন : | বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমান চলাচল চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এখন থেকে এ চুক্তি দুই দেশের মধ্যে উড়োজাহাজ চলাচলের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ৩০ সেপ্টেম্বর (বুধবার) এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশের পক্ষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ২০১৩ সালে দুই দেশের মধ্যে অনুস্বাক্ষরিত চুক্তির আলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিমান চলাচল চুক্তি স্বাক্ষর হলো।
এর আগে ১৯৯৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি ফ্লাইট যেত। যুক্তরাষ্ট্রের একটি অস্থায়ী অনুমতিপত্রের ভিত্তিতে এই উড়োজাহাজ চলাচল করত। ২০০৬ সালে সরাসরি উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৩ সালে। ২০১৫ সালে মন্ত্রিসভা এই চুক্তি স্বাক্ষরে অনুমোদন দেয়।
‘মুক্ত আকাশ’ নীতির ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত এ চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ যেকোনো সংখ্যক সংস্থাকে তাদের মনোনীত বিমান সংস্থা হিসেবে দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিতে পারবে। প্রত্যেক দেশের মনোনীত বিমান সংস্থা দুই দেশের মধ্যে আকাশের তৃতীয় ও চতুর্থ মুক্ত অধিকারে যে কোনো সংখ্যক যাত্রী বিমান ও কার্গো বিমান পরিচালনা করতে পারবে। দুই দেশের মনোনীত বিমান সংস্থা আকাশের পঞ্চম মুক্ত অধিকারে যেকোনো মধ্যবর্তী কিংবা দূরবর্তী পয়েন্টে যেকোনো বিমান দ্বারা যেকোনো যাত্রী বিমান ও কার্গো বিমান পরিচালনা করতে পারবে। সেইসঙ্গে উভয় দেশ কোড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি দুই দেশের বিমান যোগাযোগ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে দুই দেশের অ্যাভিয়েশন শিল্পের নানান বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি পাবে। সরাসরি বিমান যোগাযোগ দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সহযোগিতার সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আজকের এই বিমান যোগাযোগ চুক্তি বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধুত্বের দৃঢ়তার নিদর্শন।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশকে অন্যতম প্রধান অ্যাভিয়েশন হাব ও পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করার জন্য বাংলাদেশের সব বিমানবন্দরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিমানবন্দরসমূহে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। আইকাও-এর প্রতিবেদনেও এর প্রতিফলন হয়েছে। সংস্থাটির ২০১৭ ও ২০১৯ সালের নিরাপত্তা বিধি প্রতিপালন প্রতিবেদনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। আমরা আশা করি,সব শর্ত পূরণ করে আমরা অচিরেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ স্থাপন করতে পারব।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো.মহিবুল হক বলেন, এই চুক্তি দুই দেশের অ্যাভিয়েশন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ও সরাসরি বিমান যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এর নির্ধারিত ক্যাটাগরি-১ অর্জনের জন্য কাজ চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা কামনা করছি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বলেন, আজকে স্বাক্ষরিত বিমান চলাচল চুক্তি দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু হলে তা দুই দেশের জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা প্রদান করবে। এই চুক্তি ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পর্যটনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাব্বির আহমেদ চৌধুরী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার প্রমুখ।
Posted ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh