শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫ | ১ ভাদ্র ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

মার্কিন শুল্ক কিছুটা কমলো, বাংলাদেশের লাভ কতটা

  |   শুক্রবার, ০১ আগস্ট ২০২৫

মার্কিন শুল্ক কিছুটা কমলো, বাংলাদেশের লাভ কতটা

ছবি : সংগৃহীত

শেষপর্যন্ত তৃতীয় দফার আলোচনায় মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এটিকে তাদের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করছে। অর্থনীতিবিদদেরও অনেকে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বলেই মনে করছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের পরিবর্তন বা শুল্ক কমানোর পেছনে বাংলাদেশকে কতটা ছাড় দিতে হয়েছে, বিনিময়ের বিষয় কী হতে পারে, এসব প্রশ্নে কোনো পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।

অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বাড়ানোর কৌশলের ক্ষেত্রে বাণিজ্যের পাশাপাশি ভূ-রাজনীতি ও বৈশ্বিক চিন্তাও ছিল। বাণিজ্যের বাইরের বিষয়গুলোয় বাংলাদেশ কিভাবে সামলেছে বা কী অবস্থান তুলে ধরেছে, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আগের দুই দফা আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘গোপন চুক্তি’ করার অভিযোগ উঠেছিল। সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারা অবশ্য সমঝোতার স্বার্থে আলোচনার অনেক বিষয় গোপন রাখার কথা বলেছিলেন। সে কারণে এখন প্রশ্ন উঠছে, শুল্ক কমানোর ক্ষেত্রে শেষপর্যন্ত সমঝোতা হলো কিসের ভিত্তিতে, বাংলাদেশ ছাড় দিলো কোথায়?

তবে শুল্ক কমার বিষয়টি গার্মেন্টস শিল্পসহ ব্যবসায়ীদের জন্য স্বস্তির বলে অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন। কারণ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া সব পণ্যের ওপর আগে থেকেই গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। এর সঙ্গে পাল্টা ৩৫ শতাংশ শুল্ক যোগ হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে বড় অংকের অর্থ্যাৎ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক গুনতে হতো বাংলাদেশকে। সেখানে এখন পুরাতন ১৫ শতাংশ এবং নতুন ২০ শতাংশ মিলিয়ে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

‘মহাবিপদ সুযোগে পরিণত হয়েছে’

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে শুরুতে যে হারে বাড়তি শুল্ক বসানোর কথা ছিল, তা বাংলাদেশের জন্য মহাবিপদস্বরূপ ছিল। কারণ ওই বাড়তি শুল্কের কারণে অনেকের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। কিন্তু ওই শুল্ক এখন ২০ শতাংশে নেমে আসার ফলে “মহাবিপদ সুযোগে পরিণত হয়েছে”, বিবিসি বাংলাকে এমনটাই বলছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শুল্ক কমানোর চুক্তিকে ঐতিহাসিক বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি এটিকে “সুস্পষ্ট কূটনৈতিক সাফল্য” বলে উল্লেখ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা না হলে পহেলা অগাস্ট থেকে বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করার কথা বলা হয়েছিল। এখন সেই শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা সম্ভব হলো।

কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারতের পণ্যে বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্কআরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত এখনো আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

ভারত ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের বড় প্রতিদ্বন্দ্বি। কিন্তু ওই দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশের প্রায় সমতুল্য, অর্থাৎ গড়ে ১৯ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক হার ধার্য করা হয়েছে।

এই বিষটিকেই ইতিবাচকভাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

তিনি মনে করছেন, তৈরি পোশাক থেকে শুরু করে চামড়া শিল্প, সব খাতের বাজার বিস্তৃত করার এটাই সুযোগ। কারণ ভারতের জন্য শুল্ক হার বেশি হওয়ার ফলে বায়াররা গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে সে দেশে বাণিজ্য করতে বেশি আগ্রহী হবে না।

আর পাকিস্তানের জন্য শুল্ক হার ১৯ শতাংশ হলেও “এক শতাংশের সুবিধা পাওয়ার জন্য বায়াররা পাকিস্তানে যাবে না। কারণ পাকিস্তানের সেই সরবরাহ ক্যাপাসিটি নেই। পোশাক শিল্প প্রমাণিত শিল্প। এই এক শতাংশের জন্য বাংলাদেশের মতো নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী বাদ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানের কাছে যাবে বলে মনে হয় না,” বলছিলেন জাহিদ হোসেন।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলও মনে করেন, গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়তি শুল্কআরোপের আগে যেসব দেশ বাংলাদেশের প্রতিযোগী ছিল, প্রতিযোগী হিসাবে এখনো তারাই আছে।

“পাল্টা শুল্কের আগে সবাই সমান ছিল, এখনও সবাই সেখানে আছে। শুধু ভারতের সাথে পার্থক্য আছে। কিন্তু ভারত বাড়তি ব্যবসা খুব বেশি নিতে পারবে না। আর চীনের ব্যবসা বাংলাদেশের দিকেই থাকবে। সামগ্রিক চিন্তা করলে এখানে নেগেটিভ হওয়ার সুযোগ নেই” বলেন মহিউদ্দিন রুবেল।

শুল্ক কমলেও চ্যালেঞ্জ কোথায়?

১৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর বিষয়টি কিভাবে ব্যবহার করা হবে অর্থ্যাৎ এর বাস্তবায়ন হবে কিভাবে-এনিয়ে আশঙ্কার কথা বলছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “বাড়তি শুল্ক কারা কতটুকু বহন করছে, তা দেখবার বিষয়। এটি উদ্যোক্তাদের ওপর এলে মুনাফা কিছুটা কমে যাবে।”

বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলের বক্তব্য হচ্ছে, পারস্পরিক শুল্ক হার তুলনামূলকভাবে কমলেও খুচরা বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে।

এছাড়া, তিনি মনে করেন, “এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বিদ্যুৎ গ্যাস, জ্বালানি, ব্যাংক, লজিস্টিক, পোর্ট, এনবিএআর-এর অনেক কিছু উন্নত করতে হবে।”

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসানও এই বিষয়গুলোকে সমস্যা মনে করেন।

তিনি বলেন, “গ্যাসের অভাবে ফ্যাক্টরি চলে না। উৎপাদনে দেরি হলে সময় মতো অর্ডার দেওয়া হয় না। তখন প্রোডাক্ট বিমানে পাঠাতে হয় বা ডিসকাউন্ট দিতে হয়। আবার দেখা যায়, বন্দর থেকে মালামাল জাহাজে ওঠাতে এক সপ্তাহ লেগে যায়। এনবিআর থেকে ডকুমেন্টস ক্লিয়ার হয়না। বন্দরের অদক্ষতার কারণেও অনেকসময় গতি মন্থর হয়।”

গত এক বছর ধরে বাংলাদেশে যে প্রায়ই রাস্তাঘাট বন্ধ করে অবরোধ করা হয়, সে বিষয়টির কথা বলেন তিনি। তার মতে, এসব ঘটনা “সরবরাহ চেইনকে বিঘ্নিত করছে।”

এছাড়া, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শ্রমিক অসন্তোষও বড় একটি বাধা বলে মনে করেন তিনি।

“আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বদনাম আছে যে বাংলাদেশ ন্যুনতম মজুরি দিয়ে কাজ করানো হয়। এই ইমেজটা কাটাতে হবে। কারণ ইউরোপিয়ান মার্কেটের কনজিউমাররা সেন্সিটিভ। তারা অনেকসময় বলে যে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ দেখলে পণ্য কিনো না,” বলছিলেন জাহিদ হোসেন।

“বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সাপ্লাইয়ে অনেক সমস্যা। ডেলিভারি ঠিকমতো দিচ্ছে কিনা, নির্ভর করছে ফ্যাক্টরি ঠিকভাবে চলছে কিনা, তার ওপর।

“শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রাখলে ফ্যাক্টরি চলবে না এবং শ্রমিক অসন্তোষের সুযোগ অনেকেই নেয়। কারণ, বাংলাদেশকে অস্থির করতে পারলে বায়াররা বাংলাদেশ থেকে অন্য কোথাও চলে যাবে,” যোগ করেন এই অর্থনীতিবিদ।

যদিও তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, জাতীয় কাঠামো অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর মজুরি বাড়ানো হয়।

তিনি উল্লেখ করেন, এখানে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট ট্যারিফ’ রয়েছে। অর্থাৎ, কোনো দেশ যখন অন্য দেশ থেকে কাঁচামাল এনে তার নিজের দেশে পণ্য উৎপাদন করে মার্কিন বাজারে রপ্তানি করে, তাহলে সেগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৪০ শতাংশ ট্রান্সশিপমেন্ট ট্যারিফ আরোপ করবে।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এই বিষয়টিতে জোর দেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অনেক পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল চীন থেকে আসে। কিন্তু চীন থেকে পণ্য আমদানি করতে হলে ৩৫ শতাংশের পাশাপাশি ওই ট্রান্সশিপমেন্ট ট্যারিফও বাংলাদেশকে দিতে হবে।”

“ট্রান্সশিপমেন্ট ট্যারিফ আরোপ হলে প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় চাপ পড়বে,” মত তার।

কোথায় ছাড় দিলো বাংলাদেশ?

নতুন এই শুল্ক নীতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই বলেছেন, যারা আমেরিকান পণ্যের ওপর অসম শুল্ক আরোপ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রও তাদের ওপর এই পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে। অর্থাৎ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোই তার মূল উদ্দেশ্য।

আর বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে গিয়েই বিভিন্ন দেশ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বা দিয়েছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রও দেশভেদে নানা রকম শর্ত দিয়েছে।

বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশটি থেকে আমদানি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যে গম ও তুলা আমদানি এবং ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

তবে চীনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তা কেনার শর্ত ছিল। এ ধরনের স্পর্শকাতর শর্তের ব্যাপারে শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কী অবস্থান নিয়েছে, চুক্তিতে কী রাখা হয়েছে- তাএখনো স্পষ্ট করা হয়নি।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলছিলেন, “অন্য দেশগুলোও এমন প্রস্তাব দিয়েছে যে, এটা আমদানি বাড়াবো, এটা কিনবো। আমরাও তাই করেছি। যদিও আমরা সব বিস্তারিত জানি না। কিন্তু সামগ্রিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো বলে মনে হয় না। কতটা লাভ হবে, সেটা প্রশ্ন।”

এদিকে, খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বিবিসিকে বলছিলেন, “ট্রেড নেগোসিয়েশনের বাইরে এখানে অন্যান্য নেগোসিয়েশনও হয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।”

“বিনিয়োগ সংক্রান্ত হতে পারে, অশুল্ক বাধা নিয়ে হতে পারে, কৌশলগত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে হতে পারে…সরকারের উচিৎ পূর্ণাঙ্গ চুক্তিটি প্রকাশ করা।

” কূটনৈতিক বিষয়গুলো এখানে একেবারেই পরিষ্কার না” জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো প্রকাশ করা প্রয়োজন।

কারণ, “বাংলাদেশের বাণিজ্য একক দেশ নির্ভর নয়। সুতরাং, চুক্তিতে বাংলাদেশের অন্যান্য বাণিজ্য অংশীজনের সাথে থাকা বাণিজ্য স্বার্থ, বিনিয়োগ স্বার্থ, ঋণ স্বার্থ বা রেমিট্যান্স সংক্রান্ত স্বার্থের বিষয়ে বড় কোনো ছাড়ের বিষয় থাকলে তা জানানো দরকার” বলেন গোলাম মোয়াজ্জেম। সূত্র : বিবিসি বাংলা

Posted ৮:৩০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ আগস্ট ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1814 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.