সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ | ২৫ কার্তিক ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

মহান রবের সত্তাই অবশিষ্ট থাকবে

জাফর আহমাদ :   |   বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

মহান রবের সত্তাই অবশিষ্ট থাকবে

সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। মহীয়ান গরীয়ান রবের অস্তিত্ব ছাড়া আর কিছুই রবে না। সুন্দর ব্যবস্থাপনার ভূপৃষ্ঠটির ভেতরে ও বাইরে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সকল কিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। শুধুমাত্র একমাত্র মহান ও দয়াময় রবের সত্তাই বাকি থাকবে। এ জন্যই আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম হলো,“বাকি”।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,“এ ভূপৃষ্ঠের প্রতিটি জিনিসই ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তোমার মহীয়ান ও দয়াবান রবের সত্তাই অবশিষ্ট থাকবে।”(সুরা আর রাহমান: ২৬-২৭) এই পৃথিবীর মানুষ অবিনশ^র নয়, সেই সব সাজ-সরঞ্জামও চিরস্থায়ী নয়, যা তারা ভোগ করছে। অবিনশ^র ও চিরস্থায়ী শুধুমাত্র মহাসম্মানিত ও সুমহান আল্লাহর সত্তা,এ বিশাল বিশ^-জাহান যার সাক্ষ দিচ্ছে এবং যাঁর বদান্যতায় আমাদের ভাগ্যে এসব নিয়ামত জুটেছে। এখন যদি আমাদের মধ্যে থেকে কেউ “আমার চেয়ে কেউ বড় নেই” এই গর্বে গর্বিত হয় তাহলে এটা তার বুদ্ধির সংকীর্ণতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কোন নির্বোধ যদি তার ক্ষমতার ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ডঙ্কা বাজায় কিংবা কতিপয় মানুষকে তার কর্তৃত্ব স্বীকার করায় সে তাদের রব হয়ে বসে, তাহলে তার এ মিথ্যার বেসাতি কত দিন চলতে পারে। মহাবিশে^র বিশাল বিস্তৃতির মধ্যে পৃথিবীর অনুপাত যেখানে মটরশুটির দানার মতও নয় তার এক নিভৃত কোণে দশ বিশ কিংবা পঞ্চাশ ষাট বছর যে কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব চলে এবং তার পরই অতীত কাহিনীতে রূপান্তরিত হয় তা এমন কোন কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব নয় যার জন্য কেউ গর্ব করতে পারে।

যে গুরুত্বপূর্ণ মহাসত্য সম্পর্কে জীন ও মানুষ এ দুটি সৃষ্টিকে সাবধান করা হয়েছে তা হচ্ছে, মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহ ছাড়া তারা আর যেসব সত্তাকেই উপাস্য, বিপদে রক্ষাকারী ও অভাব মোচনকারী হিসেবে গ্রহণ করে থাক তারা ফেরেশতা, নবী-রাসুল, অলী-দরবেশ কিংবা চন্দ্র-সূর্য বা অন্যকোন সৃষ্টি যাই হোক না কেন তাদের কেউই তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে সক্ষম নয়। অভাব মোচন ও প্রয়োজন পূরণের জন্য ওরা নিজেরাই তো মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী।

তাদের নিজেদের হাতই তার সামনে প্রসারিত। তাদের ক্ষমতায় নিজেদের বিপদই যেখানে দূর করতে পারে না সেখানে সে অন্যদের বিপদ মোচন করবে কি করে। পৃথিবী থেকে আকাশ মণ্ডল পর্যন্ত বিশাল বিস্তৃত এই মহাবিশে^ যা কিছু হচ্ছে, শুধু এক আল্লাহর নির্দেশেই হচ্ছে। মহান এ কর্মকাণ্ডে আর কারো কোন কর্তৃত্ব ও আধিপত্য নেই। তাই কোন ব্যাপারেই সে কোন বান্দার ভাগ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।

মহাবিশ্বের এ কর্মক্ষেত্রে প্রতি মুহুর্তে তাঁরই কর্মতৎপরতার এক সীমাহীন ধারাবাহিকতা চলছে। কাউকে তিনি মারছেন আবার কাউকে জীবন দান করেছেন। কারো উত্থান ঘটাচ্ছেন আবার কারো পতন ঘটাচ্ছেন, কাউকে আরোগ্য দান করেছেন আবার কাউকে রোগাক্রান্ত করেছেন, কাউকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে রক্ষা করেছেন আবার সাঁতার কেটে চলা কাউকে নিমজ্জিত করেছেন। সীমা সংখ্যাহীন সৃষ্টিকে নানাভাবে রিযিক দান করছেন।

অসংখ্য বস্তুকে নতুন নতুন স্টাইল, আকার-আকৃতি ও গুণ-বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পৃথিবী কখনো এক অবস্থায় অপরিবর্তিত থাকে না। তাঁর পরিবেশ ও অবস্থা প্রতি মুহুর্তে পরিবর্তিত হতে থাকে এবং তার স্রষ্টা তাকে প্রতিবারই একটি নতুন রূপে সজ্জিত করেন যা পূর্বের সব আকার-আকৃতি থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“পৃথিবী ও আকাশ মণ্ডলে যা-ই আছে সবাই তাঁর কাছে নিজের প্রয়োজন প্রার্থনা করছে।

প্রতি মুহুর্তে তিনি নতুন নতুন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত।”(সুরা রাহমান:২৯) সুরা আর রাহমানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কুদরতের পরিপূর্ণতা, তাঁর সীমা সংখ্যাহীন দয়া ও অনুগ্রহ, গোটা বিশ্বজাহানের ব্যবস্থাপনা আল্লাহর একক নির্দেশ ও কর্তৃত্বাধীনে চলছে। আসমান ও যমীনের সব কিছুই তাঁর কর্তৃত্বাধীন। এখানে আর কারো কর্তৃত্ব নাই। আল জালিল ওযুল যালালী ওয়াল ইকরাম তথা মহা মহিমান্বিত ও গৌরব মহত্বের অধিকারী।

তিনি বিশ্ব জাহানের গোটা ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণ ভারসাম্য ও সামঞ্জস্যসহ ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই বিশ্ব জাহানের কোন কিছু অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী নয় এবং ছোট বড় কেউ-ই এমন নেই যে তার অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে আল্লাহর মুখাপেক্ষী নয়। তিনি চিরবিরাজমান এবং একমাত্র মহিমান্বিত মহত্বের অধিকারী আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্বই বাকি থাকবে। তাঁর সামনে মানুষ ও জিনদের ক্ষমতা ও অস্তিত্ব খুবই নগন্য। সুরা আর রহমান পুরোটাই একটি বক্তৃতার ভাষায় পেশ করা হয়েছে। এটা একটা আবেগময় ও উচ্চমানের ভাষণ। এ ভাষণের মধ্যে আল্লাহ তা’আলার অসীম ও শক্তির এক একটি বিস্ময়কর দিক, তাঁর দেয়া নেয়ামতসমূহের এক একটি নিয়ামত, তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতা ও পরাক্রমের এক একটি দিক এবং তাঁর পুরস্কার ও শাস্তির ব্যাপক বিস্তৃত ক্ষেত্রসমূহের এক একটি জিনিস বর্ণনা জিন ও মানুষকে বার বার প্রশ্ন করা হয়েছে।

আল্লাহ তিনি চিরঞ্জীব ও চিরন্তন। তাঁর কোন ক্ষয় নেই, তিনি ক্ষয়িষ্ণু থেকে পবিত্র। তিনি পুরাতন হন না। তাঁর সত্তাগত কোন পরিবর্তন বিবর্তন ঘটে না। তিনি স্থান-কালের উর্ধ্বে। অর্থাৎ কালের পরিবর্তন তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। বরং কালের পরিবর্তন, সৃষ্টির পরিবর্তন তাঁরই সৃষ্টি। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ“ আল্লাহ এমন এক চিরঞ্জীব ও চিরন্তন সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহানের দায়িত্ব বহন করছেন, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না।
আসমান জমিনে যা কিছু আছে তাঁর।”(সৃরা বাকারাঃ২৫৫) অর্থাৎ মুর্খতা নিজেদের কল্পনা ও ভাববাদিতার জগতে বসে যত অসংখ্য উপাস্য, ইলাহ ও মাবুদ তৈরী করুক না কেন আসলে কিন্তু সার্বভৌম ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও শাসন কর্তৃত্ব নিরংকুশভাবে একমাত্র সেই অবিনশ্বর সত্তার অংশীভূত, যার জীবন কারো দান নয় বরং নিজস্ব জীবনী শক্তিতে যিনি স্বয়ং জীবিত এবং যাঁর শক্তির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে এই বিশ্ব-জাহানের সমগ্র ব্যবস্থাপনা। নিজের এই বিশাল সীমাহীন রাজ্যের যাবতীয় শাসণ কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক তিনি একাই। অন্য কোন সৃষ্টির পক্ষে এ দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়, কারণ এগুলো নশ্বর ও ক্ষণস্থায়ী। আল্লাহর সত্তাই একমাত্র চিরঞ্জীব ও চিরন্তন।

আল্লাহ তা’আলা হায়াত ও মওতের মালিক। তিনি জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“জীবন ও মৃত্যু আমিই দান করি এবং আমিই হবো সবার উত্তরাধিকারী।”(সুরা হিজর:২৩) সকল সৃষ্টি ধ্বংসের পরে একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই টিকে থাকবেন। মানুষ যা কিছু পেয়েছে, এগুলো নিছক সাময়িকভাবে ব্যবহার করার জন্য পেয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাঁর দেয়া সব জিনিস ত্যাগ করে সকলেই বিদায় নেবে একেবারেই খালি হাতে এবং এসব জিনিস যেমনটি ছিল ঠিক তেমনটিই আল্লাহর ভাণ্ডারে থেকে যাবে। তিনিই জীবনহীন থেকে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটান এবং জীবন্তথেকে জীবনহীনের।”(সুরা আল ইমরান:২৭) পৃথিবী ও পৃথিবীর অন্তরালে যত প্রকার জীবন আছে সকলের জীবন-মৃত্যুর মালিকও মহান আল্লাহ। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল কোন প্রাণী এবং বাতাসে ডানা বিস্তার করে উড়ে চলা কোন পাখিকেই দেখ না কেন, এরা সবাই তোমাদের মতই বিভিন্নশ্রেনী। তাদের ভাগ্যলিপিতে কোন কিছু লিখতে আমি বাদ দেইনি। তারপর তাদের সবাইকে তাদের রবের কাছে সমবেত করা হবে।(সুরা আনয়াম:৩৮) অর্থাৎ তাদের জীবন দিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা আবার মৃত্যু বরণ করতে হবে আল্লাহরই নির্দেশে।

সারা দুনিয়ার এবং দুনিয়ার প্রতিটি বস্তু সৃষ্টির প্রাথমিক পরিকল্পনা থেকে শুরু করে তার নির্দিষ্ট আকার আকৃতিতে অস্তিত্ব লাভ করা পর্যন্ত পুরাপুরি তাঁরই তৈরী এবং তাঁরই দ্বারা লালিতপালিত। কোন কিছুই আপনা থেকে অস্তিত্ব লাভ করেনি কিংবা আকস্মিকভাবে সৃষ্টি হয়ে যায়নি অথবা তার নির্মাণ ও পরিপাটি করণে অন্য কারো সামান্যতম অবদানও নেই।

সৃষ্টির পরিকল্পনা, সৃষ্টির পরিকল্পিত কাঠামোকে বাস্তবে রূপদান ও তাসবীর বা রূপদান করা এ সবগুলোই আল্লাহর একক ক্ষমতায় হয়েছে। এগুলোতে কারো সামান্যতম অবদান নেই। তিনি নিজে যে নকশা চিন্তা করে রেখেছেন তাকে কল্পনা বা অস্তিত্বহীনতার জগত থেকে এনে অস্তিত্ব দান করেন। মানুষ যা তৈয়ার করে তা আল্লাহ তা’আলার সৃষ্ট উপাদানসমুহের একটিকে আরেকটির সাথে জুড়ে দেয়। অস্তিত্ব নেই এমন কোন জিনিষকে সে অস্তিত্ব দিতে পারে না। বরং আল্লাহর সৃষ্ট বিভিন্ন উপাদানকে ভেঙ্গে নতুন জিনিষ তৈয়ার করে। আকার আকৃতির ব্যাপারেও মানুষ সৃষ্টিকর্তা নয়, বরং আল্লাহর দেয়া বিভিন্ন আকার আকৃতি থেকে নকলকারী বা অনুসরণকারী। অবয়বদানকারীও আল্লাহ তা’আলা।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ“হে মানুষ! কোন্ জিনিষ তোমাকে তোমার মহান রবের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাকে সুঠাম ও সুসামঞ্জস্য করে গড়েছেন এবং যে আকৃতিতে চেয়েছেন তোমাকে গঠণ করেছেন।”(ইনফিতারঃ৮) আমাদের সুন্দর অবয়ব ও গড়ন আল্লাহর দান। মানুষের মধ্যে যেসব উপাদান আছে সেগুলো নিজে নিজে একত্র হয়ে যাওয়ার ফলে ঘটনাক্রমে তৈরী হয়ে যায়নি। বরং এক মহাজ্ঞানী ও মহাশক্তিধর আল্লাহ তা’আলা যিনি মুবদিও ও বাদিউ তিনিই এই পূর্ণাঙ্গ মানবিক আকৃতি দান করেছেন। আমাদের সামনে হরেক রকমের প্রাণী রয়েছে, তাদের মোকাবেলায় সবচেয়ে সুন্দর শারীরিক কাঠামো এবং শ্রেষ্ট ও উন্নত শক্তি তাঁরই দান। সুতরাং যেহেতু মহাজ্ঞানী ও মহাশক্তিধর আল্লাহ তা’আলাকে কেহ সৃষ্টি করেননি, সেহেতু তাঁর ধ্বংস নেই, কেহ তাঁকে ধ্বংস করতে পারে না। বরং তিনি সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন, তাই তিনি ইচ্ছা করলে সব ধ্বংস করে দিতে পারেন আবার তিনি তা গড়তে পারেন। সুতরাং যেহেতু তাঁর উপড়ে কেহ নেই সেহেতু সেই মহান রবের সত্তাই অবশিষ্ট থাকবে।

Posted ১:৪৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(842 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.