বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ | ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে কী বলেছেন ড. ইউনূস, ভারতে তোলপাড় কেন?

বাংলাদেশ অনলাইন :   |   বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে কী বলেছেন ড. ইউনূস, ভারতে তোলপাড় কেন?

ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ‘সেভেন সিস্টার্স’ খ্যাত সাতটি রাজ্য নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা মন্তব্যে ভারতজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যকে ‘আপত্তিকর’ বলে মন্তব্য করেছেন। আর দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা পবন খেরা বলেছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিষয়ে ঢাকার দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক এবং এই বিষয়ে কেন্দ্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

চার দিনের চীন সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য। এই রাজ্যগুলো ভারতের স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। সমুদ্রে পৌঁছানোর জন্য তাদের যোগাযোগের কোনও উপায় নেই। এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ।’’

তিনি বলেন, ‘‘এটি বিশাল এক সম্ভাবনা উন্মোচন করে। এটি চীনা অর্থনীতির একটি সম্প্রসারণও হতে পারে।’’ ড. মূহাম্মদ ইউনূসের এই মন্তব্য নিয়ে ভারতের রাজনীতিবিদ, সাবেক আমলা ও নীতিনির্ধারকদের মাঝে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত দিল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল প্রকাশ্যে কথা বলেছেন।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ড. ইউনূসের মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সংযুক্ত করার জন্য আরও শক্তিশালী রেল ও সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা জরুরি।

তিনি বলেছেন, ‘‘ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যকে ল্যান্ডলকড (স্থলবেষ্টিত) এবং বাংলাদেশকে সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক হিসাবে উল্লেখ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার এই মন্তব্য আপত্তিজনক এবং অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই মন্তব্য ভারতের কৌশলগত ‘চিকেনস নেক’ করিডোর নিয়ে দীর্ঘদিনের দুর্বলতার ন্যারেটিভকেই তুলে ধরে।’’

ভারতের ‘চিকেনস নেক’ খ্যাত করিডোরটি পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির এক প্রান্তে অবস্থিত; যা ওই অঞ্চলটিকে ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। চিকেনস নেক খ্যাত করিডোরের এই প্রান্তে নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভুটানেরও অবস্থান রয়েছে।

বিশ্ব শর্মা বলেন, ঐতিহাসিকভাবে, এমনকি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গোষ্ঠীও মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ করিডোরটি বিচ্ছিন্ন করার কথা বলছে। সুতরাং চিকেনস নেক করিডোরের নিচে এবং চারপাশে আরও শক্তিশালী রেলপথ এবং সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়া চিকেনস নেককে কার্যকরভাবে এড়িয়ে উত্তর-পূর্বকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে বিকল্প সড়কপথ অনুসন্ধানে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

তবে এই কাজে প্রকৌশলগত দিক থেকে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে জানিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে এটির বাস্তবায়ন সম্ভব। তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই বক্তব্যকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। কারণ তার এসব মন্তব্য গভীর কৌশলগত এবং দীর্ঘকালীন এজেন্ডা প্রতিফলিত করে।

দেশটির রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা পবন খেরা বলেছেন, ভারতকে অবরুদ্ধ করার জন্য চীনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের উত্তর-পূর্বের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত বিপজ্জনক। কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুরকে দেখছে না এবং চীন অরুণাচল প্রদেশে একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি এমন এক শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে যে, যার (বাংলাদেশ) সৃষ্টির জন্য আমরা প্রধান ভূমিকা পালন করেছি, এখন সেই দেশটি আমাদের ঘিরে রাখতে ব্যস্ত।

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় আরেক রাজ্য ত্রিপুরার রাজনৈতিক তিপরা মোথা পার্টির নেতা প্রদ্দূত মানিক্যও ড. ইউনূসের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এক সময় আমাদের যে আদিবাসীরা চট্টগ্রামকে শাসন করেছিল, তাদের সমর্থনে সমুদ্রে যাওয়ার জন্য ভারতের রুট তৈরি করার সময় এসেছে। আমরা আর অকৃতজ্ঞ শাসনব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল নই।

ত্রিপুরার এই রাজনীতিক বলেন, ১৯৪৭ সালে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন ভারতীয় ইউনিয়নের অংশ হতে চাইলেও বন্দরটি ছেড়ে দেওয়াটা ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় ভুল।

বাংলাদেশকে টুকরো টুকরো করে ফেলার মতো বেফাঁস কথা বলেছেন তিপরা মোথা পার্টির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘‘উদ্ভাবনী এবং প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জের পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ ব্যয়ের পরিবর্তে আমরা বাংলাদেশকে ভেঙেও ফেলে সমুদ্রের নিজেদের পথ তৈরি করতে পারি। চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে সবসময় উপজাতিরা বসবাস করতেন; যারা ১৯৪৭ সাল থেকে ভারতের অংশ হতে চেয়েছিলেন। সেখানে ত্রিপুরা, গারো, খাসি এবং চাকমা জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ মানুষ রয়েছেন; যারা বাংলাদেশে তাদের ঐতিহ্যবাহী ভূমিতে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাস করেন। এটিকে আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও তাদের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করা উচিত।’’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল চীন সফরে গিয়ে ড. ইউনুস উত্তর-পূর্ব ভারতের কথা কেন উল্লেখ করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সঞ্জীব সান্যাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘‘ভারতের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত হওয়ার তাৎপর্য আসলে কী?’’

তিনি বলেন, ‘‘মজার বিষয় হলো, ড. ইউনূস চীনাদের কাছে প্রকাশ্যে ভারতের সাতটি রাজ্যকে স্থলবেষ্টিত বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগে চীনকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় রাজ্যগুলো স্থলবেষ্টিত হওয়ার তাৎপর্য আসলে কী?’’

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাই কমিশনার বীণা সিক্রি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য অত্যন্ত হতাশাজনক। এ জাতীয় বক্তব্য দেওয়ার কোনও অধিকার তার নেই। তিনি জানেন উত্তর-পূর্ব ভারত হলো ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং উত্তর–পূর্ব ভারতের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের বিষয়ে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আলোচনা হয়েছে এবং এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তিও আছে।’’

সূত্র: এনডিটিভি

Posted ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.