বাংলাদেশ অনলাইন : | শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
এস্তোনিয়ার রাজধানী তাল্লিন। ছবি : সংগৃহীত
জীবনযাত্রার মান, আয়ুষ্কাল আর সুস্থতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে পরিচ্ছন্নতার। একটি দেশ কতটা পরিচ্ছন্ন, তা নির্ভর করে দেশটির বিশুদ্ধ বায়ু ও পানি, কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক স্যানিটেশন ব্যবস্থার ওপর। ২০২৪ সালের এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই) বা পরিবেশ সুরক্ষা সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন দেশ এস্তোনিয়া। এ সূচকে শীর্ষ ১০ পরিচ্ছন্ন দেশের সবই ইউরোপে অবস্থিত। জেনে নেওয়া যাক এসব দেশ সম্পর্কে।
এস্তোনিয়া : বিশুদ্ধ বাতাস, বাস্তুতন্ত্র রক্ষা এবং জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগে অসাধারণ সাফল্যের কারণে পরিচ্ছন্ন দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষ রয়েছে ইউরোপের দেশ এস্তোনিয়া। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, দায়িত্বশীল বন ব্যবস্থাপনা এবং কার্বনশূন্য গণপরিবহনের জন্য এস্তোনিয়া সুপরিচিত। পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে দেশটির স্কোর ৭৫ দশমিক ৩।
লুক্সেমবার্গ : লুক্সেমবার্গ আয়তনে ছোট হলেও পরিবেশ সুরক্ষায় দেশটির অর্জন অনেক বড়। বিশুদ্ধ পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার জন্য লুক্সেমবার্গ বিখ্যাত। পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে পানির গুণগত মানের জন্য দেশটি ৯০ দশমিক ৮ স্কোর পেয়েছে। আর স্যানিটেশনের জন্য পেয়েছে ৯৯ দশমিক ৮ পয়েন্ট। লুক্সেমবার্গের অর্ধেকের বেশি ভূমি জলবায়ু সুরক্ষার অধীন। জীববৈচিত্র্যে দেশটির স্কোর ৮৪ দশমিক ৮। এর মূল কারণ জলবায়ুসংক্রান্ত কঠোর নীতিমালা। পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে সামগ্রিকভাবে দেশটির স্কোর ৭৫।
জার্মানি : দেশজুড়ে পানির বর্জ্য পরিশোধন করে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করেছে জার্মানি। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশটির অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। পরিবেশ সংরক্ষণ, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং টেকসই শিল্পায়নে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছে জার্মানি। জার্মানি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, দায়িত্বশীল বন ব্যবস্থাপনা ও কার্বন হ্রাস নীতি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে জার্মানির স্কোর ৭৪ দশমিক ৬।
ফিনল্যান্ড : পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে ফিনল্যান্ডের স্কোর ৭৩ দশমিক ৭। বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য ফিনল্যান্ড বিখ্যাত। দেশটি তাদের বনাঞ্চল রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়। পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে স্যানিটেশন, নিরাপদ খাবার পানি ও ভারী ধাতুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ফিনল্যান্ড সর্বাধিক নম্বর পেয়েছে।
যুক্তরাজ্য : পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে ৭২ দশমিক ২ স্কোর নিয়ে পরিচ্ছন্ন দেশের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটি সামুদ্রিক অঞ্চল সংরক্ষণে অনন্য। এখানকার ৩০ শতাংশের বেশি সামুদ্রিক অঞ্চল সুরক্ষিত। আবহাওয়া ও জলবায়ুসংক্রান্ত কঠোর নীতিমালার কারণে যুক্তরাজ্য গত ১০ বছরে এক-তৃতীয়াংশ কার্বন নিঃসরণ কমাতে সক্ষম হয়েছে।
সুইডেন : পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার এবং কম কার্বন নিঃসরণের জন্য বিশ্বজুড়ে সুইডেনের খ্যাতি রয়েছে। দেশটি বিশুদ্ধ বাতাস, উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা ও ভারী ধাতবদূষণ নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এ ছাড়া বনসম্পদ রক্ষায় এবং কৃষি খাত থেকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সুইডেন। পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে দেশটির স্কোর ৭০ দশমিক ৫।
নরওয়ে : নরওয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করেছে। দেশটির প্রায় ৯৮ শতাংশ বিদ্যুৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে আসে, যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি করে তুলেছে। শক্তিশালী প্রণোদনা ব্যবস্থা ও অবকাঠামোর কারণে নরওয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে। দেশটিতে বিক্রি হওয়া ৮০ শতাংশ নতুন গাড়ি বৈদ্যুতিক। নরওয়ে শিল্প খাতে কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বাতাসের মান বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। দেশটির অসলো ও বার্গেনের মতো শহরগুলো পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো, গণপরিবহন ও টেকসই নগর-পরিকল্পনার ওপর জোর দিচ্ছে। পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে দেশটির স্কোর ৭০।
অস্ট্রিয়া : কীটনাশক ও সার ব্যবহার এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালার কারণে স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনায় অস্ট্রিয়ার স্কোর ৯৬। দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ এলাকাই বন ও তৃণভূমি। অস্ট্রিয়ার প্রায় ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে জল, বায়ু ও সৌরশক্তি থেকে, যা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর দেশটির নির্ভরতা কমাচ্ছে। পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে অস্ট্রিয়ার স্কোর ৬৯।
সুইজারল্যান্ড : পরিচ্ছন্নতা, ভারী ধাতুর দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপদ খাবার পানি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ড অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য সুপরিচিত দেশটি বন্য প্রাণী সুরক্ষায় কঠোর নীতিমালা মেনে চলে। পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে সুইজারল্যান্ডের স্কোর ৬৮।
ডেনমার্ক : ভারী ধাতুদূষণ নিয়ন্ত্রণে নেতৃস্থানীয় দেশ ডেনমার্ক। অর্গানিক চাষাবাদ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে দেশটি। পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে ডেনমার্কের স্কোর ৬৭ দশমিক ৯।
Posted ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh