বাংলাদেশ ডেস্ক : | বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড সংখ্যক লোকের মৃত্যু ঘটেছে গত ২৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার। মাত্র এক দিনে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ রোগে মারা গেছে ৩ হাজার ৮৮০ জন। সিএনএনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুর্যোগের এই বছর যেন শেষই হচ্ছে না। বছরের শেষে এসেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কেবলই বাড়ছে। হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রেকর্ড হয়েছে। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ১ লাখ ২৪ হাজার ৬০০ জন। মঙ্গলবার করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে সব স্টেটকে ছাড়িয়ে গেছে টেক্সাস। টেক্সাসের বিভিন্ন হাসপাতালে মঙ্গলবার ১১ হাজার ৭০০-এর বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান কেম্প ৬০ শয্যার আরেকটি হাসপাতাল দ্রুত চালুর কথা জানিয়েছেন। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা আগের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। কাউন্টিটিতে বর্তমানে ৭ হাজার ২০০ কোভিড রোগী হাসপাতাল ভর্তি, যা দুই মাস আগের তুলনায় ১ হাজার শতাংশ বেশি। অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, কিছু কিছু হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহে টান পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. রবার্ট কিম-ফারলে সিএনএনকে বলেন, ‘আমরা এখন যে পরিস্থিতিতে আছি, তাকে আর মহামারির বিস্তার বা দ্বিতীয় ঢেউ না বলে ভাইরাস সুনামি বলাই ভালো।’ বিদ্যমান বাস্তবতায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছুটির এই মৌসুমের পর যুক্তরাষ্ট্র সত্যিকারের বাজে পরিস্থিতির মুখে পড়বে। জানুয়ারি হতে যাচ্ছে ভয়াবহ।
বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতেও শত সতর্কতা সত্ত্বেও আমেরিকানরা ছুটি কাটাতে বেড়াতে যাচ্ছেন। কোনোভাবেই তাদের রোধ করা যাচ্ছে না। পরিবহন নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, শুধু ২৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিমানবন্দর দিয়ে ১১ লাখ মানুষ যাতায়াত করেছে। এ অবস্থায় সামনের দিনগুলো ভয়ংকর যাবে বলে সতর্ক করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের অধ্যাপক ড. জোনাথন রেইনার সিএনএনকে বলেন, ‘আগামী দুই মাস ভয়াবহ যাবে। এই সময়ে দৈনিক আমাদের ৩ হাজার বা তারও বেশি মানুষকে হারাতে হতে পারে। এমন পরিস্থিতি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলতে পারে। এর পর হয়তো আমরা কিছুটা আশার আলো দেখতে পাব।’ এটা সত্য যে, করোনার টিকা এসেছে এবং এটি মানুষকে আশাও দেখাচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার কারণে করোনা মহামারি রাতারাতি উবে যাবে না। টিকাদান প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। প্রথমে যতটা মনে করা হয়েছিল, তার চেয়ে দীর্ঘ হতে পারে এ প্রক্রিয়া। মার্কিন প্রশাসন থেকে এর আগে বলা হয়েছিল, ডিসেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২ কোটি মানুষের কাছে টিকা পৌঁছে যাবে। কিন্তু ডিসেম্বর প্রায় শেষ। আর এক দিন বাকি।
সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানাচ্ছে, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১ কোটি ১৪ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১ লাখ ডোজ দেওয়া হয়েছে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। তবে টিকা দেওয়ার তথ্য ঠিকমতো আসছে না। এ কারণেই বাস্তবতার সঙ্গে তথ্যের এই ব্যবধান তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুহার বৃদ্ধির শঙ্কা
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়ার রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মৃত্যুর হারও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্রে মোট মৃতের সংখ্যা সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) বিশেষজ্ঞরা। ইউএসএ টুডে’র ডেভিড আছচ ও পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক রিচেল ওয়েরনার বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, কোভিড-১৯–এ সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির ৩০ দিনের মধ্যেই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ মারা যাচ্ছে। অন্য যেকোনো ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর চেয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষের বেশি মৃত্যু হচ্ছে। এই মৃত্যুর হার প্রায় চারগুণ বেশি বলে তাঁরা বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছেন।
চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া করোনা সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বয়স্ক মানুষের ১৭ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে ৩০ দিনের মধ্যে। সে সময় মরণঘাতী করোনার চিকিৎসা নিয়ে বিশ্বের দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রেরও কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। এ ধরনের সংক্রমণের রোগী সামাল দেওয়ার কোনো চেনা পদ্ধতিও জানা ছিল না। গত আগস্ট মাস থেকে হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ রোগী ব্যবস্থাপনায় বেশ উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। বেশ কিছু ওষুধের কার্যকর ব্যবহার শুরু করা হয়। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও কমে আসে। বহু হাসপাতালে এর মধ্যেই স্বাস্থ্যকর্মী সংকট দেখা দিয়েছে। ডাক্তার, নার্স স্বল্পতায় হাসপাতালে করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। ডাক্তার, নার্সকে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু অক্টোবর মাস থেকে আবার পরিস্থিতি উল্টো দিকে যাত্রা শুরু করে। প্রথম দফা করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রের বড় নগর নিউইয়র্ক ও আশপাশের হাসপাতালগুলো সংক্রমিত মানুষে ভরে উঠেছিল। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। শুধু নিউয়র্ক নয়, এখন এ দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্যের হাসপাতালে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ফলে রোগী ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। এমন অবস্থায় সংক্রমণের শিকার মানুষের মধ্যে মৃত্যুর হার বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক টাইমস’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, বহু হাসপাতালে এর মধ্যেই স্বাস্থ্যকর্মী সংকট দেখা দিয়েছে। ডাক্তার, নার্স স্বল্পতায় হাসপাতালে করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। ডাক্তার, নার্সকে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে। বর্তমান হারে হাসপাতালে কোভিড–১৯ রোগীর ভর্তি বাড়তে থাকলে সংক্রমিত মানুষের মধ্যে মৃত্যুর হারও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রে এর মধ্যেই তিন লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ২ কোটি মানুষের করোনাভাইরাস সংক্রমণ সনাক্ত হয়েছে। একদিকে টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে আগামী দুই মাস করোনা পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠবে বলে স্বাস্থ্যকর্মীরা সতর্ক করে দিচ্ছেন।
নিউইয়র্র্কে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে
করোনায় নিউইয়র্কে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন বেড়ে চলছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এ অঙ্গরাজ্যের গভর্নর এন্ড্রু কুমো বলেছেন, সামনের মাসগুলো আরও কঠিন হয়ে উঠবে। গত ২৭ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে ৭ হাজার ৬২৩ জন নতুন সংক্রমিত ব্যক্তি বলে শনাক্ত হয়। এর মধ্যে শুধু নগরকেন্দ্রে ২ হাজার ৮৪২ জন সংক্রমিত হয়েছেন।এ রাজ্যে সংক্রমণের হার এখন ৫ দশমিক ৩৬ থেকে বেড়ে ৫ দশমিক ৮৫–তে দাঁড়িয়েছে। ২৯৯ থেকে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ৭ হাজার ১৮৩–এর কথা গত ২৭ ডিসেম্বর খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা রোগী ৫৮ জন থেকে বেড়ে ১ হাজার ১৮৭ জনে দাঁড়িয়েছে। বিপরীতে হাসপাতাল থেকে ৪২৭ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গত এক সপ্তাহে নিউইয়র্কে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা গড়ে ১০০ জনের বেশি। গত ২৭ ডিসেম্বর ১১৫ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়।
গভর্নর কুমো বলেছেন, করোনার টিকা দ্রুত বিতরণ ও সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জাঁতাকলে পড়েছে নিউইয়র্ক। তিনি বলেন, ফেলে আসা বছরটি ছিল খুবই নাজুক। টিকাদান কেন্দ্রের সংখ্যা দ্রুত বাড়ানো হচ্ছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আরও কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে সক্রিয় ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।
মার্চ থেকে ছড়িয়ে পরা করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কেই সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পুরো দেশে ৩ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩৭ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে নিউইয়র্কে। তিন শতাধিক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে শুধু নিউইয়র্কে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশির মৃত্যু ৪৩০ ছাড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। নিউইয়র্কের পর ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস ও ফ্লোরিডা রাজ্যের প্রতিটিতে ২০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, সামনের মাসগুলোয় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠবে। প্রতিটি রাজ্যে দ্রুত টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে। ৮০ শতাংশ লোক ভ্যাকসিন নিলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠবে বলে মনে করেন তিনি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, মেক্সিকোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৭ ডিসেম্বর নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৬ হাজার ২১৭ জন এবং মারা গেছেন ৪০০ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা যথাক্রমে ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩৪ ও ১ লাখ ২২ হাজার ৪২৬।
চীনে গত ২৭ ডিসেম্বর সংক্রমণের নতুন ২১টি ঘটনা ধরা পড়ে বলে জানিয়েছে সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ১৫টি ঘটনা ঘটে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের মাধ্যমে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা যথাক্রমে ৮৬ হাজার ৯৭৬ ও ৪ হাজার ৬৩৪।
দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের অস্তিত্ব তাদের দেশেও পাওয়া গেছে। সম্প্রতি লন্ডন থেকে আসা তিন ব্যক্তির মধ্যে এই ধরনটি শনাক্ত হয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে যা করছে নিউইয়র্ক : করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ে হিমশিম অবস্থা ছিল নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষের। করোনায় মৃতদের সৎকারে তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঘিরে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষ।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের এপ্রিলের শেষের দিকে নিউইয়র্ক নগরের ব্রুকলিন পিয়ারে দীর্ঘমেয়াদি হিমাগার সুবিধা চালু করা হয়। এই হিমাগারে একসঙ্গে অন্তত ১ হাজার ৫০০ মৃতদেহ রাখা যাবে। দক্ষিণ ব্রুকলিনের সামুদ্রিক টার্মিনালে ‘ফিউনারেল পরিচালক’ লেখা একটি সাইন দেওয়া আছে। এই সাইন ধরে সামনে এগোলে বড় একটি ওয়্যারহাউসের দেখা মেলে। এতে একেকটি ৫৩ ফুট দীর্ঘ ২০টি হিমায়িত ট্রেলার রয়েছে। সারিবদ্ধভাবে এগুলো পার্ক করে রাখা।
নিউইয়র্ক নগরের কর্মকর্তারা মনে করেন, এই নতুন হিমাগার তাদের কোভিড-১৯-এর প্রথম ঢেউয়ের সবচেয়ে মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি এড়াতে সহায়তা করবে। মৃতদেহ সৎকার ও সংরক্ষণে নগর কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বাড়াবে। পিয়েরের এই হিমাগারে চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রায় ৫৭০টি মৃতদেহ ছিল, যার বেশির ভাগ কয়েক মাস ধরে সেখানে সংরক্ষণ করে রাখা ছিল। আরও কয়েক শ মৃতদেহ রাখার জায়গা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিউইয়র্কের অবস্থা দেখে অনেক রাজ্য ও শহর অতিরিক্ত মর্গের ক্ষমতা বাড়াতে হিমায়িত ট্রেলার তৈরি করে ব্যবহার করছে। টেক্সাসে নভেম্বরের শুরুতে এল পাসোতে ১০টি হিমায়িত ট্রেলার সরবরাহ করা হয়েছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, রাজ্যে অস্থায়ী মর্গ হিসেবে ৬০০টি হিমায়িত ট্রেলার রয়েছে।
তবে এখনো অন্য কোনো শহরে এতটা মারাত্মক পরিস্থিতি হয়নি যে, মৃতদেহ কয়েক মাস ধরে ফেলে রাখতে হয়েছে। নিউইয়র্ক নগরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর ১৪ মার্চ থেকে ১৮ জুনের মধ্যে ১৭ হাজার ৫০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এপ্রিলের শুরুতে একদিনেই মৃত্যু হয়েছিল ৮০০ জনের।নগরের হাসপাতালগুলোর আশপাশের সড়কে ১৩৫টির বেশি রেফ্রিজারেটেড ট্রেলার রাখা হয়েছিল। তবে তা পর্যাপ্ত ছিল না। এটি শহরের সংকটের অন্যতম স্থায়ী চিত্র হয়ে উঠেছিল। মৃতদেহ রাখার শেলফগুলো ট্রেলারে স্থাপন করা হয়েছিল। শেষকৃত্যের প্রতিষ্ঠানগুলোতে মৃতদেহ রাখার রুম না পাওয়ায় ট্রেলারে ধারণক্ষমতা দ্বিগুণ করা হয়েছিল। মৃত্যুর পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, ফিউনারেল প্রতিষ্ঠানগুলো মৃতদেহ সমাহিত করতে পারছিল না। ব্রুকলিনের একটি হাসপাতালের মর্গের ট্রেলারে মৃতদেহ তুলতে ফর্কলিফ্ট ব্যবহার করা হয়েছিল। ইউ-হলের লাশবাহী ট্রাকে পচা মৃতদেহ স্তূপ করে রাখা অবস্থায় ধরা পড়েছিল। এর কয়েক সপ্তাহ পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। সমাহিত করার সুযোগ না থাকায় সাউথ ব্রুকলিনের মর্গগুলো আরও মৃতদেহে ভরে যায়। মাসের পর মাস মৃতদেহ ফ্রিজারে পড়ে থাকে।
Posted ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh