ঢাকা : | বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে। একই সময়ে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও ৫ হাজার ১৮৫ জন। সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিন গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এ যাবতকালে দেশে করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৯৮৭ জনে। এর আগে দেশে সর্বোচ্চ ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ১৪ এপ্রিল (বুধবার) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এতে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩ হাজার ১৭০ জন। ১৪ এপ্রিল (বুধবার) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে করোনাভাইরাসে মৃত ও শনাক্তের এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ৫ হাজার ৩৩৩ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৯১ হাজার ১৯৯ জন। এর আগে গত ১৩ এপ্রিল দেশে আরও ৬ হাজার ২৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, ১৪ এপ্রিল (বুধবার) সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন ১২ হাজার ৮৪৮ জন এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৬ জন। এ নিয়ে বিশ্বে মোট করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ লাখ ৭১ হাজার ৮৬৪ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ কোটি ৮০ লাখ ১৩ হাজার ৭৪ জন। এছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১১ কোটি ১০ লাখ ৩২ হাজার ১৮৫ জন।করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ২০ লাখ ৭০ হাজার ৭৮৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৭৭ হাজার ১৭৯ জনের। আক্রান্ত ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ৩৮ লাখ ৭১ হাজার ৩২১ জন এবং মারা গেছেন এক লাখ ৮৫ হাজার ২৪৮ জন।
আক্রান্ত এবং মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিল এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ৩৬ লাখ ১ হাজার ৫৬৬ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭১৮ জনের। আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫১ লাখ ৬ হাজার ৩২৯ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ৯৯ হাজার ৪৮০ জন। আক্রান্তের দিক থেকে রাশিয়া রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ৩ হাজার ৬০১ জন।
কঠোর লকডাউন শুরু
এদিকে ‘কঠোর লকডাউনের’ প্রথম দিনে ঢাকার রাস্তায় তেমন যানবাহন ও লোকজন দেখা যায়নি। অবশ্য কাঁচাবাজারের চিত্র ছিল আলাদা। কারওয়ান বাজারে ভিড় ছিল স্বাভাবিক। বুধবার থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে ঢাকার সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বেশির সড়কের প্রবেশ পথই অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারপরও লোকজন জরুরি প্রয়োজনে ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে বের হয়েছেন। পুলিশ যানবাহন থামিয়ে মুভমেন্ট পাস চেক করে তারপর গাড়ি ছাড়ে। তবে মুভমেন্ট পাস ছাড়াও যানবাহন দেখা গেছে। তারা বলছেন, মুভমেন্ট পাসের জন্য চেষ্টা করেও পুলিশের ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছেন না।ঢাকার ধানমন্ডি, পান্থপথ, কারওয়ারন বাজার, বাংলামটর, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুরে লকডাউনে কিছু ব্যক্তিগত যানবাহন ও রিকশার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকার ভেতরে সিটি সার্ভিস ও ঢাকার বাইরের দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ আছে। আর ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় যারা ব্যক্তিগত যানবাহনসহ বিভিন্ন উপায়ে লকডাউনে ঢাকার বাইরের যাওয়ার এখনো চেষ্টা করছেন তারা বিপাকে পড়েছেন। বুধবার পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হওয়ায় সরকারি ছুটি। রোজারও প্রথম দিন। ফলে লোকজন কতটা লকডাউন মানছেন তা বুঝতে আরো দুই-এক দিন দেখতে হবে। ‘মানুষকে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে’
এখন যে লকডাউন শুরু হয়েছে তা শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক মতো চললে এর সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা: মুশতাক হোসেন। তবে সেই সুফল এখন নয়, কমপক্ষে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। আর এখন যে সংক্রমণ ও মৃত্যু তার জন্য অন্তত তিন সপ্তাহ আগের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে এখন সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে আসবে সেজন্য আগামী কোরবানির ঈদ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তবে সংক্রমণের এই যে পাগলা ঘোড়া তা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নিম্নগামী হবে বলে তার ধারণা। ডা: মুশতাক হোসেন বলেন, “একটু অপেক্ষা করুন। এর আগে এক সপ্তাহের সীমিত আকারের লকডাউন এখন যে লকডাউন শুরু হয়েছে তার সুফল পাওয়া যাবে। এটা যে বিফলে যাবে তা নয়।” ‘একটু অপেক্ষা করলে লকডাউনের সুফল পাওয়া যাবে’
তিনি বলেন, সংক্রমণের হার কমাতে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন। আর সাধারণভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও বিএসএমইউর সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা: নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘৭০ ভাগ মানুষ মাস্ক পরছেন না। আর করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ৯৬ ভাগ পর্যন্ত কার্যকর তিন স্তরের মাস্ক। তাই সংক্রমণ ঠেকাতে হলে যেকোনো উপায়ে মানুষকে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে।’ আর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার জন্য তিনি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত আইসিইউ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছেন। হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা হচ্ছে না। বেড খালি নেই হাসপাতালে।
Posted ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh