বাংলাদেশ অনলাইন ডেস্ক : | সোমবার, ২৭ জুলাই ২০২০
বর্ষা আসে, সঙ্গে আসে বন্যা। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ধেয়ে এসেছে বন্যা। ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে ফসলের খেত, খামার। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, বৃষ্টির পানির তোড়ে ডুবে গেছে শহর, গ্রাম। এ বছর আষাঢ় মাসেই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ডুবে গিয়েছিল। সেই পানি যেখান দিয়েই নেমে আসছে সেসব এলাকাই তলিয়ে গেছে পানির নিচে। নদীর তীব্র স্রোত দুই পাড় ভেঙে বিলীন করে দিচ্ছে ঘরবাড়ি, জনপদ। পানির তীব্র স্রোত বাঁধ ভেঙে ভাসিয়েছে ফসলের খেত। দেশের প্রায় সব নদীর পানি বেড়ে বিপত্সীমার ওপর দিয়ে বইছে। এখন পর্যন্ত ৩১টি জেলার প্রায় ৪০ লাখে বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা। এখন শ্রাবণ চলছে ফলে সামনে শ্রাবণ পেরিয়ে ভাদ্র পর্যন্ত যে আরো কয়েক দফা বন্যা হতে পারে সে আশঙ্কা রয়েই গেছে। গত বছর ২০১৯ সালে তো ৬০ বছরের রেকর্ড ভেঙে অক্টোবরেও বন্যা হয়েছিল।
পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষায় ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশে বন্যা হয়। কারণ, নদীবাহিত পলি জমে জমেই এই বদ্বীপের জন্ম। বাংলাদেশের জন্ম। বন্যায় এই পলি সমতলে ছড়িয়ে মাটির উর্বরতা বাড়ায়। তাই, বাংলাদেশের জন্য বন্যা একই সঙ্গে অভিশাপ ও আশীর্বাদ। তবে, এটা ঠিক মনুষের পরিবেশ বিধ্বংসী নানামুখী কার্যক্রমের কারণে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ক্রমশ বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশে বন্যা হয় এটা স্বাভাবিক। তবে, এবারের বন্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছে। এক মাসের বেশি হতে চলেছে। ১৯৯৮ সালের বন্যার পর এবারের বন্যাই দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত ১৯৮৭ ও ৮৮ সালে যেমন বন্যা হয়েছিল তেমন বন্যা হওয়ার আশঙ্কা এখন পর্যন্ত নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রকৃতিগতভাবেই বাংলাদেশ ভাটির দেশ। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির উত্পত্তিস্থল হচ্ছে ভারত, নেপাল ও চীন। এসব দেশ থেকে প্রবাহিত পানি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ে। উজানের দেশগুলো থেকে বয়ে আসা পানির প্রধান নির্গমন পথ হচ্ছে জিএমবি বেসিনস। অর্থাত্ গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকা। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর বার্ষিক সম্মিলিত বন্যার প্রবাহ একটিই নির্গমন পথ অর্থাত্ লোয়ার মেঘনা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ে। এ কারণে লোয়ার মেঘনার ঢাল ও নিষ্ক্রমণ ক্ষমতা কমতে থাকে। নদীর পানির স্তরের এই উচ্চতার প্রতিকূল প্রভাব সারা দেশেই পড়ে। কারণ বন্যার পানি নিষ্ক্রমণের অবস্থা ও ক্ষমতা দুটোই এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এতে ছোট ছোট নদীর প্রবাহ কমে যায়।
প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ২৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল অর্থাত্ ১৮ শতাংশ ভূখণ্ড বন্যাকবলিত হয়। ব্যাপকভাবে বন্যা হলে সারা দেশের ৫৫ শতাংশের অধিক ভূখণ্ড বন্যার প্রকোপে পড়ে। প্রতি বছর গড়ে বাংলাদেশে তিনটি প্রধান নদীপথে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আর্দ্র মৌসুমে ৮ লাখ ৪৪ হাজার মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়। বার্ষিক মোট প্রবাহের এটি ৯৫ শতাংশ। তুলনায় একই সময় দেশের অভ্যন্তরে ১ লাখ ৮৭ হাজার মিলিয়ন কিউবিক মিটার নদী প্রবাহ সৃষ্টি হয় বৃষ্টিজনিত কারণে।
এদিকে বাংলাদেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৯৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আর মোট শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ২২৫ জন।
Posted ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৭ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh