বাংলাদেশ অনলাইন : | সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
শেখ হাসিনার পতনের এক বছরে দেশে-বিদেশে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে দিল্লির নিরাপদ আশ্রয়ে বসে শেখ হাসিনাও তার তৎপরতা অনেকগুণ বাড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা নিয়মিত দেশে থাকা নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফোনে বা বিভিন্ন ইন্টারনেট গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন। আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড পেজে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে বক্তব্যও রাখছেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিচ্ছেন।
কলকাতায় থাকা আওয়ামী লীগের ৬ জন শীর্ষ নেতা সম্প্রতি দলনেত্রীর সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে। তবে অনেকেই আশা করেছিলেন, দলনেত্রীর সঙ্গে তারা মুখোমুখি বৈঠক করবেন। সেজন্য দিল্লিতে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বৈঠকে শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন নেতারা। এমনকি দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করার যে প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল তা ভারত সরকারের আপত্তিতে ভেস্তে গেছে।
সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, কলকাতা লাগোয়া উপ-নগরীতে একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স থেকে আওয়ামী লীগের অফিস চালানো হচ্ছে। মানবজমিনের পক্ষ থেকে নিউটাউন-রাজারহাটের বিভিন্ন বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে সরজমিন ঘুরেও এমন কোনো অফিসের সন্ধান পাওয়া যায়নি। বরং আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা এই অঞ্চলে ফ্ল্যাটে বা বাড়িতে ভাড়ায় থাকেন তাদের ঘনিষ্ঠ একজন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের শীতলতা যেখানে সামান্য হলেও কাটতে চলেছে সেখানে ভারত সরকার এমন কোনো অফিস চালাতে দেবেন বলে কি মনে হয়!
ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর একটি সূত্র জানিয়েছে, কলকাতায় আওয়ামী লীগের কোনো অফিস রয়েছে তা তাদের জানা নেই। রাজ্য গোয়েন্দারাও এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন, অফিস যদি হয়ে থাকে তবে সেখানে নানা ধরনের মানুষের যাতায়াত হবে। নিরাপত্তার কারণেও সরকার সেটা হতে দেবে না।
গত বছরের ৫ই আগস্টের পর বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক শীর্ষ নেতা, সাবেক মন্ত্রী এবং এমপিদের অধিকাংশই কলকাতার নিউটাউন-রাজারহাট বা তার আশপাশের অঞ্চলে ফ্ল্যাট ও বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। অনেকে বাসা বদল করেও থাকছেন।
তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ বা মাঝারি স্তরের যেসব নেতা ও সাবেক এমপি যেসব অভিজাত আবাসনের ফ্ল্যাটে রয়েছেন সেখানে আবাসনের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াও গোয়েন্দাদের কড়া নজর রয়েছে। এমন একটি আবাসনের সামনে যাওয়া মাত্র সাদা পোশাকের এক অবাঙালি ভদ্রলোক পরিচয় জানতে চাওয়ার পরই- ভাগ যাও শুনতে হয়েছে। এরা যে গোয়েন্দা ছাড়া কিছুই নয় সেটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি।
তবে বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা গেছে, দিল্লিতে শেখ হাসিনা যেখানে থাকছেন তার একটি কক্ষ অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আগে যেখানে রেহানা ও তার পুত্রের অবাধ যাতায়াত ছিল এখন সেখানে আরও কয়েকজনের যাতায়াত বেড়েছে বলে জানা গেছে। তবে তারা কারা তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
তবে কলকাতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গত কয়েক মাস ধরে যে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে সে কথা স্বীকার করেছেন একটি সূত্র। নিয়মিত ঘরোয়া বৈঠকে তারা আগেও মিলিত হতেন, এখনো তাই করছেন। তবে ঈদের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য নিউটাউনের একটি পরিচিত ব্যাঙ্কোয়েট হল ভাড়া নেয়া হয়। এখন বড় ধরনের আলোচনা বৈঠকের জন্য সেই ব্যাঙ্কোয়েটটি তাদের ভরসা।
কিছুদিন আগ পর্যন্ত নেতারা নিউটাউন-রাজারহাট অঞ্চলেই ঘোরাফেরা করতেন। এখন কলকাতার নিউমার্কেট-মারকুইজ স্ট্রিট অঞ্চলে তাদের দেখা যাচ্ছে বলে এক আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, রাত ৯টার পর অনেক নেতা ও সাবেক এমপি কালো কাঁচঢাকা গাড়িতে কলকাতা এসে একটি পাঁচতারা হোটেলে মাঝে মাঝে মিলিত হচ্ছেন।
এদিকে সাবেক সংসদ সদস্যরা নিজেদের এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ অনেক বাড়িয়েছেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে। অনেক নেতা তাদের পরিবারের মাধ্যমেও সংগঠনের কাজ করছেন। এক সাবেক সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, একদিন না একদিন দেশে ফিরতেই হবে। তাই এলাকার নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা অপরিহার্য। সূত্র : মানব জমিন
Posted ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh