বাংলাদেশ ডেস্ক : | সোমবার, ০২ জুন ২০২৫
সুইজারল্যান্ডের স্কি রিসোর্টে স্কিয়িং করছেন কয়েকজন পর্যটক। ফাইল ছবি : রয়টার্স
বিশ্বের নানা দেশ তাদের সৌন্দর্য, সংস্কৃতি আর আতিথেয়তার মাধ্যমে পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এর মধ্যে আবার কিছু দেশ আছে, যেগুলো ভ্রমণপ্রেমীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। পর্যটকেরা ভ্রমণের জন্য এসব দেশে যেতে বেশি পছন্দ করেন। পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় বলে বিবেচিত এমন দেশগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ইউএস নিউজ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ‘বেস্ট কান্ট্রিজ ফর ট্যুরিজম’শীর্ষক র্যাঙ্কিংটি প্রকাশ করা হয়। তালিকায় শীর্ষস্থানে থাকা ১০ দেশের তথ্য তুলে ধরা হলো।
ইতালি : পর্যটনে সেরা দেশের তালিকায় দক্ষিণ-মধ্য ইউরোপের দেশ ইতালির অবস্থান শীর্ষে। মানচিত্রে দেশটিকে বুটজুতা-আকৃতির দেখায়। এই ভূখণ্ডের সীমান্ত ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। ঐতিহাসিক নগরী, বিশ্ববিখ্যাত রন্ধনশৈলী ও নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য দেশটিতে প্রতিবছর চার কোটির বেশি পর্যটক ভিড় করেন। ইউরোপের সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি মাউন্ট এটনার অবস্থানও ইতালিতে। এ ছাড়া দেশটির সীমানার ভেতরেই দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র—ভ্যাটিকান সিটি ও সান মারিনোর অবস্থান। লেওনার্দো দা ভিঞ্চির শিল্পকর্ম থেকে শুরু করে মিলানের ফ্যাশন হাউস পর্যন্ত, ইতালির সংস্কৃতি সব সময়ই মানুষের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। পুরো দেশে ছড়িয়ে আছে প্রাচীন গ্রিক, ইট্রাসকান ও রোমান সভ্যতার চিহ্ন। ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলের খাবার সারা বিশ্বের রন্ধনশিল্পীদের অনুপ্রেরণার উৎস।
স্পেন : ১৪৯২ সালে কয়েকটি ছোট স্বাধীন রাজ্য মিলে স্পেন গড়ে ওঠে। দেশটি সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ। আইবেরিয়ান উপদ্বীপের বড় একটা অংশ স্পেন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ ছাড়া ভূমধ্যসাগরের বালিয়ারিক দ্বীপপুঞ্জ, আটলান্টিক মহাসাগরের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ ও উত্তর আফ্রিকায় থাকা দুটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চলও স্পেনের অন্তর্ভুক্ত। স্পেন তার ঐতিহাসিক শহর বার্সেলোনা ও মাদ্রিদের জন্য বিখ্যাত। সংস্কৃতিসমৃদ্ধ আন্দালুসিয়া অঞ্চলও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। স্প্যানিশ সংস্কৃতি, বিশেষ করে ফ্লামেংকো নাচ ও তাপা খাবার বিশ্বজুড়ে পরিচিত। সেখানকার ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জও দর্শনীয় একটি স্থান।
ফ্রান্স : পশ্চিম ইউরোপের দেশ ফ্রান্স বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন দেশ। বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিগত ক্ষেত্রে ফ্রান্স বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। শুরুতে এটি ছিল একটি রাজ্য। পরে ক্রমান্বয়ে এটি সাম্রাজ্য ও আরও পরে গণতান্ত্রিক দেশে রূপান্তরিত হয়। ফ্রান্সের সংস্কৃতি খুবই সমৃদ্ধ। ফরাসি সাহিত্যের শুরু হয়েছিল মধ্যযুগে। দেশটির চিত্রকলা, সংগীত ও নৃত্যেরও দীর্ঘ ইতিহাস আছে। ফরাসি খাবার সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। ফ্রান্সের প্যারিস শহর, আইফেল টাওয়ার, ল্যুভর মিউজিয়াম ও প্রোভান্স অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
গ্রিস : গ্রিসের অবস্থান দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে। স্বাধীন দেশ হিসেবে এর যাত্রাকাল উনিশ শ শতকে হলেও এর ইতিহাস অনেক পুরোনো। গণতন্ত্রের প্রথম ধারণা তৈরি হয়েছিল গ্রিসেই। এ ছাড়া প্রাচীন অলিম্পিক গেমস শুরু হয় এখান থেকেই। পশ্চিমা বিশ্বের বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও দর্শনের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে গ্রিস। ইউরোপের বলকান উপদ্বীপের সর্বদক্ষিণ অংশজুড়ে রয়েছে গ্রিস। এখানে অনেক ছোট ছোট দ্বীপও আছে, যা এজিয়ান, আইয়োনিয়ান আর ভূমধ্যসাগরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। পাহাড়, সমুদ্র ও সুন্দর জায়গাগুলো গ্রিসকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগমের দেশগুলোর একটিতে পরিণত করেছে। গ্রিসের প্রাচীন সভ্যতা, এথেন্সের অ্যাক্রোপলিস ও সান্তোরিনি দ্বীপের সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
অস্ট্রেলিয়া : কমনওয়েলথ অব অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে। অস্ট্রেলিয়ার মালিকানায় কিছু দ্বীপ আছে, যার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত তাসমানিয়া। ৪০ হাজার বছর ধরে এ ভূখণ্ডে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস ছিল। এর পর আঠারো শ শতকে ব্রিটিশরা এখানে প্রথম বসতি স্থাপন করে। আঠারো শ শতকের শেষ দিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতিতে ব্রিটিশ, সেলটিক ও মার্কিন সংস্কৃতির প্রভাব ছিল। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোয় ইংরেজির বাইরে অন্য ভাষাভাষী, প্রাথমিকভাবে এশিয়ার মানুষের অভিবাসনের মধ্য দিয়ে দেশটির জনমিতি ও সংস্কৃতি পাল্টে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন শহর ও আউটব্যাক অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সিডনির অপেরা হাউস ও, কুইন্সল্যান্ড উপকূলে অবস্থিত গ্রেট ব্যারিয়ার প্রবালপ্রাচীর অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।
নিউজিল্যান্ড : দ্বীপরাষ্ট্র নিউজিল্যান্ড তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শান্ত পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। দেশটির দক্ষিণ অংশে বিশাল পর্বতশ্রেণি ও দর্শনীয় সৈকত রয়েছে, যা ‘লর্ড অব দা রিংস’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। পর্যটকেরা এখানে পাহাড়ি ট্রেকিং, সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণ ও প্রকৃতির মাঝে শান্তিপূর্ণ বিশ্রামের সুযোগ পান। নিউজিল্যান্ডের উন্নত অবকাঠামো ও নিরাপদ পরিবেশ পর্যটনকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলে। দেশটি এখন বিশ্বমানের পর্যটন গন্তব্যগুলোর অন্যতম।
থাইল্যান্ড : থাইল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। যদিও দেশটির মোট জিডিপির মাত্র ৭ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। থাইল্যান্ডকে বলা হয় ‘হাসির দেশ’, যেখানে প্রাচীন ঐতিহ্যের ধ্বংসাবশেষ, সোনালি মন্দির ও ঝলমলে সৈকতের পাশে গড়ে উঠেছে ব্যস্ত আধুনিক নগরী। দেশটির সব জায়গায় বুদ্ধমূর্তির উপস্থিতি চোখে পড়ে। স্বাদে বৈচিত্র্য থাকায় (মিষ্টি, টক, ঝাল, তিতা, মসলাযুক্ত) থাই রান্না খাবার বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহর ও ফুকেট দ্বীপ পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়।
সুইজারল্যান্ড : সুইস কনফেডারেশন নামে পরিচিত সুইজারল্যান্ড মধ্য ইউরোপের একটি ছোট দেশ। নিরপেক্ষ নীতির জন্য দেশটি বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এটি বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী দেশও। সেখানে বিশাল বরফে ঢাকা আল্পস পর্বতশ্রেণি, মনোমুগ্ধকর হ্রদ ও উপত্যকা আছে। মূলত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের কারণে সুইজারল্যান্ড পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের জন্য পছন্দের জায়গা। সুইজারল্যান্ডের বহু সংস্কৃতি, চারটি জাতীয় ভাষা ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ অঞ্চল পর্যটকদের ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা দেয়।
মিসর : মিসর হলো উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার একটি দেশ। এর পূর্ব ও পশ্চিমে আছে বিস্তীর্ণ মরুভূমি। মিসরের প্রাণকেন্দ্রে আছে নীল নদ। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম ও বিশাল সভ্যতাগুলোর একটি। ভূমধ্যসাগরের পাশে হওয়ায় মিসর একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। মিসরের বেশির ভাগ অর্থনৈতিক কার্যক্রম নীল নদকেন্দ্রিক। দেশটির চাষযোগ্য জমি সামান্য। পর্যটন, কৃষি ও উৎপাদনশিল্প মিসরের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্র।
আরব বিশ্বের একটি সাহিত্যকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত মিসর। সেখানে সংগীতের মতো শিল্পকলাগুলো আরব, আফ্রিকান, ভূমধ্যসাগরীয় ও পশ্চিমা উপাদানের মিশেলে গড়ে উঠেছে।
কানাডা : উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের প্রায় দুই-পঞ্চমাংশজুড়ে বিস্তৃত কানাডা। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। কানাডার জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম এবং বেশির ভাগ মানুষ যুক্তরাষ্ট্র-সংলগ্ন সীমান্ত থেকে ১২৫ মাইলের মধ্যে বসবাস করেন। কানাডার উত্তরে বিশাল বনাঞ্চল। অভিবাসীদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানোর সংস্কৃতির কারণে বিশ্বে কানাডার বেশ সুনাম রয়েছে। দেশটি ১৯৭১ সালে বহুসাংস্কৃতিকতাবাদকে জাতীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে।
Posted ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০২ জুন ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh