সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ | ২৫ কার্তিক ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

বিকশিত হোক মানবতার দীক্ষা

মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা :   |   শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

বিকশিত হোক মানবতার দীক্ষা

শিক্ষা মানবসভ্যতার বিকাশের অন্যতম প্রধান উপাদান হলেও আজ তা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে কেবল ভালো ফল, সার্টিফিকেট অর্জন অথবা চাকরি পাওয়ার মধ্যে। কিন্তু পাস করা ও শিক্ষিত হওয়া এক বিষয় নয়। তাই পাসের হার বাড়লেও শিক্ষার গুণগত মান বাড়ছে না। সন্তান কতটা মানবিক জ্ঞানসম্পন্ন হলো, কতটা সুশিক্ষিত হলো, সেদিকে আমাদের খেয়াল নেই। সবাই আমরা ব্যস্ত কেবল নিজেদের নিয়ে। অর্থের বিনিময়ে অর্জিত শিক্ষায় দেশপ্রেম, ভদ্রতা, সভ্যতা, মানবিক মূল্যবোধ আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় শিক্ষার সামাজিক প্রভাব কী? সমাজব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে মেধা, না অর্থ? সম্মানিত কে—অর্থশালী, না বিদ্বান? মানুষ ছুটছে অর্থ, না বিদ্যার পেছনে? আমাদের রোল মডেল কি দুর্নীতিবাজ, না সস্তা জনপ্রিয়তার কেউ? শিক্ষার উদ্দেশ্য কি সমস্যার সমাধান, না অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো? শিক্ষা কি আমাদের বিবেককে প্রসার ঘটাচ্ছে, না অন্ধ অনুকরণের পথে নিয়ে যাচ্ছে? মানুষ কি বিবেকের প্রেরণায় না হুজুগে চলছে? মুক্তচিন্তার প্রকাশ কোথায়? তরুণসমাজের লক্ষ্য কী? আমরা শিক্ষিত হচ্ছি কুশিক্ষায়, না সুশিক্ষায়?

পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র-সর্বত্র আজ মূল্যবোধের অবক্ষয়; নৈতিকতা ও উদারতা লুপ্তপ্রায়। সমাজ হয়ে পড়েছে দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বার্থপর ও অসহিষ্ণু। দৃষ্টি কেবল স্বার্থের চোখে নিবদ্ধ, মানবিকতার চোখ কার্যত অন্ধ। আমাদের তরুণসমাজের কাছে আজ সবচেয়ে বড় সংকট অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের। কাকে অনুসরণ করে স্বপ্ন বুনবে, কার চরিত্র অনুকরণ করবে, কার আদর্শে নিজেকে আলোকিত করবে, তার কোনো সমাধান নেই। তাই আমরা দেখতে পাই নৈতিকতাবিবর্জিত এ সমাজে বড় অপরাধীরাও বড় ডিগ্রিধারী। অন্তত পুঁথিগত বিদ্যায় তারা বেশ এগিয়ে।

শিশুর প্রথম শিক্ষালয় তার পরিবার এবং প্রথম শিক্ষক তার মা-বাবা। তাই শিশুদের নৈতিকভাবে বিকশিত করতে হলে পরিবারের সদস্যদের নৈতিক গুণাবলিসম্পন্ন হতে হবে। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থায় মানুষ যেমন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, তেমনি ধ্যানধারণা ও চিন্তায় এসেছে নানা পরিবর্তন। কিন্তু আমরা যদি নিজেরাই সততা ও নৈতিকতার মূর্ত প্রতীক কিংবা সহানুভূতির প্রতিচ্ছবি না হতে পারি, তবে তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করা কিংবা উন্নত মানুষ গড়া প্রায় অসম্ভব। মা–বাবা রাত ১২টায় ঘরে ফিরে যদি প্রত্যাশা করেন তাঁর সন্তান সন্ধ্যায় ঘরে ফিরবে, তা কি হয়? মা–বাবা ও অভিভাবকেরা অনেক ক্ষেত্রেই সন্তানদের নৈতিক শিক্ষার পরিবর্তে সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষায় প্রলুব্ধ করছেন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। কার সন্তান কত শিক্ষিত হলো, কার পরীক্ষায় কী রেজাল্ট হলো, কে কোথায় পড়ে, পড়া শেষে কী করবে, কার ছেলে বিজ্ঞানী হলো, ইঞ্জিনিয়ার হলো, যা মুখ্য আলোচনার বিষয়বস্তু হলেও নীতিনৈতিকতা, মানবিকতা, দেশপ্রেম কিংবা সত্যিকারের মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার বিষয়ে কোনো ধরনের আলোকপাত নেই।

শিক্ষক ছাত্রকে শুধু শিক্ষা নয়, সঙ্গে দেন দীক্ষাও। কারণ, শিক্ষকদের দায়িত্ব শুধু পাঠদান, সিলেবাসের প্রশ্ন শেখানো কিংবা পরীক্ষায় পাস করানো নয়; বরং শিক্ষার্থীদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ, মানবিক মানুষ তৈরি, বিবেকবোধ জাগ্রত করা, উন্নত চরিত্র গঠন, যা তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানবিমুখতা, শিক্ষকের বিরুদ্ধাচরণ কিংবা শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন, দলাদলি আজকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক সাধারণ চিত্র। আবার অনেক শিক্ষকও হয়ে পড়েছেন বাণিজ্যমুখী। তাই ক্লাসের চেয়ে কোচিং-প্রাইভেটেই মনোযোগ বেশি।

বিদ্যালয়গুলোর এখন কেবল পাসের হার, গ্রেড আর নম্বরের পেছনে ছোটাছুটি। কী শেখানো হচ্ছে আর কী শেখানো দরকার, তা নিয়ে কোনো আয়োজন নেই; নেই কোনো লাগসই পরিকল্পনা। চাকরি পাওয়া বা আর্থিকভাবে সচ্ছলতা আনতেই ব্যস্ত মুখস্থনির্ভর আজকের শিক্ষা-সংস্কৃতি। ফলে বিত্তবৈভব আর প্রাচুর্যে জীবনকে রাঙিয়ে তোলার প্রবল বাসনায় ব্যক্তি বা সমাজের জন্য মহৎ কিছু করার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের মূল চালিকা শক্তি—সততা ও নিষ্ঠার মতো মানবিক গুণাবলি।
আমরা যদি সত্যিই একটি উন্নত, মানবিক ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, তবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে হতে হবে আনন্দময় ও অংশগ্রহণমূলক। শিক্ষকেরা হবেন সবার অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব, অভিভাবকদের লক্ষ্য শুধু ভালো ফল নয়; লক্ষ্য হবে আদর্শ মানুষ গড়ার। শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে থাকবে না কোনো ভয়, থাকবে না কোনো শঙ্কা। সম্পর্কের ভিত্তি হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। এরূপ শিক্ষা কেবল মনুষ্যত্ববোধ ও বিবেক জাগ্রত করবে না, বরং শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে কর্মপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদান করবে এবং জীবনের গভীর সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলবে। তাহলেই আগামী প্রজন্মের কাছে এ দেশ থাকবে নিরাপদ।

মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ।

Posted ১০:১২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(8704 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1401 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.