বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩
ছবি : সংগৃহীত
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটি সিটিজুড়ে তাদের অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সগুলোর ভাড়াটিয়াদের নিকট থেকে মাত্র ৬৫ শতাংশ ভাড়া আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে এটিকে নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটির ইতিহাসে কোনো বছরে সবচেয়ে কম ভাড়া আদায়ের রেকর্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সিটির পুরোনো অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, হিটিং সিস্টেম, বিকল হয়ে পড়া এলিভেটরসহ অন্যান্য সংকট নিরসনে সিটির পাবলিক হাউজিং কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত অর্থ লাভ করার পর থেকে ভাড়া আদায়ে মন্থর গতি পরিলক্ষিত হচ্ছিল, কিন্তু গত এক বছরে তা হ্রাস পেয়েছে বিল্ডিংগুলোর নানা সমস্যা ও বাসোপযোগী না করা সংক্রান্ত অজুহাত দেখিয়ে ভাড়া পরিশোধে ভাড়াটিয়াদের টালবাহানা। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রাচীন পাবলিক হাউজিং ব্যবস্থা এক জটিল সংকটে পতিত হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী ভার্জিনিয়ার রিচমন্ড থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ফ্রান্সিসকো পর্যন্ত সমগ্র দেশে ১,৬০০ এর অধিক পাবিলিক হাউজিং রয়েছে এবং করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে হাউজিং কর্তৃপক্ষগুলো সঙ্গত কারণেই পিছিয়ে ছিল।
কিন্তু সেই পিছিয়ে পড়া পরিস্থিতির কোন উন্নতি ঘটেনি করোনা পরবর্তী স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও। ডিপার্টমেন্ট অফ হাউজিং এন্ড আরবার ডেভেলপমেন্টের এক মুখপাত্র নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন যে, ভাড়া অনাদায়ে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের আশংকা যখন প্রবল হয়ে ওঠে তখন ভাড়াটিয়ারা বাড়ি হারানোর ভয়ে আদৌ ভীত না হয়ে বরং ভাড়া পরিশোধ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। ফলে হাউজিং এজেন্সিগুলো আরো বিপদে পড়ে।
কিন্তু নিউইয়র্ক সিটিতে সমস্যা আরো জটিল হয়ে ওঠেছে। নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার লিজা বোভা-হিয়াট বলেছেন, এটি চরম বিপর্যয়ের পূর্ব লক্ষণ মাত্র। অর্থ ছাড়া আমরা কোনোকিছু করতে পারি না। প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ চালানোর জন্য যে অর্থ প্রয়োজন আমাদের হাতে সেই পরিমাণ অর্থ নেই এবং এ অবস্থা চলতে থাকলে পুরোনো বিল্ডিংগুলোর হিটিং সিস্টেম, এলিভেটর, ইঁদুর ও পোকামাকড় দমন ইত্যাদি নিয়মিত অথচ জরুরী সংস্কারগুলোও আমরা করতে সক্ষম হবো না।
তার মতে ভাড়ার সমস্যা নিউইয়র্ক হাউজিং অথরিটির মতো একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বড় সমস্যা, কারণ এ প্রতিষ্ঠানকে ভাড়াটিয়াদের ভাড়া থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, হাউজিং অথরিটির বিল্ডিংগুলোতে অনেক সমস্যা থাকা সত্বেও নিউইয়র্কে পাবলিক হাউজিং এ জোরালো অবদান রেখে যাচ্ছে। দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিটিগুলোর অন্যতম নিউইয়র্ক সিটিতে সত্যিকার অর্থেই আমরা অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং সংস্থান করে যাচ্ছি। নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটির প্রায় তিনশ অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে প্রায় সাড়ে তিন লাখ নিউইর্কার সাশ্রয়ী ভাড়া অথবা নামে মাত্র ভাড়ায় বসবাস করছে। হাউজিং অথরিটির বর্তমান ঘাটতির পরিমাণ প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলার। কিভাবে ঘাটতি কাটিয়ে ভবনগুলোর প্রয়োজনীয় মেরামত ও সার্ভিসসমূহ সঠিক রাখা সম্ভব তা নিয়ে দিশেহারা কর্তৃপক্ষ। অর্থের অভাবে তারা ইতিপূর্বে বিভিন্ন কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। হাউজিং অথরিটির ১৫০ জন কর্মীকে ছাটাই করা হয়েছে এবং আরো অনেক কর্মী ছাটাই হওয়ার আশংকা করছেন। অনেক জরুরী প্রয়োজন মেটাতে হাউজিং অথরিটি রিজার্ভ তহবিল থেকে অর্থ গ্রহণ করছে, কিন্তু তা এত কম যে, সেই অর্থ দিয়ে তাদের এক মাসের ব্যয় নির্বাহ করাও সম্ভব নয়।
পাবলিক হাউজিং এর ক্ষেত্রে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে এক সময়ের শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটির ওপর এখন দেনায় দায় এবং দায় মেটানোসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ ও নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন ইত্যাদিসহ সাবেক অবস্থিায় প্রতিষ্ঠান ফিরিয়ে আনতে হাউজিং অথরিটির প্রয়োজন ৪০ বিলিয়ন ডলার। নিউইয়র্ব সিটি হাউজিং এর সমস্যা কাটাতে ২০১৯ সালে ফেডারেল সরকারের সঙ্গে সিটির এক চুক্তির আওতায় একজন মনিটর নিয়োগ করা হয়। মনিটর তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছিলেন যে ২০২২ সালের মধ্যে সিটির পাবলিক হাউজিং অ্যঅপার্টমেন্টগুলোর ১০৮ টি এলিভেটর পুন:স্থাপন করতে হবে। কিন্তু হাউজিং অথরিটির পক্ষে মাত্র আটটি নতুন এলিভেটর স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে।
Posted ২:২৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh