শনিবার, ১১ মে ২০২৪ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে কয়লা ঘাটতি যে কারণে…

বাংলাদেশ রিপোর্ট :   |   বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে কয়লা ঘাটতি যে কারণে…

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ফাইল ফটো

প্রবল বিরোধিতার মুখে বাংলাদেশের রামপালে স্থাপিত ১,৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন শুরু হয়েছিল গত ডিসেম্বরে। এক মাসের মধ্যে গত জানুয়ারি মাসে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়, এরপর আবার বন্ধ রাখা হয় গত এপ্রিলে। এ সময় ২৩ দিন পর্যন্ত ওই কেন্দ্র থেকে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়নি। এর কারণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে উৎপাদন চালু রাখার মতো কোনো কয়লা ছিল না। অর্থ্যাৎ ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ওই দিনগুলোতে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়নি অথবা দুই বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ঋণ পরিশোধ খাতে কোনো রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হয়নি।

নিউইয়র্ক টাইমসের ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট প্রতিবেদক সোমিনি সেনগুপ্তা এই বিতর্কিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখতে রামপাল সফর করে এবং ঢাকা ও রামপাল থেকে রিপোর্ট করেন জুলফিকার আলী মানিক। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, রামপালে কয়লা চালিত ‘মৈত্রী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র’ এখন যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, তা থেকে বোঝা যায় যে, শুধু বাংলাদেশের এই কয়লঅ চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটিই নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য স্থানে স্থাপিত সকল কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র আগামী বছরগুলোতে বহু কারণে একই ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে পারে।


মৈত্রী বন্ধ হয়েছিল সাময়িক কারণে, বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করতে না পারা। এর প্রধান কারণ ছিল, ডলারেরর বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার মান কমে যাওয়া; অন্যদিকে কয়লাসহ অন্যান্য পন্যের মূল্য দ্রুত বেড়ে যাওয়া। কয়লা চালিত অন্যান্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোকে সামনের বছরগুলোকে উৎপাদনহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে হবে, কারণ বিদ্যুতের সস্তা উৎস কয়লার স্থান দখল করলে অন্তত বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার গুরুত্ব হ্রাস পাবে অথবা আদৌ কোনো গুরুত্ব থাকবে না। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোকে আগাম সতর্কতা দিচ্ছে যে, সৌর শক্তি ব্যবহার ও বায়ু চালিত বিদ্যুৎ যেখানে সস্তা হয়ে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে তারা কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বিনিয়োগের আগে যাতে বিশেষভাবে বিবেচনা করে। সোলার ও উইন্ড পাওয়ারের মতো বিনিয়োগযোগ্য জ্বালানির মূল্য হ্রাস পেলে কয়লা-ভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সকল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করা কঠিন হয়ে যাবে। নতুন স্থাপিত এ ধরনের কেন্দ্রগুলোর পক্ষে তাদের বিনিয়োগ উঠিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন না বিশেষজ্ঞরা। মৈত্রী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বিনিয়োগ উঠিয়ে আনতে ২৫ বছর সময় লাগবে বলে আশা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের জ্বালানি মন্ত্রী নসরুল হামিদ রামপাল কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্তের পক্ষে জোরাল যুক্তি প্রদর্শন করেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লা মূল্য বেড়ে যাওয়া এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অনাকাংখিত চাপ সৃষ্টি হওয়াসহ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে এত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে তা কেউ আগে কল্পনা করেনি। তিনি বলেন, কয়লা হোক বা অন্য জ্বালানি হোক, বাংলাদেশের প্রয়োজন ব্যয়সাধ্য ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা, যাতে দেশের বিকাশমান শিল্প আরো বিকশিত হতে পারে। এটি ফসিল ফুয়েল হতে পারে, এবং যেটিই হোক, আমার বিদ্যুৎ প্রয়োজন। প্রতিটি দেশ ফসিল ফুয়েল ব্যবহার করেছে।


এশিয়ার অনেক দেশের মত বাংলাদেশও কয়লা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখিয়ে বিপদে পড়েছে। বাংলাদেশ সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলো ১২টি কয়লা চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাতিল করে গ্যাসসহ অন্যান্য জ্বালানি ব্যবহার করে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের অন্তত ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, যাকে সরকার বলছে, ‘ক্লিন এনার্জি’। তারা সাগরের বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎআমদানির কথাও বিবেচনা করছে। ভারত সম্প্রতি বলেছে যে তারা আগামী পাঁচ বছর তারা কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন স্থগিত রাখবে। বিশ্বের সর্বত্র কয়লা ভিত্তিক পুরোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং নতুন কোনো কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প বাতিল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে গোøাবাল এনার্জি মনিটর।

রামপাল মৈত্রী বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন থেকে মাত্র ১০ মাইল দূরে অবস্থিত, যে কারণে পরিবেশবাদীরা ইউনেস্কোর এই হেরিটেজ সাইটের ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে কয়লা ভিত্তিক এই কেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছিল। কয়লার অভাবে এটি বন্ধ হলে পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম নেতা সুলতানা কামাল বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অলস পড়ে আছে, এটি সুখবর, এটি কোনো মারাত্মক গ্যাস নির্গত করছে না। অন্যদিকে এর ফলে জনগণের অর্থের বিরাট অপচয় হচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, এ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা কতটা ভুল ছিল।’


রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার বাপ্পাদিত্য সরকার বলেছেন, “আমরা জানি যে এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি এলাকা। সেজন্য সকল বিষয়ে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।” কয়লার ধূলি যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য কাভারড বার্জে কয়লা পরিবহন করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আনা হয়। কয়লা জ্বলার কারণে উপজাত হিসেবে যে জিপসাম পাওয়া যায় তা স্থানীয় সিমেন্ট কারখানায় বিক্রয় করা হয়। ছাইয়ের পুকুরগুলোও ঢেকে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, মৈত্রী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কর্পোরেশন ও বাংলাদেশের যৌথ প্রকল্প। ভারতে অবস্থিত আরেকটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশে বিদ্যুৎ প্রেরণ শুরু করেছে, যেটি পরিচালনা করে ভারতের আদানি গ্রুপ। চীন বাংলাদেশকে বরিশাল ও পায়রায় দুটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সহায়তা করেছে এবং মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে অর্থায়ন করছে জাপান। মে মাসের মাঝামাঝি কয়লা সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ করার মতো বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করার পর কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পরপরই পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হওয়ার কারণ একই ছিল – কয়লার ঘাটতি। মৈত্রী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছেই কয়লা ভিত্তিক আরেকটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু নির্মাতারা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

Posted ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1414 বার পঠিত)

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.