সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫ | ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরে আপত্তি কেন?

ডয়চে ভেলে :   |   সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরে আপত্তি কেন?

২০২৪ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার প্রধান ফলকার টুর্কের বাংলাদেশ সফরেই ঢাকায় সংস্থাটির কার্যালয় চালুর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল। ছবি : সিএ প্রেস উইং

বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের অফিস খোলার সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তী সরকার সম্মত হলেও তাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নারাজ। ইসলামপন্থি দলের পাশাপাশি ঘোর আপত্তি রয়েছে বামপন্থি নানা দলেরও। বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দেওয়া হলেও একাধিক শীর্ষ নেতা এমন সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন।

কিন্তু একদিকে যখন হেফাজতে ইসলাম ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের নানা গুম-খুন হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে সোচ্চার, তখন ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের অস্থায়ী অফিস স্থাপন নিয়ে তাদের আপত্তি ঠিক কী কারণে?

২৯ জুন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, “জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের ঢাকায় একটি অফিস স্থাপনের প্রস্তাবে নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়ের একটি শাখা তারা ঢাকায় চালু করতে চাচ্ছিলেন। এটা নিয়ে তারা আলোচনা করছিলেন। এই আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এটার একটা খসড়া সমঝোতা স্মারক উপদেষ্টা পরিষদে নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। আমরা কয়েকজন উপদেষ্টা এটা পরীক্ষা করবো।”

পরীক্ষানীরিক্ষার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্কের কাছে পাঠাবে বাংলাদেশ। আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, দুই পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ক “সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হলে ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের একটা অফিস হবে।”

প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য এ কার্যালয় স্থাপন করা হবে এবং দুই পক্ষ পরে যদি মনে করে এটা পুনর্নবায়ন করা দরকার, তাহলে এটা আরো বাড়তে পারে বলেও উল্লেখ করেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। অফিস স্থাপনের দুই বছর পর এই বিষয়টি রিভিউ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

কারা করছে বিরোধিতা, কোন কারণে

এবারই অবশ্য এই ইস্যুতে প্রথম বিরোধিতা দেখা দেয়নি। গত বছরের অক্টোবরে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক ঢাকা সফর করেন। তার সঙ্গে বৈঠক শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ ঢাকায় ওএইচসিআর এর অফিস খোলার বিষয়ে সরকারের সম্মতির বিষয়টি প্রথম সাংবাদিকদের জানান। সেদিনই হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়।

সংগঠনটির আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান সাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, “ঢাকায় তাদের অফিস খুলতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চরম আত্মঘাতী হবে। নতুন করে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হোক এবং তাতে অন্তর্বর্তী সরকার আরও দুর্বল হয়ে পড়ুক, তা আমরা চাই না।”

বামপন্থি বেশ কয়েকটি দলও তখন এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিল।

একদিন পরেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার তখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

তবে একেক উপদেষ্টা একেক তথ্য দিলেও ভেতরে ভেতরে যে আলোচনা চলছে, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে ১৬ জুন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ৫৯তম মানবাধিকার পরিষদে বার্ষিক প্রতিবেদন উত্থাপনে ফলকার টুর্কের দেওয়া বক্তব্যে। অন্য নানা দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের কথাও উঠে আসে তার কথায়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের সুযোগ তৈরি করে আইন সংশোধনে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি ঢাকায় তার দপ্তরের কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করার তথ্যও উঠে আসে টুর্কের মন্তব্যে। এর দুই সপ্তাহের মাথাতেই আইন উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য জানান।

ইসলামপন্থিদের আপত্তির কারণ কী!

হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী ৫ জুলাই ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস খুলতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যার সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় কাঠামো ইসলামী মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই দেশের সংস্কৃতি, পরিবারব্যবস্থা, নৈতিক রীতিনীতিকে অক্ষুন্ন রাখা আমাদের ধর্মীয় ও নাগরিক দায়িত্ব। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে কার্যালয় স্থাপনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করছি।”

অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘মানবাধিকারের’ নামে ইসলামি শরিয়াহ, পারিবারিক আইন ও ধর্মীয় মূল্যবোধে হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা করেছে দাবি করে তিনি বলেন, “এসব হস্তক্ষেপ একদিকে যেমন জাতীয় সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত, অন্যদিকে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিরও পরিপন্থী।”

হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমরা একটি কমিটিও গঠন করেছি। তারা দেখবে বিশ্বের অন্য যেসব দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস আছে তারা সেখানে কী করে। আফ্রিকাসহ বিশ্বের কিছু দেশে তাদের অফিস আছে। কিন্তু তাতে কোনো ইতিবাচক ফল আসেনি। অনেক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজায়ওতো অফিস আছে। কিন্তু সেখানে তো তারা কিছু করছে না।”

মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী মনে করেন, “তারা এখানে অফিস করলে সমকামিতা উৎসাহিত হবে। তাহলে তো সভ্যতা থাকবে না। তারা কাদিয়ানি (আহমদিয়া), সংখ্যালঘু, পাহাড়ি, নানা ইস্যু তৈরি করবে। খ্রিস্টানদের প্রভাব বেড়ে যাবে। আর নারী স্বাধীনতার নামে তারা নারীদের ইসলামের বিধিবিধানের বাইরে নিয়ে যেতে কাজ করবে। এতে আমাদের মূল্যবোধ, দেশীয় সংস্কৃতিসহ আরো অনেক কিছু ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই আমরা এখানে মানবাধিকার অফিস চাই না।”

হেফাজতের নায়েবে আমির বলেন, “আমাদের এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় কোনো ঘটনা নাই। টুকটাক যা আছে তা আমরাই দেখছি। সরকার দেখবে।” ইসলামী আন্দোলনও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে।

দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউর রহমান গাজী ডিডাব্লিউকে বলেন, “এখানে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি আছেন। আলাদা করে আর মানবাধিকার কমিশনের অফিস দরকার আছে বলে মনে করি না। আর এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে ঘটনা তা বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঘটেছে। তার বিচার প্রক্রিয়া চলছে। ফলে মানবাধিকার কমিশনের অফিস আর দরকার নাই।”

মাওলানা আতাউর রহমান গাজী মনে করেন, বাংলাদেশে এখন আর এমন কোনো ইস্যু নাই যে কারণে এখন মানবাধিকার কমিশনের অফিস লাগবে। “অযথা তারা এখানে কেন অফিস করবে,” প্রশ্ন ইসলামী আন্দোলনের এই নেতার। এই ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

বামপন্থি সিপিবিও বিরোধিতায় সোচ্চার

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের বিরোধী। তবে তাদের বিরোধিতার কারণ ভিন্ন।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “কোনো একটি দেশ যদি দীর্ঘ মেয়াদে সংকটে পড়ে যায় তাহলে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশ তো এমন কোনো দীর্ঘ মেয়াদে সংকটে পড়ে নাই যে তাদের অফিস লাগবে।”

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তো ঘটছে। তাহলে অফিস করতে সমস্যা কোথায়? এই প্রশ্নের জবাবে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “জাতিসংঘ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছে এমন কোনো প্রমাণ নাই। তারা সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদীর স্বার্থরক্ষা করছে। মানুষের মধ্যে এই শঙ্কাই আছে। তারা মানবাধিকার নয়, ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে আসতে চায় কী না সেটাই এখন প্রশ্ন।”

তবে এই ‘ভিন্ন উদ্দেশ্য’ কী, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি সিপিবির সাধারণ সম্পাদক।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ারও বিরোধিতা করছে সিপিবি। রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রশ্ন করেন, “তারা এখানে কী কাজ করবে? টার্মস এন্ড কন্ডিশন কী? কাজের ক্ষেত্র কী? সবার সামনে সরকারের আগে তা প্রকাশ করা উচিত। আমরা মনে করি জাতিসংঘের এখানে অফিস আছে। তারা মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করতে চাইলে এই অবস্থায়ই কাজ করতে পারে।”

যেসব দেশে আছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়

সাধারণভাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন বিভিন্ন দেশ এবং আঞ্চলে অফিস স্থাপন করে। স্থানীয় পর্যায়ের অফিসগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন তৈরি করে। কৌশলগত সহায়তা দেয়, সচেতনতার জন্য অ্যাডভোকেসি করে এবং মানবাধিকার রক্ষার কাজে স্থানীয়দের যুক্ত করে। মানবাধিকারকে স্থানীয়ভাবে আন্তর্জাতিক মানে নেওয়ার চেষ্টাও ওএইচসিআর এর আওতায় রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে লিঙ্গ, আবাসন, ভূমি ব্যবস্থাপনা, বৈষম্য, স্বাস্থ্যসেবা ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়াও জাতিসংঘের এই সংস্থার এজেন্ডার মধ্যে রয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ওএইচসিআর সদরদপ্তর। এর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন বিশ্বের ১৬টি দেশে সংস্থাটির কার্যালয় রয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে- বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চাড, কলোম্বিয়া, গুয়াতেমালা, গিনি, হুন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, নাইজার, ফিলিস্তিন, সিরিয়া (লেবাননের বৈরুত থেকে পরিচালিত), সুদান, টিউনিশিয়া এবং ইয়েমেন। এছাড়াও, দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি ফিল্ড অফিস এবং ইউক্রেনে একটি মিশন অফিস রয়েছে সংস্থাটির।

এর বাইরেও ১৩টি আঞ্চলিক অফিস রয়েছে ওএইচসিআর এর। এর মধ্যে ব্যাংককে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয় অবস্থিত। তবে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে সংস্থাটির কার্যালয় নেই, কোনো আঞ্চলিক দপ্তরও নেই। ইউরোপ বা উত্তর অ্যামেরিকার কোনো দেশেও দেশটির কার্যালয় নেই। তবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৪৩টি দেশে কার্যক্রমের বিবরণ দেয়া আছে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের নামও।

গত বছর জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসেছিলেন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং নিরাপত্তা ও কূটনীতি বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক মনে করেন, “গত ১৫ বছরে যে খুন, গুমের ঘটনা ঘটেছে, নারী ও শিশু হত্যা হয়েছে সেগুলো কিন্তু বিশ্বকে জানানোর প্রয়োজনীয়তা আমরা তখন অনুভব করেছি। সেখান থেকেই জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিসের বিষয়টি সামনে এসেছে। কিন্তু এটা নিয়ে কিছু প্রশ্নও আছে। আর সেই প্রশ্নের মূল কথা হলো এটা কি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হবে? সেটা আসলে বিবেচনা করা দরকার।”

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় ছাড়াও আঞ্চলিক ইস্যুতে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের কি অবস্থান হবে, এ নিয়েও কথা বলেছেন এম শহীদুল হক।

এম শহীদুল হক বলেন, “আমাদের এখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম, সংখ্যালঘুসহ নানা ইস্যু আছে। কিন্তু সেটাকে তারা কীভাকে দেখবে তা অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। এটাও তাদের জানতে হবে যে কোনো বাঙালি কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে জমি কিনতে পারে না। কিন্তু তারা সারাদেশেই কিনতে পারে।”

এম শহীদুল হক বলেন, “তারা (ওএইচসিআর) অফিস স্থাপনের পর তাদের সীমানা ক্রস করেও অনেক কাজ করে। যা অন্যদেশে হয়েছে। সেটাও বিবেচনা করতে হবে। তারা যদি সেভাবে কাজ করে তাহলে তা আমাদের দেশের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। আর মানবাধিকারের ক্ষেত্রে, বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা নিয়ে তো প্রশ্ন আছে। তাই সব দিক বিবেচনা করে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।”

মানবাধিকারের রাজনীতি, রাজনীতির মানবাধিকার

সমালোচনা থাকলেও মানবাধিকার সংস্থার কার্যালয় চালু হলে তাতে বাংলাদেশেরই লাভ হবে বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা। অন্তর্বর্তী সরকারের গুম কমিশনের সদস্য এবং মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, “এই অফিস স্থাপন আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। আমাদের এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যে পর্যায়ে গেছে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে মানবাধিকার কমিশনের অফিস সহায়তা করবে। মানবাধিকার রক্ষায়ও তা কাজে দেবে।”

নূর খান বলেন, “নানা সমালোচনা থাকতে পারে। কিন্তু আমরা মনে করি সেই সমালোচনার পরও এটা ভালো কাজ দেবে। নানা ধর্মীয় ইস্যু আছে। কিন্তু আমরা তা আমলে নিতে চাই না। আর আমরাও তো তাদের সঙ্গে কাজ করবো। এখানকার মানবাধিকার কর্মীরাও যুক্ত হবেন। আশঙ্কার কিছু থাকলে আমরা তা দেখবো।”

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা নারী কমিশন নিয়েও হেফাজতে ইসলামের তুমুল বিরোধিতা ছিল। কমিশনকেই বাতিলের দাবি তুলেছে হেফাজতে ইসলাম। নারী কমিশনের প্রধান মনে করেন, মানবাধিকার সংস্থার কার্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে নানা ক্ষেত্রেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টিতে গুরুত্ব আরোপ করা যাবে।

নারী বিষয় সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন হক বলেন, “হেফাজত তো কোনোরকম প্রগতির পক্ষেই না। তারা যে এর বিরোধিতা করছে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই। এই অফিস হলে এখানে মানবাধিকার চর্চার একটা কালচার গড়ে উঠবে। সরকার মানবাধিকারের ব্যাপারে জবাবদিহিতা ও চাপে থাকবে। এটা আমাদের জন্য ভালো।”

বিএনপি এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো অবস্থান না জানালেও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এমন সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবেই দেখতে চান।

ডয়চে ভেলেকে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, “আমরা তো জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রে সই করেছি। এখন তারা এখানে অফিস করলে সমস্যা কোথায়? গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার এগুলো রক্ষা করতে হলে তো মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। এটা সরকারেরও কাজ। তবে সরকার এর ব্যত্যয় ঘটালে সেটা তারা দেখতে পারবে, বলতে পারবে।” আমীর খসরু বলেন, “মানবাধিকারের সঙ্গে তো ধর্মের কোনো বিরোধ নাই। ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্যও তো মানবাধিকার দরকার। ধর্মীয় স্বাধীনতা তো মানবাধিকারেরই অংশ।”

বিরোধিতার কোনো জায়গা নাই: সহকারী প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, “উপদেষ্টা পরিষদ যখন নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে, তখন বাংলাদেশের স্বার্থ এবং হিউম্যান রাইটস-এর যতগুলো ইস্যু আছে তা বিবেচনা করেই দিয়েছে। যারা এর বিরোধিতা করছেন তারাই বলতে পারবেন কেন বিরোধিতা করছেন। তবে সরকার মনে করে এখানে বিরোধিতার কোনো জায়গা নাই।”

ফয়েজ আহম্মদ বলেন, “কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে। তবে জাতিসংঘ সারা দুনিয়ায় মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে। বাংলাদেশে গত ১৬ বছর কীভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তা তো সারা দুনিয়ার কাছে স্পষ্ট। সুতরাং যদি একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই তাহলে যত ধরনের অ্যাডভোকেসি গ্লোবাল প্ল্যাটফরম থেকে আমরা সহযোগিতা পেতে পারি, তার সবগুলোই আমাদের ব্যবহার করা উচিত। এরমধ্যে লিডিং প্ল্যাটফর্ম হলো জতিসংঘ। সুতরাং সরকার সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করেই এগিয়েছে।”

Posted ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1767 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.