বাংলাদেশ অনলাইন : | রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩
তীব্র গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া প্রায় প্রতিটি মানুষের গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। সবচেয়ে বিপদে খেটে খাওয়া মানুষ। এ অবস্থায়ও তাপমাত্রা কমার আভাস নেই, উল্টো বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ১৯৬৫ সালের পর ১৫ এপ্রিল (শনিবার) ঢাকায় সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শনিবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় এপ্রিলে ৪০ ডিগ্রির বেশি উত্তাপ গত ছয় দশকেরও বেশি সময়ে দেখা গেছে কেবল দুবার। ১৯৬০ সালের এই মাসে ঢাকায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড আছে। আর ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
অন্যদিকে টানা ১৪ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়। গতকাল সেখানে তাপমাত্রা ওঠে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ২০১৪ সালে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওই ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল; অর্থাৎ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উঠেছে।
দেশের অন্যান্য এলাকাতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর বেশিরভাগ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। ফলে সেখানে বাতাসের সঙ্গে লু হাওয়া ছিল।
আবহাওয়াবিদ শরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ঢাকার কথা চিন্তা করলে এপ্রিলে সাধারণত গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের ক্ষেত্রে সেটা ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ আমরা স্বাভাবিক বা গড় তাপমাত্রার চেয়ে ৭ থেকে ৯ ডিগ্রি বেশি পাচ্ছি। তিনি বলেন, এ সময়ে যে উত্তাপটা থাকে, বৃষ্টি হলে কমে যায় সেটা। কিন্তু গত ৪ তারিখের পর থেকে, গোটা দেশে বৃষ্টিপাত অনেক কম, শূন্য বললেই চলে। হিট ওয়েভের পরিস্থিতিটি এ কারণে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
শরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির প্রবণতাটা আগামীকালও অব্যাহত থাকবে। এরপর কয়েকদিন স্থিতিশীল থাকবে, তারপর কিছুটা কমতে পারে। তবে খুব সহসাই খুব বেশি কমে আসবে না। এখন যদি ওয়াইড স্পেসে বা দেশজুড়ে মুষলধারে বৃষ্টি হতো, তাহলে হয়তো তাপমাত্রাটা কমে যেত।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মোস্তফা কামাল দেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ দিয়ে থাকেন। তার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা, ঢাকা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, শরীয়তপুরের তাপমাত্রা ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। অন্যদিকে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, মাগুরা ও যশোরে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ওঠার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অন্য জেলাগুলোর তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অবশিষ্ট জেলাগুলোতে ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, ওখানকার চাষি মঙ্গল মিয়া ২ বিঘা ধান, ১ বিঘা মিষ্টি কুমড়ো, ১০ কাঠা করলা ও ১ বিঘা জমিতে হলুদ-তরমুজ চাষ করেছেন। গত ১৩ দিন ধরে তীব্র খরায় তার এই ফসলের ক্ষেতে সেচ দিতে হাঁপিয়ে উঠেছেন।
মঙ্গল মিয়া বলেন, ‘দুবেলা শ্যালো মেশিন চালাতে হচ্ছে। আর পেরে দিচ্ছেন না। ডিজেলের যে দাম তাতে এবার পানি দিতে দিতে সব শেষ হয়ে যাবে। লোকসান হয়ে যাবে। আল্লাহ যদি একটু রহম করত তাহলে আমিও বাঁচতাম, মাঠের ফসলও বাঁচত।’
তাপপ্রবাহে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ জেলায় বইছে তীব্র দাবদাহ। তীব্র গরমে রোজাদারদের অবস্থাও ওষ্ঠাগত। আবহাওয়া অফিস বলছে সহজে দেখা মিলছে না বৃষ্টির। এদিকে তীব্র খরায় ঝরে যাচ্ছে আম-লিচুর গুটি। বোরো ধান, সবজি ক্ষেতে প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। বাড়তি দামে প্রতিদিন ডিজেল কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস ছুটে যাচ্ছে তাদের।
Posted ১২:০৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh