বাংলাদেশ অনলাইন : | বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে মৌলিক কিছু দুর্বলতা রয়েছে। ২১ মার্চ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্লেষণ করে দেখব, এগুলোয় আদৌ আমলে নেওয়ার কোনো বিষয় আছে কি না।’
তিনি জানান, আপত্তির দিকগুলো ও দুর্বলতা সামনের দিনগুলোয় দুই দেশের মধ্যে কোনো উচ্চপর্যায়ের সফর বা বৈঠকে তুলে ধরা হবে, যাতে পরবর্তী প্রতিবেদনে তা না থাকে। মার্কিন প্রতিবেদনের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একটি বন্ধুরাষ্ট্র নিয়ে রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। আমরা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বলে থাকি, এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার আগে আমরা যাতে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারি। বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় এবং বরাবরের মতো এবারও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি। আমি মনে করি, এটি একটি বড় ধরনের দুর্বলতা।’
মার্কিন প্রতিবেদনে দুর্বলতা রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মার্কিন প্রতিবেদনে উন্মুক্ত সূত্র থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে স্ববিরোধী অবস্থান প্রকাশ পায়। তিনি বলেন, অনেক সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে, বাক্স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের প্রতিবেদনে উন্মুক্ত সূত্রের অনেক উদাহরণ আছে। এতে প্রমাণিত হয় যে খবর তৈরিতে সরকার বাধা প্রদান করে না।
প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন, মার্কিন প্রতিবেদনে কিছু দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের বরাত (রেফারেন্স) দেওয়া হয়েছে, যার অন্যতম হচ্ছে অধিকার। তিনি বলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বর্তমানে অধিকারের কাজ করার কোনো বৈধ কাগজ বা লাইসেন্স নেই।’
তিনি আরও বলেন, কোনো নাগরিক সমাজের সংগঠন বা বেসরকারি সাহায্য সংস্থা, যার একটি রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে, রাজনৈতিক পরিচয় আছে, তাদের নিরপেক্ষতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের দুর্বলতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে প্রতিবেদনের (মার্কিন) গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে যায়। ২০২১ ও ২০২২ সালের মার্কিন প্রতিবেদনের মধ্যে গুণগত কোনো তফাত নেই বলে উল্লেখ করেন শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, ‘কোথাও কোথাও আমাদের প্রশংসা করা হয়েছে এবং সে জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে বিভিন্ন জায়গায় আমরা উন্নতি করেছি, তার প্রতিফলন এই প্রতিবেদনে রয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেদনে গুমের সংখ্যা ৮১ উল্লেখ করা হয়েছে। আপনারা জানেন এ সংখ্য হবে ৭৬।’
তিনি বলেন, ৭৬–এর বিষয়ে খুব অস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ১০ জনকে চিহ্নিত করার দাবি করেছে। বিষয়টি এমনভাবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে এর কোনো সুরাহা হয়নি। কিন্তু জাতিসংঘ এই ১০ জনের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর তারা নিজেরাই যাচাই-বাছাই করেছে। ইতিমধ্যে তাদের তালিকা থেকে ১০ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র গতকাল সোমবার ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবারের প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে এ দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, ধরপাকড়; মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজ ও সরকার সমালোচকদের প্রতি হুমকি-হয়রানি-নির্যাতন; মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ; শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশে বাধাসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে বিবেচিত হয়নি। ওই নির্বাচনে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরানো, বিরোধী দলের প্রার্থীদের এজেন্ট–ভোটারদের ভয় দেখানোসহ নানা অনিয়মের খবরে পর্যবেক্ষকেরা এ ধারণা পোষণ করেন।
Posted ১:৫৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh