রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪ | ১৮ কার্তিক ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

‘মৃত্যু’ জীবনের বিশেষ এক সীমারেখা

জাফর আহমাদ :   |   বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

‘মৃত্যু’ জীবনের বিশেষ এক সীমারেখা

‘জন্মিলেই মরতে হবে’ রূঢ় বাস্তব এক সত্য কথা। মৃত্যু নাটক বা গল্পের মতো কখনো সাজিয়ে গুছিয়ে আসে না। এটি সব কেড়ে নেয়। মৃত্যুর এই বোধ ও বিশ^াস মানুষ বাস্তবতা থেকেই অর্জন করেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ আর মৃত্যু, সে তোমরা যেখানেই থাকো না কেন সেখানে তোমাদের লাগাল টাবেই, তোমরা কোন মজবুত বা সুদৃঢ় প্রাসাদে অবস্থান করলেও।”(সুরা নিসা: ৭৮) মানুষ সৃষ্টির সূচনায় যারা ছিলেন, তারা আজ নেই। অত্যন্ত নিকটতম সময়ে যারা ছিলেন, যাদের কোলে-কাঁধে ছড়ে বড় হয়েছি তারাও তো আজ নেই।

একান্ত বাধ্য দু’টো হাত অবাধ্যের মতো কত আপনজনদের সাড়ে তিন হাত মাটির নীচে শুয়ে রেখে এসেছি তার হিসেব নেই। দু’টো হাতকে থামানোর সাধ্য কারোর হয়নি। আমাকেও রেখে আসবে খুব সহসাই বা এখনি। প্রত্যেকের নিজস্ব একটি ভূবন ছিল, সে ভূবনের কোলে কত না হেসে খেলে বেরিয়েছেন। মৃত্যু আল্লাহর এমন এক অপ্রতিরোধ্য ও অপ্রতিদ্ধন্ধী সৃষ্টি যার হাত থেকে কেহই রেহাই পায় নাই। পৃথিবীর ভূপৃষ্ট যত বড় বড় নায়ক-মহানায়ক, রাজা-মহারাজা, বিপ্লবী-মহাবিপ্লবী,নিজেকে সর্বোচ্চ রব দাবীদার দুর্দণ্ড প্রতাপশালী শাসক-মহাশাসক, সভ্যতার অঙ্গে ঝড় সৃষ্টিকারী সংস্কারক-মহাসংস্কারকের ভার বহন করেছে, তাদের প্রত্যেককে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পন করতে হয়েছে। এই আত্মসমর্থিতদের মধ্যে যেমন: রাজা-বাদশা প্রভাবশালীরা রয়েছে তেমনি দরিদ্র-ফকির-মিসকীনও রয়েছে।

পৃথিবীর শ্রেষ্ট সৃষ্টি আল্লাহর প্রিয়জন নবী-রাসুলগণও রয়েছেন তেমনি সীমালংঘনকারী বিদ্রোহী ফেরাউন,কারূন ও নমরুদও রয়েছে। মৃত্যু তাদের দুনিয়ার জীবন অধ্যায়ের যবনিকা টেনে দিয়েছে। অথচ তাদের কীর্তি-কর্ম আজো চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে।

মৃত্যুর স্বাদ সকলকেই আস্বাদন করতে হবে। এর কোন ব্যতিক্রম নেই, নেই কোন বিকল্প পথ ও পন্থা। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“প্রত্যেক জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ পেতে হবে। তারপর তোমাদের সবাইকে আমার দিকে ফিরিয়ে আনা হবে।”(সুরা আনকাবুত:৫৭) সুতরাং প্রাণের কথা ভেবে লাভ নেই। এ তো কখনো না কখনো চলে যাবেই। চিরকাল থাকার জন্য কেউই দুনিয়ায় আসেনি।

কাজেই এ দুনিয়ায় কিভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে ছলতে হবে এটা আমাদের চিন্তাযোগ্য বিষয় না বানিয়ে আসল চিন্তাযোগ্য বিষয় বানানো দরকার, ঈমান কিভাবে বাঁচানো যাবে এবং আল্লাহর আনুগত্যের দাবী কিভাবে পূরণ করা যাবে। কারণ শেষ পার্যন্ত আমাদের সকলকেই আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে হবে। যদি দুনিয়ায় প্রাণ বাঁচাবার জন্য ঈমান হারিয়ে ফিরে যাই, তবে তার ফল হবে ভিন্ন কিছু। আর ঈমান বাঁচাবার জন্য যদি প্রাণ হারিয়ে চলে যাই তাহলে তাহলে এর পরিণাম হবে অন্য রকম। কাজেই আল্লাহর কাছে যখন ফিরে যাবে তখন কি নিয়ে ফিরে গেলে, কেবল সে কথাটি চিন্তা করা উচিত। প্রাণের জন্য উৎসর্গীত ঈমান, না ঈমানের জন্য উৎসর্গীত প্রাণ নিয়ে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,“কাজের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে উত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীলও।”(সুরা মূলক:২) অর্থাৎ তিনি পৃথিবীতে মানুষের জীবন ও মৃত্যুর এ ধারাবাহিকতা চালু করেছেন তাকে পরীক্ষা করার জন্য, কোন মানুষটির কাজ বেশী ভাল তা দেখার জন্য। এ সংক্ষিপ্ত বাক্যটিতে বেশ কিছু সত্যের প্রতি ইংগিত দেয়া হয়েছে। প্রথম হলো,মৃত্যু এবং জীবন তাঁরই দেয়া। তিনি ছাড়া আর কেউ জীবনও দান করতে পারে না, মৃত্যুর না। অর্থাৎ জীবন-মৃত্যুর মালিক স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা। কাজেই জীবন-মৃত্যুর ফয়সালা তাঁর কাছ থেকেই হয়।

দ্বিতীয় হলো, মানুষ একটি সৃষ্টি, তাকে ভাল এবং মন্দ উভয় প্রকার কাজ করার শক্তি ও সময়কাল দেয়া হয়েছে। তার জীবন বা মৃত্যু কোনটিই উদ্দেশ্যহীন নয়, স্রষ্টা তাকে এখানে সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষার জন্য। জীবন তার জন্য পরীক্ষার সময় বা অবকাশ মাত্র। মৃত্যুর অর্থ হলো, তার পরীক্ষার সময় ফুরিয়ে গেছে। জীবন কালটুকু একজন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা হলের ৩/৪ ঘন্টা পরীক্ষার মতো। এই সময়টুকুতে আল্লাহ যাচাই করে দেখতে চান কে ভালো করেছে আর কে খারাপ করেছে। আমরা যারা জীবিত আছি পরীক্ষার হলে একজন ছাত্রকে প্রশ্নপত্রের জবাব দেবার জন্য যে সময় দেয়া হয়ে থাকে, সে সময়ে নির্ধারিত হবে তার পাশ বা ফেল করার রিজাল্ট। নিজের ঘড়িতে কিছুক্ষণের জন্য সেকেন্ডের কাঁটার চলার গতি লক্ষ করলে এই সময়ের দ্রুত গতিতে অতিবাহিত হবার বিষয়টি উপলব্ধি করা যাবে।

অথচ একটি সেকেন্ড সময়ও একটি বিরাট অংশ। একমাত্র একটি সেকেন্ড আলো এক লাখ ছিয়াশী হাজার মাইলের পথ অতিক্রম করে। ঘড়িতে সেেেন্ডর কাটার চলার যে গতি আমরা দেখি সময়ের চলার গতি যদি তাই ধরে নেয়া হয় এবং যা কিছু ভালো মন্দ কাজ আমরা করি আরও অন্যান্য যেসব কাজে আমরা ব্যস্ত থাকি সবকিছুই দুনিয়ায় আমাদের কাজ করার জন্য যে সীমিত জীবন কাল দেয়া হয়েছে তার মধ্যেই সংঘটিত হয়, এই দ্রুত অতিবাহিত সময়ই হচ্ছে আমাদের আসল মূলধন।

তৃতীয় হলো, এ পরীক্ষার জন্য স্রষ্টা সবাইকে কাজের সুযোগ দিয়েছেন। সে ভাল মানুষ না খারাপ মানুষ, এ পৃথিবীতে কাজের মাধ্যমে সে যাতে তার প্রকাশ ঘটাতে পারে সে জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেককে কাজের সুযোগ দিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট সে সুযোগ মৃত্যুর মাধ্যমে ইতি টানা হবে। পরীক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট সময় শেষ হলে যেমন পরীক্ষার খাতায় লিখা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। দুনিয়ার জীবনও ঠিক তদ্রুপ, ভালো-মন্দ কাজ করার সুনির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে গেলে মৃত্যু তার সকল কাজ-কর্ম বন্ধ করে দেবে। শুরু হবে দুনিয়ার জীবনের সকল হিসাব-নিকাশ।

চতুর্থ হলো, কার কাজ ভাল এবং কার কাজ খারাপ হয়েছে প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টিকর্তাই তার ফায়সালা করবেন। কাজের ভাল-মন্দ বিচার করার মানদণ্ড নির্ধারণ করা পরীক্ষার্থীর কাজ নয়, বরং পরীক্ষা গ্রহণকারীর কাজ। তাই যারাই সফল হতে চাইবে, তাদেরকে জানতে হবে পরীক্ষা গ্রহণকারীর দৃষ্টিতে ভাল কাজ কি? নিজে নিজে ভাল-মন্দের মানদণ্ড নির্ধারণ করলে, সেটি ভুল হবে এবং পরীক্ষা শেষে তাকে নিশ্চিত ফেল করতে হবে। এমনকি তার পুরা পরীক্ষাটিই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

পঞ্চম বিষয়টি পরীক্ষা কথাটির মধ্যেই নিহিত। তা হলো, যার কাজ যেমন হবে তাকে সে অনুপাতেই প্রতিফল দেয়া হবে। কারণ ফলাফলই যদি না থাকে তাহলে পরীক্ষা নেয়ার আদৌ কোন অর্থ হয় না। কেউ যদি এমনটি মনে করে যে, জন্মেছি, নির্দিষ্ট সময়ের পর মরে যাবো এবং মাটির সাথে মিশে যাবো। না, এমনটি মনে করার কোন সুযোগ নেই। দুনিয়ার জীবন মৃত্যুর মাধ্যমে শেষ হবে, শুরু হবে নতুন এক জীবন। সেখানে দুনিয়ার জীবনের ফলাফল ঘোষনা করা হবে। সে কি সফল হয়েছে না কি ব্যর্থ।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,“আর (হে মুহাম্মদ!) অনন্ত জীবন তো আমি তোমার পূর্বেও কোনো মানুষকে দেইনি; যদি তুমি মরে যাও তাহলে এরা কি চিরকাল বেঁচে থাকবে?

প্রত্যেক প্রাণেীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর আমি ভালো ও মন্দ অবস্থার মধ্যে ফেলে তোমাদের সবাইকে পরীক্ষা করছি, শেষ পর্যন্ত তোমাদের আমার দিকে ফিরে আসতে হবে।”(আম্বিয়া:৩৪-৩৫) দু:খ-আনন্দ, দারিদ্র-ধনাঢ্যতা, জয়-পরাজয়, শক্তিমত্তা-দুর্বলতা, সুস্থতা-রুগ্নতা ইত্যাদি সকল অবস্থায় আমাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, ভালো অবস্থায় আমরা অহংকারী, জালেম, আল্লাহ বিস্মৃত ও প্রবৃত্তির দাস হয়ে যাই কি না। খারাপ অবস্থায় হিম্মত ও সাহস কমে যাওয়ায় নিম্নমানের ও অবমাননাকর পদ্ধতি এবং অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে বসি কি না। কাজেই কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তির এ রকমারি অবস্থা বুঝার ব্যাপারে ভুল করা উচিত নয়। সে যে অবস্থারই সম্মুখীন হোক, তাকে অবশ্যই পরীক্ষার এ দিকটি সামনে রাখতে হবে এবং সাফল্যের সাথে একে অতিক্রম করতে হবে। কেবলমাত্র একজন বোকা ও সংকীর্ণমনা লোকই ভাল অবস্থায় ফেরাউনে পরিণত হয় এবং খারাপ অবস্থা দেখা দিলে মাটিতে নাক-খত দিতে থাকে। নীচের আয়াতটিতে তাদের কথা আরো বেশী করে সুষ্পষ্ট করা হয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,“আমি যখন মানুষকে নিয়ামত দান করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং গর্বিত হয়ে উঠে। কিন্তু যখনই কোন অকল্যাণ তাকে স্পর্শ করে তখন লম্বা চওড়া দু’আ করতে শুরু করে।”(সুরা হামীম আস সাজদা:৫১) এ হচ্ছে মানুষের নীচতা, স্থুলদৃষ্টি ও অপরিণামদর্শিতার বাস্তব চিত্র। জীবনের কর্মচঞ্চল অংগনে পদে পদে এর সাক্ষাত পাওয়া যায়। সাধারণভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের মন-মানসিকতা পর্যালোচনা করে নিজের মধ্যে এর অবস্থান অনুভব করতে পারে। কখনো সে সচ্ছলতা ও প্রাচুর্যের অধিকারী হয়ে এবং শক্তি-সামর্থ লাভ করে অহংকার করে বেড়ায়।

শরতের প্রকৃতি যেমন সবদিক সবুজ-শ্যামল দেখা যায় যে, এ সবুজের সমারোহ একদিন তিরোহিত হয়ে পাতা ঝরার মওসুমও আসতে পারে। কোন বিপদের ফেরে পড়লে আবেগে উত্তেজনায় সে কেঁদে ফেলে, বেদনা ও হতাশায় ডুবে যায় তার সারা মন-মস্তিস্ক এবং এত বেসামাল হয়ে পড়ে যে, আল্লাহকে পর্যন্ত গালমন্দ করে বসে এবং তাঁর সার্বভৌম শাসন কর্তৃত্বকে অভিসম্পাত করে নিজের দু:খ-বেদনা লাঘব করতে চেষ্টা করে। তারপর যখন দু:সময় পার হয়ে গিয়ে সুসময় এসে যায় তখন আবার সেই আগের মতোই দম্ভ ও অহংকারে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং সুখ-ঐশ^র্যের নেশায় মত্ত হয়। দু:সময় আবার ফিরে আসতে পারে অথবা মৃত্যু এসে তার সুখ-ঐশ^র্য থেকে সিটকে পড়তে পারে তা বেমালুম ভুলে যায়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই রূঢ় বাস্তব সত্যটি জানান পরও মানুষ কেন ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও অহংকারে মেতে উঠে? কেন ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তির জোরে মানুষকে জুলুম করে? সত্যিকার অর্থে মানুষের প্রকাশ্য শুত্রু শয়তান এদের সামনে পর্দা টেনে দেয়। যার ফলে সে মৃত্যু নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ পায় না।

Posted ১২:৩৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(757 বার পঠিত)

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: weeklybangladesh@yahoo.com

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.