শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪ | ১৭ কার্তিক ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সময়ে খাদ্য সহায়তা

ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ   |   বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সময়ে খাদ্য সহায়তা

উপমহাদেশে লঙ্গর খানা শব্দটির সাথে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত। কিছুটা সমার্থক শব্দ বোধ করি কাঙ্গালি ভোজ । অবশ্য প্রথমোক্ত শব্দটি বিশেষ সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই ব্যবহার করা হয় । প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, রায়ট বা দাঙ্গা ইত্যাদি সময়ে বা পরবর্তীতে একটা জনপদে বা ভূখণ্ডে যখন খাদ্যাভাবে অগুনতি মানুষ অনাহারে, রোগে, মহামারীতে মারা যায় এবং মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার সম্ভাবনায় নিপতিত হয় সে সময় সহৃদয় বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় সংগঠন ইত্যাদি লঙ্গরখানা খোলে খাবারের যোগান দিতে চেষ্টা করে। এ ব্যবস্থা খুবই সাময়িক এবং অনিয়মিত। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেই লঙ্গরখানা উঠিয়ে নেয়া হয়। এদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি থাকেনা বললেই চলে। আমেরিকায় খাদ্য সাহায্য ফুড ব্যাঙ্ক বা ফুড প্যানট্রি ব্যবস্থা বেশ পাকাপোক্ত প্রাতিষ্ঠানিক ভিতের উপর নির্ভরশীল। মূলত দান বা ডোনেশনের উপর নির্ভরশীল হলেও সারা বছরই এদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। দাতা আকর্ষণের জন্য নিরন্তর প্রচেষটায় মূলত প্রচার অভিযান বা অন্যান্য ম্যাধমে যোগাযোগ করে তহবিল সংগ্রহ, খাদ্যসামগ্রী জোগাড় খুবই বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনায় সাম্ববছরই চলতে থাকে। অন্য কথায়, প্রাচুর্যের এ দেশটিতে প্রায় স্থায়ী লঙ্গরখানায় বা খাদ্য সরবরাহকারী যানে খাবার যোগান দেয়া ও খাদ্য সহায়তা প্রদানের বিষয়টি এ দেশে একটি চলমান প্রক্রিয়া।

বিগত দশ মাস্ ব্যাপী কোভিড ১৯ এর বিভীষিকা সময়ে খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক অনেক গুন বেড়ে গেছে । চাকুরী চলে যাওয়া, বেতন কমে যাওয়া, ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় বা স্থবিরাবস্থার কারণে মানুষের আয়ের সংস্থান নেই বল্লেই চলে ; ক্রয়ক্ষমতা প্রায় শূন্যের কোঠায়। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ এবং বিস্তৃতি বেড়ে যেতে থাকায় প্রতিটি স্টেটেই ফুড ব্যাঙ্ক ও ফুড বিতরণ কেন্দ্রে বিনা মূল্যে খাবার ও গ্রোসারী পাওয়ার জন্য জনসাধারণ প্রতিদিনই ভিড় করছে। ফুদ ব্যাঙ্কগুলোর উপর অসম্ভব চাপ পরছে। অশ্বেতাঙ্গ ও আফ্রিকান-আমেরিকান কমুনিটি নিন্ম বিত্তের পরিবারগুলোতো বটেই , চাকুরী নেই এমন অবস্থায় নিপতিত মধ্যম আয়ের অনেকে ও বাধ্য হয়ে ফুড পেন্টরি ও বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে লাইনে শামিল হয়েছেন । এদের অনেকেই জীবনে প্রথমবারের মত এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন ।

করোনা-পূর্ব সময়ের তুলনায় ফুড ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছেন এমন লোকের সংখ্যা ৬০ শতাংশ বেড়ে গেছে বলে এগুলোর ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা অভিমত রাখছেন । ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে প্রতিষ্ঠানগুলো হিমশিম খাচ্ছে । সব রকম চেষ্টা করে ও উপচে পরা ভিড়ের সকলকে খাদ্যসামগ্রী প্রয়োজন অনুযায়ী দেয়া সম্ভব হচ্ছে না । গ্রোসারি স্টোরগুলো সরবরাহ ঘাটতির কারণে পূর্বেকার মত খাদ্য ডোনেট করতে সমর্থ হচ্ছে না । দারিদ্র যে সব এলাকা বা কমুনিটিতে খুব বেশী সেগুলোতে ফ্রি রুটি বিতরণ আগের মত করা সম্ভব হচ্ছেনা । বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ করে দেওয়ায় ফ্রি খাবার জুটছে না বিধায় এ সব পরিবার তো বটেই স্বল্পবিত্তের পরিবারগুলো ও দারুণ বেকায়দায় আছে। ড্রাইভ-থ্রু ফুড পেনটরি উপশহর ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোতে বিনা মূল্যে খাদ্য সরবরাহ করে ও প্রয়োজন মেটাতে পারছেনা। করোনার কারণে স্বেচ্ছাসেবক ও পর্যাপ্ত সংখ্যায় পাওয়া যাচ্ছে না। বাপ-মা ছেলেমেয়েদের তিন বেলা দূরে থাকুক, দু’বেলা ও পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার প্লেটে তুলে দিতে পারছেনা । এহেন অপারগতায় পৃথিবীর অন্যতম সম্পদশালী দেশটির প্রতি দশজনে ছয় জন পিতা-মাতাই ভীষণ মনোকষ্টে ভুগছে। করোনার কালো থাবায় অনেক পরিবারের উপার্জনকারী বয়স্ক সদস্যগণ চাকুরী , ব্যবসা ইত্যাদি হারিয়ে মানসিকভাবে ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে পরছেন ।

সুপ, গরম খাবার, সেন্ডুউইচ ইত্যাদি পছন্দের খাবার বাচ্চারা আগের মত পাচ্ছেনা । করোনায় মৃত্যুর দুঃস্বপ্নের পাশাপাশি এ সবকিছুই তাদের লেখাপড়া , স্বাস্থ্য , বিনোদন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই বিরূপ প্রভাব ফেলছে । জীবন এখন আগের মত নেই। এ বাস্তব উপলব্দি ও সকরুণ সত্য সকল বয়সের মানুষকে এক দুর্বিসহ অবস্থায় নিপতিত করে রেখেছে। করোনা পেন্ডেমিক এ বিগত ১০ মাসের ও বেশী সময় যাবত মৃত্যু ও আক্রান্তের খবর শুনতে শুনতে মানুষের হতাশা ও আতঙ্ক বাড়ার সাথে সাথে গৃহহীনের সংখ্যা উদ্ধেগজনক ভাবে বেড়ে চলেছে । বাড়ী ভাড়া দিতে অপারগ হয়ে অনেক মানুষই মানসিক অশান্তিতে দিন কাটাচ্ছে । প্রায় ছয় লক্ষ গৃহহীনদের মধ্যে দুই লক্ষের মত মানুষের মাথা গোঁজার ঠাই নেই । প্রতি রাতে প্রায় অর্ধ লক্ষ লোক হোমলেস শেল্টারে রাত কাটায়। মোট গৃহহীনদের ৩৫ শতাংশ রাস্তাঘাটে রাত কাটায় । করোনা মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের পথে যুক্তরাষ্ট্রের মত ধনী দেশে ও যে বিপত্তি ডেকে এনেছে তা থেকে আশু উত্তরণের পথ বর্তমান সরকারের চলমান অপরাজনীতি দারুণভাবে বাধাগ্রস্থ করে রেখেছে। কোভিড ১৯ ভ্যাকসিনের ব্যবহার অনুমোদিত হলে ও বিতরণ ব্যবস্থায় নানান সমস্যা ঈপ্সিত লক্ষ্য পূরণে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুচ্ছে না। আশা করা যায় ২০২১ সালের জানুয়ারী ২০ তারিখে ক্ষমতা হস্থান্তর চূড়ান্ত ভাবে সম্পন্ন হয়ে গেলে সমস্যা অনেকাংশে বিদূরিত হয়ে যাবে।

Posted ৮:০০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(7410 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1442 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1231 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: weeklybangladesh@yahoo.com

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.