বাংলাদেশ অনলাইন : | মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০২৩
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পূর্ব পরিস্থিতি যাচাই করতে গত ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের সাত সদস্যের প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৭ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৯ অক্টোবর (সোমবার) বৈঠক করেছে মার্কিন দলটি। বৈঠক শেষে সবগুলো দলের প্রতিনিধিই কথা বলেছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। কীভাবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটে আনা যায়? নির্বাচনের আগে-পরে কী উপায়ে কত রকম অনিয়ম হয়? কীভাবে এসব অনিয়ম রোধ করা যায়? আর যুক্তরাষ্ট্রকে আগামী নির্বাচনে যদি পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে হয়, তা কেমন হওয়া উচিত? মার্কিন পর্যবেক্ষক দলটি সবগুলো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের প্রায় এ প্রশ্নগুলোই করেছে। কমবেশি এ চারটি প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন তারা।
৯ অক্টোবর (সোমবার) পর্যবেক্ষক দলটি সবার প্রথমে বৈঠক করেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে। রাজধানীর শেরাটন হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিনিধি দলকে বলা হয়েছে, বিএনপির পক্ষ থেকে সংবিধানসম্মত কোনো প্রস্তাব দেওয়া হলে ক্ষমতাসীন দলটি সমঝোতা করতে রাজি আছে। সংবিধান লঙ্ঘন করে সমঝোতা নয়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার কোনো জায়গা নেই। বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়েছে বিএনপি সমঝোতা-আপসের কোনো পথ খোলা রাখেনি। বিএনপির দাবি সংবিধানসম্মত নয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে তো আওয়ামী লীগ সমঝোতা করবে না। তিনি বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে, সমঝোতা ও আপোসের মাধ্যমে সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় কি না? জবাবে আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়েছে, সমঝোতা ও আপোসের জন্য সুযোগ থাকতে হয়। সেই সুযোগ বিএনপি রাখেনি, ব্লক করে দিয়েছে। বায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো মৃত একটি ইস্যুকে সামনে এনেছে। তাদের এক দফা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে। এসব দাবির মুখে কীভাবে আপস হবে?
বৈঠকে নির্বাচনী ব্যবস্থা, নির্বাচনী পরিবেশ, প্রশাসনের ভূমিকা, বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা ও সাজা দেওয়া, রাজনৈতিক সুযোগ, সবার জন্য সমান সুযোগের সম্ভাবনা ও বিএনপির তোলা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান জানতে চায় মার্কিন প্রতিনিধিদল। এসব বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার পাশাপাশি আইনি যুক্তি তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এদিকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক হয় দলটির। এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলটির আলোচনায় ঘুরেফিরে কথা একটাই এসেছে। তা হলো বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে কি না। আর হতে হলে কী কী প্রয়োজন? কীভাবে করা যায়?
তিনি বলেন, বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক মানের বিশ্বাসযোগ্য অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন হতে হবে। এর সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো ব্যবধান নেই বলে বিএনপি মনে করে।
খসরু বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলকে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনসহ সংবিধান প্রতিষ্ঠানসমূহের পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা মার্কিন মিশনকে বলা হয়েছে। ভোটের সময় পর্যবেক্ষক দল পাঠানো নিয়ে কথা হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, তারা বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে এসেছে, জানতে এসেছে। সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলে তারা তাদের সিদ্ধান্ত নেবে।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে বৈঠক করেছে পর্যবেক্ষক দলটি। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানান, বৈঠকে প্রতিনিধিদলটি আগামী নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করা যায়, আলোচনায় সে বিষয়ের জোর দিয়েছে। এ ছাড়া এর আগে এখানে নির্বাচনে কী ধরনের অসুবিধা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তারা নানা প্রশ্ন করেছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে ভাল হয়। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে, তা সুষ্ঠু হলো কি হলো না, তা বোঝা যায় না। তারা শেষ পর্যন্ত সবার অংশগ্রহণে কীভাবে নির্বাচন সুন্দরভাবে আয়োজন করা যায়, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে। বৈঠকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে বলে জানিয়েছি।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা আছে। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলে দেশে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। জাতীয় পার্টি এখনো অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, তাঁর দল নির্বাচনে যাবে না, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। অবস্থা দেখে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নিতে ‘গ্রহণযোগ্য’ প্রস্তাব এলে জাতীয় পার্টি বিবেচনা করবে।
সর্বশেষ ঢাকার একটি হোটেলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনের সাথে আমার বাংলাদেশ পার্টি এবি পার্টিসহ আরও ৪ টি দলের সঙ্গে বৈঠক করে। এবি পার্টির পক্ষ থেকে মার্কিন প্রতিনিধিদলকে মতামত ও মূল্যায়ন তুলে ধরেন দলের যুগ্ম সদস্যসচিব ও কূটনৈতিক টিমের প্রধান ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ১১ টি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে ক্ষমতাসীনদের অধীনে অনুষ্ঠিত ৭টি নির্বাচনই ছিল বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য। বাকী ৪টি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ছিল তুলনামূলকভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য। আজ এটা সর্বসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র চর্চায় নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন, এর মাধ্যমেই জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে, গণপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। একই প্রক্রিয়ায় এর বিপরীত পরিণতিও যে ঘটে তা ২০১৪ ও ২০১৮-তে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটা ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে একটি দেশ ক্রমশ কর্তৃত্ববাদের দিকে অধঃপতিত হতে পারে, কঠিন ও দুর্গম হয়ে উঠতে পারে ফ্যাসিবাদ। বাংলাদেশ তেমন আরেকটি ভয়ংকর নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
এর আগে ৮ অক্টোবর বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে, সন্ধ্যায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটি । সাত দিন বাংলাদেশে অবস্থানকালে পর্যায়ক্রমে সরকারি সংস্থা, বিদেশি কূটনীতিক, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা।
Posted ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh