শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

কাতারের আমিরের সফরে কী পেতে পারে বাংলাদেশ

ডয়চে ভেলে :   |   মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

কাতারের আমিরের সফরে কী পেতে পারে বাংলাদেশ

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে সোমবার ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। ছবি : স্টার মেইল

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির এবারের ঢাকা সফরকে ব্যবসা-বাণিজ্য, জনশক্তি রপ্তানি এবং মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। ২২ এপ্রিল (সোমবার) বিকেলে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন৷ প্রায় দুই দশক পর কাতারের কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশ সফরে এলেন৷ এই সফরটিকে ব্যবসা-বাণিজ্য, জনশক্তি রপ্তানি এবং মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে৷ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে কাতার এখন মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করায় এই গুরুত্ব আরও বেড়েছে৷

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, এই সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের ১১টি চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে৷ এরমধ্যে মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বন্দিবিনিময়, দ্বৈত কর প্রত্যাহার ও শুল্ক বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা—এই চুক্তিগুলো চূড়ান্ত আছে৷ এর বাইরে বাংলাদেশ থেকে কাতারে জনশক্তি রপ্তানি, ধর্মীয় বিষয়ে সহযোগিতা, বন্দর ব্যবস্থাপনায় কাতারের প্রতিষ্ঠান মাওয়ানির সংযুক্তি, উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতা ও কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে৷ জ্বালানি নিরাপত্তার জন্যও এই সফরকে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে৷ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে এখন হামাস-ইসরায়েল এবং ইসরাইল-ইরান যে সংকট চলছে, তার প্রেক্ষাপটে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে এনার্জির মজুত আরও বাড়ানোর ক্ষেত্রে এবং এনার্জি সিকিউরিটি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমি মনে করি এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে৷’


জানা গেছে, বাংলাদেশ এক বছরের বিলম্বিত পেমেন্টে কাতার থেকে জ্বালানি নিতে চায়৷ বাংলাদেশে এলএনজির জন্য বলতে গেলে পুরোপুরি কাতারের ওপর নির্ভরশীল৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, বন্ধুত্বপূর্ণ ও বহুমুখী৷ কাতার বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী অন্যতম মুসলিম রাষ্ট্র৷ এ ছাড়া কাতার মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার, যেখানে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি কর্মরত৷’

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের যা পরিস্থিতি তাতে এই সফরে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় সবচয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ বাংলাদেশ এলএনজির জন্য বলতে গেলে পুরোপুরি কাতারের ওপর নির্ভরশীল৷ বাংলাদেশ যদি এখন লং টার্ম পারচেজ এগ্রিমেন্টে যেতে পারে, তাহলে সস্তা দামে এলএনজি পাবে৷ আর জ্বালানি নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে৷ আর এখন যে স্পট মার্কেট থেকে কেনা হচ্ছে, যার দাম বেশি পড়ছে৷ বাংলাদেশের পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর একটি অংশ এখন এলএনজিতে চলছে৷ তাই এর সাপ্লাই নিশ্চিত হলে আমাদের বিদ্যুতের ক্ষেত্রে একটা ভালো অবস্থা তৈরি হবে৷’


আর সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘অনেক বছর পর কাতারের কোনো আমির বাংলাদেশ সফর করছেন এই কারণেই এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ এলএনজি আমদানি ছাড়াও কাতারে আমাদের এখানকার অনেক লোক কাজ করেন৷ সেইজন্য আমাদের সম্পর্ক ভালো থাকা দরকার৷ সরকার চেষ্টা করছে কাতার থেকে এক বছরের বিলম্বিত পেমেন্টে এলএনজি আনতে৷ এটা হওয়া অনেক কঠিন৷ তবে যদি পারে তাহলে অনেক ভালো হবে৷ এ ছাড়া যেসব চুক্তি বা এমওইউ হবে সেগুলো দৃশ্যমান সম্পর্কের জন্য ভালো৷’

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে কাতার বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে নবম অবস্থানে আছে৷ চলতি অর্থ বছরের (২০২৩-২৪) প্রথম ৯ মাসে প্রবাসীরা ওই দেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৮৩৮ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার৷ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে কাতারের অবস্থান সপ্তম৷ ২০০১ সাল থেকে কাতারে জনশক্তি রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে গিয়ে ২০১৫-১৬ সালে আবার ভালো অবস্থানে চলে আসে৷


এরপরের চার বছর আবার কমে যায়৷ ২০২০ সাল পর্যন্ত এই খারাপ অবস্থা চলতে থাকলেও কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরকে কেন্দ্র করে ২০২১ সাল থেকে আবার বাড়তে থাকে৷ ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫৬ হাজারেরও বেশি জনশক্তি কাতারে গিয়েছে৷ তবে কাতারে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ ও বাংলাদেশি কর্মীদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ বিশ্বকাপ আয়োজনের গৌরব অর্জনের পর থেকে কাতারে প্রতি সপ্তাহে গড়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ ২০১১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৯২৭ জন প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে৷ এর মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা এক হাজার ১৮ জন৷ এই তথ্য দ্য গার্ডিয়ানের৷

তাই কাতারের আমিরের বাংলাদেশ সফরের এই সময়ে হিউম্য্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) কাতারে অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে৷ এইচআরডব্লিউর মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার উপপ্রধান মাইকেল পেজ বলেন, ‘কূটনৈতিক শুভেচ্ছার চেয়ে এই সফরে কাতারে প্রবাসী কর্মীদের সুরক্ষা এবং হয়রানি বন্ধে পদক্ষেপের ব্যাপারে কার্যকর আলোচনা দরকার৷ আর এই সফর থেকে ফিরে কাতারের আমিরের উচিত হবে প্রবাসী কর্মীরা যেখানে চিকিৎসা নেয় সেই কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে যে শ্রমিকেরা মারা গেছেন তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা৷’

এইচআরডব্লিউ বলেছে, ‘কাতারের মোট জনসংখ্যার ৮৮ ভাগই অভিবাসী কর্মী৷ তাই তাদের সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া উচিত৷’

মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘কাতারে অন্যদেশের কর্মীদের চেয়ে বাংলাদেশের কর্মীরা কম মজুরি পান৷ এর কারণ হলো তারা কোনো ব্যক্তির অধীনে ওই দেশে যান৷ যে ব্যক্তি তাদের নিয়োগকর্তা তিনি তাদের আয়ের একটি অংশ রেখে দেন৷ সরকারের উচিত হবে এই বিষয়গুলো নিয়ে কতারের সাথে কথা বলা৷ যাতে আমাদের শ্রমিকেরা না ঠকেন৷’

শ্রমিকদের প্রসঙ্গে মো. শহীদুল হক বলেন, ‘আর সেখানে এখন দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা। আমাদের উচিত হবে দক্ষ শ্রমিক সেখানে পাঠানো। যারা সেখানে বাংলাদেশ থেকে যান, তারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন। কাতার গড়ে তুলেছে বাইরের শ্রমিকেরা। এখন আমাদের উচিত দক্ষ শ্রমিক পাঠিয়ে তাদের পরবর্তী উন্নয়নে অংশীদার হওয়া। এবারের সফরে সেই দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘কাতারে লোক পাঠানোর প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল৷ ফলে সেখানে ধীর গতিতে বাংলাদেশের কর্মীরা যাচ্ছেন৷ এই প্রক্রিয়াটা সহজ করলে সেখানে কর্মী যাওয়া বাড়বে৷ সেখানে সার্ভিস সেক্টরে কর্মীদের চাহিদা বাড়ছে৷ সরকার সহযোগিতা করলে আমরা এখন সেই সেক্টরগুলো ধরতে পারি।’

কূটনীতিবিদেরা বলছেন, ২০১৭ সালে আরব লিগ, বিশেষ করে সৌদি আরবের ভূমিকায় মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছিল৷ ওই সময় কাতারের বিপক্ষে অবস্থান নিতে বাংলাদেশের ওপর সৌদি আরবের প্রবল চাপ ছিল৷ তারপও বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিল৷ তাই দেশটি বাংলাদেশের ওপর সন্তুষ্ট৷ আর এখন মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে কাতার সবচেয়ে বড় প্লেয়ার৷ মো. শহীদুল হক বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের জন্য একটা সুবিধা৷ কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বাংলাদেশকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে নানা সুবিধা নিতে সহায়তা করতে পারে৷’

এর আগে ২০০৫ সালে কাতারের তৎকালীন আমির হামাদ বিন খলিফা আল থানি বাংলাদেশে এসেছিলেন৷

advertisement

Posted ১০:০২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1406 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.