বাংলাদেশ অনলাইন : | শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে বিকৃত করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশের জনগণই আগামীতেও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত শিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদের নির্বাচিত চিত্রকর্ম নিয়ে ‘১৯৭৩-২০২৩ রেট্রোস্পেকটিভ’ শীর্ষক বিশেষ শিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মাসব্যাপী প্রদর্শনীতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের আঁকা প্রায় ১৪০টি নির্বাচিত শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন শিল্পীর চিত্রকলা হৃদয় দিয়ে বোঝা যায় এবং তা একইসঙ্গে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে, চেতনাকে জাগ্রত করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই চেতনায় বাংলাদেশের মানুষ জাগ্রত হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে তারা আগামীতে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্মের প্রদর্শনীকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের প্রকৃতি, দেশের জনগণের অবস্থা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জনগণ, বিশেষ করে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের সামনে তুলে ধরছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে শিল্পীর অনুভূতি জানার পাশাপাশি তার অনেক দুর্লভ চিত্রকর্ম দেখার সুযোগ পাবেন। আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
মাসব্যাপী প্রদর্শনীর সফলতা কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শাহাবুদ্দিন একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং মনে হয় তিনি এখনও একজন মুক্তিযোদ্ধা, কারণ তার শিল্পকর্ম মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা ও চেতনাকে প্রতিফলিত করে, যা আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় শাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তিনি (শাহাবুদ্দিন) তার শিল্পকর্ম ও চিত্রকর্মের মাধ্যমে সারা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ফিতা কেটে রেট্রোস্পেকটিভ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। তিনি প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত চিত্রকর্মগুলোও পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ‘শাহাবুদ্দিন, এ রেট্রোস্পেকটিভ ১৯৭৩-২০২৩’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক খলিল আহমেদ, চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুয়।
‘চিত্রকর্ম মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিল্পকর্ম মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম ও চেতনা জাগ্রত করতে পারে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদর্শ ও ইতিহাস মুছে দেওয়া হয়েছিল। তবে কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও লেখকরা তাদের রচনার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তারা সেই সময় চেতনা ধরে রেখেছিলেন। আমরা রাজনীতিবিদরা পরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছি এবং রাজনৈতিক উপায়ে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি এবং অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশ গড়ার পদক্ষেপ নিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে আসতে শুরু করেছে, যা একটি বড় অর্জন।’
এই প্রদর্শনী পরিদর্শনের মাধ্যমে জনগণের হৃদয়ে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর চিত্রশিল্পী হিসেবে শাহাবুদ্দিন আহমেদের অবদানের কথাও স্মরণ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে শাহাবুদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার অনুরাগ ও জাতির পিতার স্মৃতির কথা বর্ণনা করেন। এ সময় শিল্পী বলেন, কীভাবে বঙ্গবন্ধু তাকে স্বাধীনতার পর ফ্রান্সের প্যারিসে পাঠিয়েছিলেন, যা তার আজকের অবস্থানে পৌঁছানোর ভিত্তি তৈরি করেছিল।
Posted ৯:১১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh