বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রায় এক কোটি আমেরিকানকে বেকারত্বের মধ্যে রেখে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর লেবার ডে থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ফেডারেল আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য এই সুবিধা চালু করা হয়েছিল, করোনাজনিত কারণে অর্থনৈতিক অবস্থার কোন লক্স্যণীয় পরিবর্তন না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে কংগ্রেস এই সুবিধা আরো দুই দফা নবায়ন করে। এখনো করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের প্রকোপ শেষ না হওয়ায় বেশ কিছু স্টেটে অবশ্য এই বেনিফিট বহাল থাকবে বলে জানা গেছে। তবে সাধারণভাবে ফেডারেল সরকারের দেয়া সপ্তাহে ৩০০ ডলার বেনিফিটসহ স্টেটের বেকারভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ লেবার সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় ১০ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের সূযোগ রয়েছে এবং কাজের বাইরে থাকা মানুষের সংখ্যা ৮৬ লাখ। তা সত্বেও শূন্য পদগুলো পূরণ হচ্ছে না এবং অনেক নিয়োগদাতা অতিরিক্ত উৎসাহ বা সুবিধার কথা বলেও কাঙ্খিত কর্মী পাচ্ছেন না।
যেসব ষ্টেট রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, ইতোমধ্যে সেই স্টেটগুলোর রিপাবলিকান গভর্নররা আনএমপ্লয়মেন্ট কর্মসূটি বন্ধ করেছেন, যাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী নিয়োগ দিতে পারে। যেসব স্টেটে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বেশি সেসব স্টেটে কর্মসংস্থা ৪.৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু সার্বিক পরিসংখ্যানে তা প্রতি আটজন বেকারের মধ্যে মাত্র একজনের কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে বেকার সাত জন শুধু যে কর্মহীন থাকছে তা নয়, বরং তাদের কোন আয়ই থাকছে না। করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিস্তারের কারণে আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট সম্প্রসারণের জন্য কংগ্রেসে চেষ্টা সত্বেও তা ইতিবাচক সাড়া পায়নি। মধ্যপন্থী ডেমোক্রেটরাই সম্প্রসারণে বাধা দিয়েছে। তবে সেঞ্চুরি ফাউন্ডেশন আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট সম্প্রসারণের পক্ষে যুক্তি দিয়েছে যে, বিপদ এখনো কেটে যায়নি। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিস্তার হচ্ছে সেক্ষেত্রে রেকর্ড সংখ্যক কর্মীকে আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিটের বাইরে রাখা নীতিগত অবহেলা ছাড়া কিছু নয়। এর ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে বাধার সৃষ্টি হবে। বাইডেন প্রশাসন ও স্টেটগুলোকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আমেরিকানদের সেফটি নেট নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
দুই সপ্তাহ আগে বাইডেন প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে যে, যেসব স্টেটে বেকারত্ব হার বেশি সেইসব স্টেট ছাড়া সকল স্টেটে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট বন্ধ হয়ে যাবে। লেবার ডিপার্টমেন্ট পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিউ মেক্সিকো, কানেকটিকাট, নেভাদা, নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়ায় বেকার মানুষের সংখ্যা জাতীয় গড় বেকার হারের চেয়ে ৫.৪ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতি ইন্স্যুরেন্স ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান ‘গ্যালাঘের’ এর এক সমীক্ষা অনুযায়ী বড় বড় কোম্পানিগুলো লোক নিয়োগের জন্য বোনাস, উচ্চতর বেতন, সুবিধাজনক কাজের সময় নিধারণের সুবিধসহ বিভিন্ন কৌশল কাজে লাগিয়েও লোকজনকে কাজে আকৃষ্ট করতে পারছে না। যার ফলে তারা মনে করছে যে করোনা পরিস্থিতি সম্ভবত স্থায়ীভাবে কর্মসংস্থানের বাজার চিত্রকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির গ্লোবাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর স্কট হ্যামিলটন বলেছেন, নিয়োগকর্তারা যত সুবিধা অফার করুন না কেন, তারা আর পুরনো কর্মীদের ফিরে পাচ্ছেন না। অনেক নিয়োগদাতা ৪১ শতাংশ সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করেছে, তবুও কর্মী পাচ্ছে না।
বেকার ভাতার আবেদন বেড়েছে : কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে দ্রুতগতিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও কর্মসংস্থানের সংখ্যা বাড়ছে। যদিও বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে দেশটির বেকার ভাতা সুবিধার ক্ষেত্রে। দেশটিতে গত পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে চলতি সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে বেকার ভাতার আবেদন।শ্রম বিভাগের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে পূর্বের চেয়ে চার হাজার বেকার ভাতার আবেদন বেড়ে ৩ লাখ ৫৩ হাজারে পৌঁছেছে। এক সপ্তাহ পূর্বে আবেদনের মোট সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪৯ হাজার। প্রতিবেদনে অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ ন্যান্সি ভান্ডেন হাউটেন ও গ্রেগরি ডাকো বলেন, আমরা আশা করছি শ্রমবাজার তার পুনরুদ্ধারের ধারা বজায় রাখলে বেকার ভাতার আবেদন কমে আসবে। তবে বেকার ভাতার আবেদনের সংখ্যা প্রাক-মহামারী সময়ের স্তরে পৌঁছলে অর্থনৈতিক উন্নতি আরো শক্তিশালী হবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অতি সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার ফলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে সাধারণ সময়ের তুলনায় বেকার ভাতার আবেদনও বাড়তে শুরু করেছে। ২০২০ সালের মার্চের আগে অর্থাৎ মার্কিন অর্থনীতি মহামারীর মাধ্যমে প্রভাবিত হওয়ার আগে সাপ্তাহিক বেকার ভাতার আবেদন ছিল গড়ে ২ লাখ ২০ হাজারের মতো।
Posted ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh