বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ | ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন নয়

  |   বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫

সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন নয়

ছবি : সংগৃহীত

ব্যক্তি-নির্ভর কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আসীন থাকলে রাষ্ট্র যে সেই ব্যক্তির জমিদারি এবং জনগণ যে তার প্রজা হয়ে উঠে, আধুনিক বিশ্বে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তারই দৃষ্টান্ত। শেখ হাসিনা ছিলেন ৫৬ হাজার বার্গমাইল আয়তনবিশিষ্ট বাংলাদেশের প্রবল পরাক্রমশালী জমিদার, অথবা একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী এক রানি এবং দেশের ১৮ কোটি মানুষ তার প্রজা। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এক লাঠিয়াল বাহিনীর নাম। লাঠিয়াল বাহিনীর এমনই দাপট যে তাদের অত্যাচারে ক্ষুব্ধ জনগণের ধুমায়িত ক্ষোভের মাত্রা তারা বুঝতে পারেনি। নিজেদের অজেয় ভেবেছিল তারা এবং তাদের জমিদার বা রানিকে ভেবেছিল দশ হস্ত-বিশিষ্ট দেবী দুর্গার প্রতিরূপ।

সবকিছুর যে বিলয় বা ধ্বংস আছে, তাদের মাথায় তা প্রবেশ করেনি, যখন প্রবেশ করেছে তখন তারা ধ্বংসের প্রান্তে চলে গিয়েছিল, যে খান থেকে আর ফেরার উপায় ছিল না। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগৈর ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছে। নিপীড়িত দেশবাসীর পুষে রাখা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টে এবং ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার লাঠিয়াল বাহিনী আওয়ামী লীগের দু:শাসনের পতন ঘটে। তাদের বিদায়ে যারা দেশ পরিচালনার অন্তবর্তী দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টি জোরালো হয়ে উঠে। কারণ প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া যেকোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী জাতীয় সংসদে তাদের তথাকথিত বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধান ও আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রের আইন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগকে ব্যক্তি দলের স্বার্থ উদ্ধারের মতো করে সাজিয়ে নেবে, যা করেছিলেন শেখ হাসিনা ও তার দল।

এটা যে একমাত্র শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের দোষ ছিল তা নয়, যেখানেই ক্ষমতার কোনো ভারসাম্য থাকে না, সেখানে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে। বাংলাদেশে ভবিষ্যতে কেউ যাতে প্রবল প্রতাপান্বিত জমিদার বা রাজা-রানি হয়ে উঠতে না পারেন, সেই ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্যই প্রয়োজন রাষ্ট্র-সংস্কার। শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতনে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার কাঠামোগত সংস্কারের। এমন সংস্কার, যাতে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি হয় এবং সেই ভারসাম্য কেউ বিনষ্ট না করতে পারে। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর তিনি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর জোর দেন এবং তার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই গঠন করা হয় বেশ কিছু সংস্কার কমিশন। ইতোমধ্যে কমিশনগুলোর অধিকাংশই তাদের সংস্কার রিপোর্ট সরকারের কাছে পেশ করেছে। রাষ্ট্র সংস্কারের পূর্ণাঙ্গ বা আমূল সংস্কার কোনো সহজ কাজ নয়। সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ী কাজ করা বা রিপোর্ট বাস্তবায়ন করাই মূল কথা।

কিন্তু প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল সংস্কার করার আগেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তবর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে যত শীঘ্র সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। তারা এমনকি একথাও বলছে যে, রাষ্ট্র সংস্কার করার কোনো অধিকার অন্তবর্তীকালীন সরকারের নেই। তাদের মতে এ দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের এবং সংস্কারএকটি চলমান প্রক্রিয়া, ইত্যাদি। এইসব রাজনৈতিক পণ্ডিত, যারা শেখ হাসিনার টানা সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিষ্ট শাসনামলে মুখ খুলতে পারেনি, রাস্তায় বের হতে পারেনি, নিজ আবাসে অবস্থান করেও নিরাপদ বোধ করেনি, তারাও সহসা মুষিক থেকে মার্জারের রূপ নিয়েছে, এমনকি কেউ কেউ সুযোগ বুঝে ব্যাঘ্রের মতো তর্জন-গর্জন শুরু করেছে। এটাই বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা।

যে কারণে স্বাধীনতা লাভের ৫৪ বছর পরও বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে এক চুল পরিমাণ অগ্রসর হতে পারেনি। এই সাড়ে পাঁচ দশকের ব্যবধানে ভবনের উচ্চতা বেড়েছে, রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে, বড় বড় ব্রিজ এবং অন্যান্য স্থাপনা গড়ে উঠেছে, কিন্তু জনগণ এমনকি পাকিস্তান আমলের চেয়ে অবদমিত হয়ে গেছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু ক্ষমতায় আসা ব্যক্তি বা দলগুলো মানুষের বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করেছে, যার পরিণতি যে কখনো শুভ হতে পারে না, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছে। অন্যান্য দল, যারা ক্ষমতায় যাওয়ার অভিলাষী বা ব্যগ্র, তারা যদি হাসিনার পতন থেকে সামান্য হলেও কিছু শিক্ষা নিতে পারেন, তাহলেই উত্তম। অতীতের শিক্ষা থেকে তাদেরও উচিত নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র সংস্কারের এই সুযোগ কাজে লাগানো। তাদের উচিত ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি নিশ্চিত করার আগে নির্বাচনের জন্য অন্তবর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে সংস্কার বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করা। ইতোমধ্যে যা জানা গেছে, তাতে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, একসঙ্গে দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হওয়া, সংসদের মেয়াদ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি হলে তা নিস্পত্তিতে যদি কিছু বেশি সময় লাগে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সরকারকে সেই সুযোগ দেওয়া। কারণ এখন যে সুযোগ এসেছে, তা বার বার আসে না।

Posted ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

(4854 বার পঠিত)

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

(1487 বার পঠিত)

ঈদ মোবারক
ঈদ মোবারক

(1021 বার পঠিত)

সম্পাদকীয়

(968 বার পঠিত)

সম্পাদকীয়

(954 বার পঠিত)

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

(947 বার পঠিত)

সম্পাদকীয়

(848 বার পঠিত)

বিদায় ২০২০ সাল
বিদায় ২০২০ সাল

(802 বার পঠিত)

ঈদ মোবারক
ঈদ মোবারক

(743 বার পঠিত)

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.