সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ | ২৫ কার্তিক ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

বিভেদ সৃষ্টি করা শয়তানের কাজ

জাফর আহমাদ :   |   বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫

বিভেদ সৃষ্টি করা শয়তানের কাজ

“(আর হে মুহাম্মদ!) আমার বান্দাদেরকে বলে দাও, তারা যেন মুখে এমন কথা বলে যা সর্বোত্তম। আসলে শযতান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। প্রকৃতপক্ষে শয়তান হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।”(সুরা বনী ইসরাইল:৫৩) এ আয়াতের আলোকে আমরা বলতে কোন বাঁধা ইেন যে, মানুষের মধ্যে যদি কেউ বিভেদ সৃষ্টি তিনি যে-ই হোন কেন, তিনি শয়তানের কাজটির আঞ্ছাম দিচ্ছেন বা তিনি শয়তানের প্রতিণিধির দায়িত্ব পালন করছেন। কারণ উল্লেখিত আয়াতের মর্মার্থে জঠিলতা বলতে কিছুই নেই যে আমাদের বুঝতে কিছুটা সমস্যা আছে। আর মানুষ যে শয়তানের প্রতিণিধি হিসাবে নিজেও শয়তান হতে পারে তা আমরা সুরা আন নাস থেকে জানতে পারি। আল্লাহ তা’আলা বলেন, বলো, আমি আশ্রয় চাই, খান্নাসের ওয়াসওযাসার ক্ষতি থেকে। সে মানুষের মনে প্ররোচনা দান করে। “সে জিনদের মধ্যে থেকে হোক বা মানুষের মধ্যে থেকে হোক।”(সুরা নাস:৬) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন, “আর এভাবে আমি সবসময় মনুষ্য জাতীয় শয়তান ও জীন জাতীয় শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর দুশমনে পরিণত করেছি।”(সুরা আনআম:১১২) হযরত আবু জর গিফারী রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সা: এর খেদমতে হাযির হলাম। তখন তিনি মসজিদে বসেছিলেন। তিনি বললেন, আবু যার! তুমি সালাত পড়েছো। আমি জবাব দিলাম, না। তিনি বললেন, ওঠো এবং সালাত পড়ো! কাজেই আমি সালাত পড়লাম এবং আবার এসে বসলাম। তিনি বললেন: “হে আবু যার! মানুষ শয়তান ও জিন শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর পানাহ চাও।” আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! মানুষের মধ্যেও কি আবার শয়তান হয়। বললেন, হ্যঁ। (আহমাদ, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান)

সর্বোত্তম কথার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়, সম্প্রীতি ও ভালবাসার সমাজ গড়ে উঠে। এই জন্য আয়াতের প্রথমেই বলা হয়েছে আল্লাহর বান্দারা যেন মুখ থেকে এমন কথা বের করে যা সর্বোত্তম। এমনকি কাফের ও মুশরিক ও ইসলাম বিরোধীদের সাথে আলাপ আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক করার সময় কড়া কথা, বাড়াবাড়ি ও বাহুল্য বর্জন করতে হবে। বিরোধী পক্ষ যতই অপ্রীতিকর কথা বলুক না কেন মুসলমানদের মুখ থেকে কোন ন্যায় ও সত্য বিরোধী কথা বের হওয়া উচিত নয়। ক্রোধ আত্মহারা হয়ে তাদেও আজে বাজে কথা বলা শোভা পায় না। ঠাণ্ডা তাদের এমন সব কথা বলতে হবে, যা যাচাই বাছাই করা, মাপাজোকা, ওজন করা, সত্য এবং তাদের দাওয়াতের মর্যাদার সাথে সংগতিশীল।

মনে রাখতে হবে, যখনই বিরোধীদের কথার জবাব দিতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে ক্রোধের আগুন জ¦লে উঠছে বলে মনে করবে এবং মন মেজাজে আকস্মিকভবাবে আবেগ-উত্তেজনায় ভরে যেতে দেখতে পাবে তখনই বুঝতে হবে, দীনের দাওয়াত নষ্ট করার জন্য এটা শয়তানের উস্কানি ছাড়া আর কিছুই নয়। শয়তানের চেষ্টা হচ্ছে, আল্লাহর বান্দারাও যাতে বিরোধীদের মতো সংস্কারের কাজ ত্যাগ করে তারই সৃষ্ট বিতর্ক-কলহ ও ফিতনা-ফাসাদে মশগুল থাকে। এতে তার দ্বিগুণ লাভ এক, সংস্কারবাদীরা বিতর্ক ও কলহে জড়িয়ে পড়বে, ফলে তাদের দাওয়াতী কাজ ভেস্তে যাবে। দুই, বিরোধী পক্ষ শুদ্ধ না হয়ে হয়ে আরো বেশী করে বিরোধীতায় নেমে পড়ে।

একজন আল্লাহর বান্দা এমন কথা বলা উচিত নয়, যা একটি মারাত্মক বোমার চেয়েও ক্ষতিকর। একটি বোমা নির্দিষ্ট কিছু লোকের জান-মালের ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু একটি খারাপ কথা সমাজ ভাঙ্গনের কার্যকরী হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে থাকে। সমাজকে বিভিষিকাময় পরিস্থিতির মুখোমুখী করে। সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধের স্থান দখল করে নেয় হিংসা-হানাহানি, বিদ্বেষ আর অহংবোধ। আর এর ফলে মানুষ চরম দুঃখ-দূর্দশার সম্মুখীন হয়। অথচ একজন মুমিন কখনো অন্য একজন মু’মিনকে কষ্ট দিতে পারে না। সে কথাটি যদি আবার সঠিক না হয়, কিংবা সেটি লক্ষ লক্ষ মানুষের মনোকষ্টের কারণ হয়, তাহলে ব্যাপারটি আরো মারাত্মক। কারন আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দাও। আল্ল­াহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমাদের প্রতি মেহেরবাণী করা হবে।”(সুরা হুজরাত ঃ ১০) “ মানুষ খারাপ কথা বলে বেড়াক, তা আল্ল­াহ তা’আলা পছন্দ করেন না। তবে কারো জুলুম করা হলে তার কথা স্বতন্ত্র। আর আল্ল­াহ সবকিছু শোনেন ও জানেন।”(সুরা নিসা ঃ ১৪৮)

হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্ল­াহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ঃ “প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের জান, মাল ও ইজ্জত হারাম।”(মুসলিম ও তিরমিযি) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ঃ “এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করে না, তাকে সহযোগীতা করা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোন ব্যক্তির জন্য তার কোন মুসলমান ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মত অপকর্ম আর নাই।”(মুসনাদে আহমাদ) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ঃ“মুসলিম সে, যার মুখ ও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।”(সহিহ বুখারী) এছাড়াও কুরআনের বহু আয়াত ও হাদীসে মন্দ কথা উচ্চারণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে যারা আল্ল­াহ ও রাসুলের প্রতি ঈমান রাখেন, মন্দ কথা থেকে বিরত থাকা তাদের ঈমানী দায়িত্ব। কারণ কালিমা তাইয়েরা পৃথিবীর সর্বোত্তম কথা। এ কালিমাটি যিনি মনে প্রানে বিশ্বাস করেন, তার চরিত্রে একদিকে ভালো কথা, ভালো চিন্তা ও আচরণ, অন্য দিকে মন্দ কথা, মন্দ চিন্তা বা আচরণ একই সাথে সমান্তরাল বিরাজ করতে পারে না।

পৃথিবীর সর্বোত্তম কথা হলো কালিমাতুত তাইয়্যেবা তথা “লা-ইলাহা ইল্ল­াল্ল­াহু” অর্থাৎ আল্ল­াহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নাই”। এটি এমন একটি বাক্য যার মাধ্যমে মুসলিম মিল্ল­াত তাদের জীবনের ভিত রচনা করেন। যিনি কালিমা তাইয়্যেবার ভিত্তিত্বে নিজের জীবন ব্যবস্থাকে গড়ে তুলেন, তার চিন্ত—াধারায় পরিচ্ছন্নতা, স্বভাবে প্রশান্তি, মেজাজে ভারসাম্য, চরিত্রে পবিত্রতা, আচরণে মাধুর্যতা, ব্যবহারে নম্রতা, লেনদেনে সততা, কথাবার্তায় সত্যবাদিতা, ওয়াদা ও অংগীকারে দৃঢ়তা, সামাজিক জীবন যাপনে সদাচার, কথা-বার্তায় চিন্তার ছাপ, চেহেরায় পবিত্রতার ভাব ফুটে উঠবে। মোট কথা ব্যক্তির সামগ্রীক জীবন ব্যবস্থায় বৈপ্ল­বিক একটা পরিবর্তন সুচিত হবে। যার জীবনধারার কোথাও কোন অসঙ্গতি থাকবে না। সর্বোপুরি একজন মুমিন আল-কুরআন অনুযায়ী কথা বলবে এবং আল কুরআন অনুযায়ী কথা পরিত্যাগ করবে। আল-কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন চলার পথে কিছু জিনিষকে গ্রহণ করবে আবার কিছু জিনিষকে ত্যাগ করবে। এ জন্য আল্লাহ তা’আলা আল কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিভেদ ও বিদ্বেষমূলক কথা পরিহারের কথা অত্যন্ত জোড়ালোভাবে বলেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জুকে মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো। তোমরা ছিলে পরস্পরের শত্রু। তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানীতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছে।”(সুরা আলে ইমরান:১০৩)

সারা পৃথিবীতে কয়েক শত কোটি মুসলমান। মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য বলে তারা শৌর্য-বীর্য ও বীরশ্রেষ্ট জাতি। তাদের প্রত্যেকের সাথে মর্যাদার প্রতীক মাথা নামক যেই অঙ্গটি আছে, তা মহান আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে নত হয় না। এটি মুসলিম জাতি শ্রেষ্ঠত্বের বৈশিষ্ট্যের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাদের কাছে যেই আসমানী গ্রন্থ আল কুরআন রয়েছে, সেই গ্রন্থ মুসলিম জাতিকে সেভাবেই গড়ে তুলে। কিন্তু সেই মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকে যেদিন মুসলমানরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, সেদিন থেকেই তাদের কপাল পুড়তে শুরু করেছে। তাদের মর্যাদার প্রতীক ও শ্রেষ্টত্বের বৈশিষ্ট্য মাথা এখন যেখানে সেখানে অবনত হয়ে যায়। পরাজিত মানসিকতা, অনৈক্য ও পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা তাদেরকে পতন্মোখ, পশ্চাদপদ ও মেরুদণ্ডহীন প্রাণীতে পরিণত করেছে। সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তিদের ভয়ে বিশেষ করে মুসলিম শাসকেরা ক্ষমতার লোভে তাদের সকল প্রকার অন্যায় আবদার পূরণ করে থাকে। আগেই বলা হয়েছে যে, এর প্রধান কারণ হলো, কুরআন থেকে দুরে সরে যাওয়া। আল কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কারণে মুসলমানগণ অনৈক্য আর আত্মকলহে জড়িয়ে পড়েছে। পৃথিবীতে তারা এখন আত্ম কলহের জাতি। আত্মকলহের কারণে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল, ভীতু প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। তাই সারাক্ষণ তাদেরকে নতজানু হয়ে থাকতে হয়।

তাদের এ চিত্র দেখে ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও ব্রাহ্মণ্যবাদী চক্র তৃপ্তির হাসি হাসে। কারণ বিশ্বময় মুসলমানদের অনৈক্য সৃষ্টির দীর্ঘমেয়াদী এ প্রজেক্টের পেছনে যেই শ্রম, মেধা ও অর্থ তারা বিনিয়োগ করেছিল তা ফুলে ফলে সুশোভিত হয়েছে। বিশেষ করে মুসলমানদের শ্রেষ্ট সন্তান আলেমদের মতানৈক্য দেখে মাঝে মধ্যে মনে হয় তারাও কি এদের ক্রীড়নক-এ পরিণত হল কি না? (আল্ল­াহ আমার এ ধারনাকে সত্যে পরিণত না করুন) সত্যিই যদি এমনটি হয়ে থাকে, তবে তা হবে মুসলিম জাতির চরম দূর্ভাগ্য। সেই সাথে দুর্ভাগা বলতে হবে সে সমস্ত আলেমদের যাদেরকে কুরআন দেওয়া হয়েছে অথচ তারা তা বুঝে না কিংবা তদনুযায়ী কাজ করে না, তাদেরকে বর্ণনা করা হয়েছে এমন গাধা হিসেবে, যারা ওজন বহন করে কিন্তু তারা জানে না কি বহন করছে এবং তা থেকে না হতে পারে উপকৃত। তারা সেই হতভাগা, যাদের বিরুদ্ধে আল্ল­াহর নবী সা: বিচারের দিন অভিযোগ করবেন, ”হে আমার আল্ল­­াহ! আমার জাতির লোকেরা এ কুরআনকে পরিত্যক্ত, বর্জন, বাস্তুচুত্য বা উপহাসের বস্তুু বানিয়ে নিয়েছিল।”
(সুরা ফুরকান-৩০)

 

Posted ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(842 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.