বাংলাদেশ অনলাইন : | শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
নির্বাচনকালীন সরকার ও আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বড় দুই রাজনৈতিক দলের অনড় অবস্থান দেশের জন্য বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, ‘আশা করি আগামী কয়েক মাসে একটা রাজনৈতিক সমঝোতা হবে এবং সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে। কেননা জাতীয় নির্বাচনে বড় কোনো দল অংশ না নিলে ফলাফল ঝুঁকির মুখে পড়বে।’ আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ২৩ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে কয়েকজন বিদেশী প্রতিনিধিও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সবাইকে নির্বাচনে আনতে ক্ষমতাসীনদের আরো তত্পর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনতে সরকারি দলকে ভূমিকা রাখতে হবে। আমি আশা করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে। বিভিন্ন দল থেকে আমাদের বলা হয়েছে, তারাও বিশ্বাস করে একটি সমঝোতা হবে। আমরাও আশাবাদী। আমরা আগামী নির্বাচনটা চাই অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে। ফলপ্রসূভাবে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে। যদি অনড় অবস্থানের মধ্যে নির্বাচন হয় এবং কোনো একটি বড় দল অংশগ্রহণ না করে, আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বলব, নির্বাচনের মূল ফলাফলের ওপর একটি ঝুঁকি থাকতে পারে।’
ঝুঁকির প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘যেমন নির্বাচন মানা হলো না, একটি ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন ক্রিয়েট করে ফেলা হলো। মানুষ বিপদগ্রস্ত হলো। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। আমি সেটাই বলছি। আমরা এ ধরনের পরিস্থিতি চাই না। সেজন্য আমরা বলব, প্রধানতম দল-সরকারে অধিষ্ঠিত দলের প্রতিও আমার আহ্বান থাকবে—আপনারাও আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যান বিরোধী দলগুলোকে সঙ্গে নিতে। তারাও যেন নির্বাচনে অংশ নেয়, নির্বাচনটাকে যেন অবিতর্কিতভাবে তুলে আনতে পারি। পুরো জাতির কাছে এ নির্বাচনটা যেন একটি গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশে ও বিদেশে সেই স্বীকৃতি লাভ করতে পারি।’
দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আগামী নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে; নির্বাচন কমিশন এমনটি দেখাতে চায় বলে জানিয়েছেন সিইসি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তবে কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে। বিভিন্ন পক্ষ-বিপক্ষ মূল যে বিভক্তিটা—‘নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে’ বা ‘নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের আমলে হবে’, সেটার নিরসন কিন্তু এখনো হয়নি। এ প্রশ্নে কিন্তু দুটি দল এখনো অনড় অবস্থানে আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সীমাবদ্ধতাটাও বলতে চাই। আমরা নির্বাচন করব সংবিধানের বিধান অনুযায়ী, যেটা বর্তমানে বহাল আছে। সেভাবেই আমাদের নির্বাচন করতে হবে। একইভাবে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে সব রাজনৈতিক দলগুলো যেন অতি অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে। কারণ নির্বাচনে এবং ভোটকেন্দ্রগুলোয় ইফেকটিভ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হলে প্রত্যাশিত ভারসাম্য সৃষ্টি হবে না।’
ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, ‘এটা ছিল একাডেমিক ডিসকাশন। উনারা আমাদের কোনো পরামর্শ দেননি। আমরাও কিছু দেইনি। গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতাগুলো আলোচিত হয়েছে। আমরা বলেছি সহযোগিতাটা যেন অব্যাহত থাকে। নির্বাচনকে আরো বেশি সহজ-সরল ও গণমুখী কীভাবে করা যায় সেটা নিয়ে সার্কভুক্ত দেশে যদি গবেষণা হয়, একটি সমঝোতা যদি হয়, সেটাও আন্তর্জাতিকভাবে মেনে চলার একটি বাধ্যবাধকতার সৃষ্টি করে।’
প্রতিনিধি দলে নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন উল্লেখ করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন কেমন হয় উনারা তা জানতে চেয়েছেন। তারা আশা করেছেন আমাদের আগামী নির্বাচনটা যেন সুন্দরভাবে হয়। জানতে চেয়েছেন পর্যবেক্ষককে আমরা স্বাগত জানাই কিনা? আমরা বলেছি, পর্যবেক্ষকের বিষয়ে আমরা খুবই উন্মুক্ত। আমরা স্বচ্ছতা চাচ্ছি। আর স্বচ্ছতার জন্য অবশ্যই গণমাধ্যম লাগবে। পর্যবেক্ষক লাগবে। মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকরা বস্তুনিষ্ঠভাবে রিপোর্ট করতে পারলে তাহলে অনেক বেশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত হতে পারে।’
বৈঠকে মালয়েশিয়া থেকে ইউনাইটেড ন্যাশন ওয়ার্ল্ড পিস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মেরিয়েট্টা এরগুইডো রেফরমাডো, জার্মানি থেকে জিবিপি ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভলকার ইউ. ফ্রেডরিচ, ভুটান থেকে গ্লোবাল ভিলেজ কানেকশনের চেয়ারম্যান জেকশন দুকপা, ভারত থেকে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের বিশেষ প্রতিনিধি স্বপ্না সাহা উপস্থিত ছিলেন।
Posted ১২:৩১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh