| বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
বাংলাদেশ ভারতের সাথে আলোচনায় নিজেদের দাবি বা স্বার্থ আদায়ে কূটনৈতিক সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারছে না বলে মনে করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। লে ভারত তার চাওয়াগুলো আদায় করতে পারলেও বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পাচ্ছে প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। তাদের মতে সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তৈরি হওয়া ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতির’ কারণেই আলোচনার টেবিলে শক্তভাবে কথা বলতে পারছে না বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
ভারতীয়দের সামনে সরকার দুর্বল বলেই কূটনীতিকরা কাজ করতে পারে না। আর সে কারণেই ভারত তার ইচ্ছেমতো সব কিছু পাচ্ছে। পলিসি লাইন আসে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এবং কূটনীতিকরা কাজ করেন সেটিকে বাস্তবায়নে।“সেক্ষেত্রে রাজনীতিকরা যতটুকু স্পেস দেন, কূটনীতিকরা সেটুকুই প্রয়োগ করতে পারেন। কূটনীতিকদের পেশাগত মতামত ও রাজনৈতিক নেতাদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় সমন্বয় নেই।
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে দুই দেশের মধ্যে দশটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ও সামাজিক মাধ্যমে রেল ট্রানজিটসহ কিছু বিষয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। অনেকেই অভিযোগ করছেন যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাগুলোতে বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশের কর্মকর্তারা সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারছেন না।বিএনপি মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্পাদিত চুক্তিগুলোয় বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ভারতের কাছ থেকে দাবিগুলো আদায় করে নিতে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ।
পানি সবচেয়ে আগে দরকার। পানির হিস্যার মীমাংসা না করেই সে চুক্তিতে সই ও তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর নিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও স্বকীয়তা বজায় রেখে ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে কাজ করছে তার সরকার। ভারতকে রেল ট্রানজিট দেয়ার সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের কোনও ক্ষতি হবে না এবং দেশের মানুষের কল্যাণের কথা মাথায় রেখেই ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে। তবে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই এই বলে সমালোচনা করছেন যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের কূটনীতিক অর্থাৎ আমলাতন্ত্রের সক্ষমতার ঘাটতিও এখানে বড় সংকট হিসেবে মনে হচ্ছে অনেকের কাছে। তবে সরকারই এজন্য দায়ী। তারা ভারতকে সব দিয়ে বসে থাকলে আমলাদের করণীয়ই বা কী থাকে। সাধারণত কোনো চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক প্রধান পর্যায়ে যাওয়ার আগে উভয় দেশের কর্মকর্তারা তা নিয়ে আলোচনা করেন দফায় দফায় । তারা নিজ দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশনা নিয়ে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে একটা সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করার কথা। ভারতের সাথে বড় দাগে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে সেগুলোর জন্য আওয়ামী লীগের নেতা বা সরকার সমর্থকরা সবসময় প্রধানমন্ত্রীকেই কৃতিত্ব দেন, যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি ও স্থল সীমান্ত চুক্তি।
তবে এবার বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় রেল চলাচলের জন্য রেল ট্রানজিট, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না করে তিস্তা মহাপরিকল্পনায় ভারতকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ এবং রংপুরে কনস্যুলেট খুলতে দিতে রাজি হওয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে সরকার তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। তিস্তার পানি আনতে পারেনি। অথচ সরকার তাদের তিস্তা মহাপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হবার সুযোগ দিয়েছে। এটা কোনো দক্ষ আমলাতন্ত্রের কাজ হতে পারে না।
এটা হয়েছে কারণ সরকারের ভারত তোষণ নীতির বিপরীতে গিয়ে পেশাগত অবস্থান তুলে ধরার মতো পরিবেশটাই নেই। কূটনীতির ভিত্তি হলো নীতি নির্ধারণী পর্যায়, সরকার প্রধান যেখানে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দিল্লিকে প্রভাবিত করে এমন শক্তিগুলোকে মবিলাইজ করে চাপ তৈরির মতো গভীরতা সম্পন্ন কূটনৈতিক দক্ষতা সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের তৈরি হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ত্রিপুরার মতো রাজ্যগুলোর শক্তি বাংলাদেশ ব্যবহার করতে পারছে না এই ঘাটতি কারণেই। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তিতে জ্যোতিবসুর ভূমিকার কথা সরকার নিজেই বলে। কিন্তু এখন সেটি হচ্ছে না। বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক বহুমাত্রিক। দুই দেশের বড় সমস্যাগুলো রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। ব্রিটিশের তৈরি ভারতের আমলাতন্ত্র অনেক পরিপক্ব। তারা অনেক সময় আলোচনায় কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়। কারণ তাদের কাছে তথ্য ভালো থাকে। তারা হোমওয়ার্ক ভালো করে। এসব বিষয়ে ক্ষেত্র বিশেষে আমাদের কিছুটা দুর্বলতা থাকে।
Posted ১২:০৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh