বাংলাদেশ অনলাইন : | বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এরই মধ্যে বাংলাদেশের নড়বড়ে অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বিরোধী দলগুলো আন্দোলন করছে। এটি ভঙ্গুর অর্থনীতির জন্য উচ্চ ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য বর্তমান সরকারের আমলে নিযুক্ত রাজনৈতিক অভিজাতরা (অলিগার্ক) দায়ী। ১৫ নভেম্বর (বুধবার) আলজাজিরায় এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী নারী সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। ক্ষমতার প্রায় ১৫ বছর সময়ে বিরোধী দল এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। এখন বিএনপি এবং তার মিত্ররা জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নভেম্বরের শুরু থেকে দেশব্যাপী ধারাবাহিকভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। এসব রাজনৈতিক অচলাবস্থার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ বাংলাদেশিদেরই।
সড়কে খুব কম বাস, অটোরিকশা ও ট্যাক্সি চলার কারণে একটি ট্রাভেল এজেন্সির নির্বাহী রাহুল আমিনকে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১০ গুণের বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে অফিসে যেতে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এমনিতেই গত বছর থেকে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে। এখন এই রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির খড়্গ পড়েছে বাজারে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া ও ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির কারণে সরকার এ বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ চাইতে বাধ্য হয়। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের অর্থনীতি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়কালে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির ঘাটতি বেড়েছে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে। গত মাসে রপ্তানি আয় শতকরা ১৩ দশমিক ৬৪ ভাগ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারে। গত ২৬ মাসে এটা সর্বনিম্ন রপ্তানি। রেমিট্যান্সও ৪ দশমিক ৪ ভাগ কমে গেছে।
ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য শুধু রাজনৈতিক অচলাবস্থাকে দায়ী করা যায় না। এ অবস্থা চলছে কমপক্ষে ১৫ মাস ধরে এবং তা চলছেই। এখন রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং সহিংসতা হবে ক্ষতের ওপর লবণ দেওয়ার মতো।
গত জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৯০০০ কোটি ডলারের পণ্য। অন্যদিকে রপ্তানি করেছে ৫৫০০ কোটি ডলারের পণ্য।
অর্থনীতি বিশ্লেষক জিয়া হাসান বলেন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের জন্য অভিযুক্ত অভিজাতরা আর্থিক খাতে সংস্কারের বিরোধিতা করেছে, যাতে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ হুমকিতে না পড়ে। এসব অভিজাতের নেটওয়ার্ককে বিলুপ্ত করে প্রকৃত গণতন্ত্রে না ফিরলে, অর্থপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্কার না করলে কোনো রাজনৈতিক মীমাংসা কার্যকর হবে না।
বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, অলিগার্কদের চক্রকে ভেঙে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করাতে তারা অবরোধ দিচ্ছেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গত ১৫ বছরে সরকার এবং তার সুবিধাভোগীরা অস্বাভাবিকভাবে দুর্নীতি করেছে।
Posted ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh