মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া আমেরিকানদের সহায়তা করার ও দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার উদ্দেশ্যে ফেডারেল সরকারের দেয়া দ্বিতীয় পর্যায়ের স্টিমুলাস চেক এ সপ্তাহ থেকে তাদের ব্যাংক একাউন্টে জমা শুরু হবে। যারা প্রথম স্টিমুলাসের অর্থ চে বা ডেবিট কার্ডে পেয়েছেন বা যাদের ব্যাংক একাউন্ট আইআরএস এর কাছে নেই, তাদের অর্থ প্রাপ্তিতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। কংগ্রেস কোভিড ১৯ রিলিফ বিল পাস করার পর অনুমোদনের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পাঠালে ট্রাম্প প্রস্তাবিত ৬০০ ডলার স্টিমুলাসের পরিমাণ ২,০০০ ডলারে বৃদ্ধি করার আহবান জানিয়ে বিলটিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান। কংগ্রেস এ বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে এবং হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে তা পাস হয়। কিন্তু রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেট ২,০০০ ডলার স্টিমুলাস পাস করতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে এ ব্যাপারে সিনেটে এখনো ভোটাভুটি হয়নি। ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের পাস করা জনপ্রতি ৬০০ ডলার হারে দেয়ার বিল স্বাক্ষর করেছেন এবং ভুক্তভোগীরা তা পাওয়ার অপেক্ষা করছে।
গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত আইন অনুযায়ী, কোনো একক ব্যক্তির বছরে আয় ৭৫ হাজার ডলার পর্যন্ত হলে ৬০০ ডলার পাবেন। দম্পতির ক্ষেত্রে বার্ষিক আয় এক লাখ ৭৫ হাজার ডলার হলে দুজনে পাবেন নগদ ১ হাজার ২০০ ডলার। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বছরের উল্লিখিত আয়সীমার অতিরিক্ত প্রতি ১০০ ডলারের জন্য প্রণোদনা ৫ ডলার করে কমতে থাকবে। পরিবারের ১৭ বছরের কম বয়সীদেরও ৬০০ ডলার করে দেওয়া হবে। স্টিমুলাসের নতুন বিল কংগ্রেস পাস করলে স্টিমুলাসের বর্ধিত অর্থ প্রেরণে পৃথক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের অর্থ বিভাগের একজন মুখপাত্র এনবিসি নিউজকে বলেছেন, এ সপ্তাহের শেষ দিকেই নগদ স্টিমুলাসের অর্থ আগের মতো ব্যাংক ব্যাংকে জমা হতে শুরু করবে। অনেক রক্ষণশীল রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান বলছেন, বাড়তি প্রণোদনা দেশের অর্থনীতিতে কোনো শুভ প্রভাব ফেলবে না। এটি উল্টো লোকজনকে কাজে যেতে নিরুৎসাহিত করবে। তবে ট্রাম্প জনগণের কাছে শেষ মুহূর্তে নিজেকে ভালো দেখানোর জন্য এমন প্রকাশ্য প্রস্তাব করায় রিপাবলিকানরা বিপাকে পড়েছেন। আসছে দু-এক দিনের মধ্যে এই বর্ধিত নাগরিক প্রণোদনার ভাগ্য নির্ধারিত হবে। ডেমোক্রেটিক পার্টি বর্ধিত স্টিমুলাসের প্রস্তাব পাসের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ কর্মজীবীর বর্ধিত আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিটের মেয়াদ ২৬ ডিসেম্বর রাতে শেষ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা রিলিফ আইনে স্বাক্ষর করেছেন একদিন পর ২৭ ডিসেম্বর রাতে। এ কারণে বহু কর্মজীবী তাদের এক সপ্তাহের বেনিফিট এখনই পাবেন না। বিষয়টি সুরাহা করার জন্য স্টেট সরকারগুলো থেকে লেবার ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করা হচ্ছে। নিউজার্সির গভর্নর ফিল মারফি বলেন, সহসাই এ নিয়ে লেবার ডিপার্টমেন্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। না-পাওয়া সপ্তাহের আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিটের অর্থও ভোক্তভোগীরা লাভ করবে। প্রতিটি স্টেট সরকার এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
কোভিড ১৯ রিলিফ বিলে করোনা ভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা ছাড়াও যারা ২০১৯ সালের ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেছেন তারা সকলেই স্টিমুলাস পাওয়ার যোগ্য এবং প্রথম স্টিমুলাসের সুবিধাও তারা পেয়েছেন। নতুন স্টিমুলাসে কর্মজীবীরা স্টেট সরকারের দেয়া নিয়মিত আনএমপ্লয়মেন্ট অ্যাসিষ্ট্যান্সের সঙ্গে এগার সপ্তাহের জন্য ৩০০ ডলার হারে ফেডারেল আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট লাভ করবেন। আগামী ১৪ মার্চ পর্যন্ত এই বর্ধিত ভাতা দেওয়া হবে বলে বিলে উল্লেখ রয়েছে। দম্পতির মধ্যে কোনো একজনের সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর থাকলে দুজনই নগদ প্রণোদনা পাওয়ার যোগ্য হবেন। এই সুযোগ প্রথম স্টিমুলাসের সময় ছিল না। ফলে বহু আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্ট এবার নগদ স্টিমুলাসের অর্থ পাওয়ার যোগ্য হবেন। কোভিড ১৯ রিলিফ বিলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাপক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যারা আগে পে চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম বা পিপিপি ঋণ পেয়েছেন, তারা আবারও এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। যারা প্রথম দফা এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারেনি, তারাও এমন ঋণের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। এমন ঋণের একটা অংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মজুরির বিপরীতে রেয়াত করা হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে তিনশ’র কম কর্মচারি নিয়োজিত তারা এমন রেয়াতি সুবিধা পাবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের মাসিক বেতনের আড়াই গুন পিপিপি ঋণ গ্রহণ করতে পারবে।
অবশেষে প্রণোদনা বিলে স্বাক্ষর করলেন ট্রাম্প : নানা নাটকের পর ৯০৮ বিলিয়ন ডলারের করোনা স্টিমুলাস বিলে (অর্থনৈতিক প্রণোদনা) স্বাক্ষর দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে প্রায় ১৪ মিলিয়ন (১ কোটি ৪০ লাখ) আমেরিকানের বেকার ভাতা অব্যাহত থাকার পথ সুগম হলো। মধ্য মার্চ পর্যন্ত ভাতা অব্যাহত থাকবে। বকেয়া ভাড়ার জন্য উচ্ছেদ অভিযান কিংবা মর্টগেজের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থতার জন্য বাড়ি নিলামে উঠানোর প্রক্রিয়াও স্থগিত থাকবে। গরিবের চেয়েও গরিব আমেরিকানদের ‘ফুট স্ট্যাম্প’ কার্যক্রমও ত্বরান্বিত হবে।
বিলে করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থনৈতিক প্রণোদনার সঙ্গে ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের কেন্দ্রীয় বাজেটও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প স্বাক্ষর না করলে গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের একাংশ অচল হওয়ার ঝুঁকিতে ছিল। সে শঙ্কাও দূর হলো। এর ফলে প্রত্যেক আমেরিকান (যার বার্ষিক আয় ৭৫ হাজার ডলারের কম) এককালীন ৬০০ ডলারের চেক পাবেন এবং স্টেটের বেকার ভাতার সঙ্গে যোগ হবে সপ্তাহে ৩০০ ডলার করে। এ বিলের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় এক মিলিয়ন প্রবাসী বাংলাদেশিও উপকৃত হবেন। তাই তারা এটিকে ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা’ হিসেবেই স্বাগত জানাচ্ছেন। আরও উল্লেখ্য, করোনা প্রকোপ শুরুর মাসেই ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রথম স্টিমুলাস বিল পাস হওয়ায় মাথাপিছু ১২০০ ডলার (অপ্রাপ্তরা ৫০০ ডলার) এর চেক এবং বেকার ভাতার সঙ্গে ফেডারেল থেকে সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে প্রদান করা হয়েছে ৩১ জুলাই পর্যন্ত।
এরপর করোনা মহামারী অব্যাহত থাকায় আরেকটি স্টিমুলাস বিল পাসের দেন-দরবার চলছিল গত ৭ মাস থেকেই। সিনেটে রিপাবলিকারদের টালবাহানার পরিপ্রেক্ষিতে সেটি সম্ভব হয়নি। অবশেষে ২১ ডিসেম্বর সেই বিল প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়। এ বিলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্থ প্রদানের পাশাপাশি করোনার টিকা বিতরণ ব্যবস্থার অর্থও রয়েছে। বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছরের ছুটি কাটাতে ট্রাম্প এখন ফ্লোরিডায় অবস্থান করছেন। সেখানেই গত ২৭ ডিসেম্বর বার্ষিক বরাদ্দ বিলসহ এই বিলে স্বাক্ষর দেন বলে হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়।
Posted ৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh