বাংলাদেশ অনলাইন : | মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। শতাধিক দেশে এটি ছড়িয়েছে। অন্যান্য ডেঙ্গুপ্রবণ দেশের তুলনায় রোগী শনাক্তের হার কম হলেও বাংলাদেশে এতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের অন্তত ২০টি দেশে ডেঙ্গুর টিকা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি টিকার দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা হয়েছে। তবে অর্থাভাবে হয়নি তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা। এতে ওই টিকাপ্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) আবিষ্কৃত টিভি-০০৫ (টেট্রাভেলেন্ট) এক ডোজের ডেঙ্গু টিকার প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল (মানবদেহে পরীক্ষা) হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের জন্য বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে এনআইএইচ। বাংলাদেশে এটি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে কাজ করেছে। কারিগরি সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, বিশ্বে এ পর্যন্ত কয়েক ধরনের ডেঙ্গুর টিকা উদ্ভাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ফ্রান্সের সানোফি ফার্মাসিউটিক্যালসের টিকা ডেনভেক্সিয়া এবং জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের টিকা কিউডেঙ্গা অন্যতম। তবে সানোফির টিকা তিন ডোজের। এটি ৯ বছরের কম বয়সী শিশু এবং যারা আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়নি, তাদের ওপর প্রয়োগ করা যাবে না। আর তাকেদার টিকাটি ডেঙ্গুর একটিমাত্র ধরনের ক্ষেত্রে কার্যকর। টিকাটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।
ফলে এটি বিভিন্ন দেশ থেকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে টিভি-০০৫ টিকা বেশ কার্যকর। এটি এক ডোজের এবং এতে কোনো বয়সসীমা নেই। টিকা গ্রহণকারীর আগে ডেঙ্গু হয়েছিল কি না, তাও বিবেচ্য নয় এই টিকার ক্ষেত্রে। আইসিডিডিআরবি সূত্র বলেছে, দেশে এনআইএইচের টিভি-০০৫ টিকার দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয় ২০১৬ সালে। এই পরীক্ষা চালানো হয় ১ বছর থেকে ৪৯ বছর বয়সী প্রায় ২০০ ব্যক্তির ওপর। টিকা প্রয়োগের পর তিন বছর তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
এতে দেখা যায়, ডেঙ্গুর চারটি ধরনের (ডেন-১, ২, ৩, ৪) বিরুদ্ধেই টিকাটি প্রতিরোধ তৈরি করতে সক্ষম। যাঁদের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের কেউই পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হননি। গত বছরের শেষ দিকে এই পরীক্ষার সফলতার বিষয়টি জানানো হয়। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের (তৃতীয় ট্রায়াল) জন্য পরিকল্পনা থাকলেও অর্থ সংকটের কারণে কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি আইসিডিডিআরবি। বাংলাদেশ টিভি-০০৫ টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের মুখ্য গবেষক ও আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী রাশিদুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের জন্য এই টিকা ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষের ওপর প্রয়োগ করতে হবে। এতে অন্তত ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা প্রয়োজন। তাদের ওপর টিকা প্রয়োগের পর ন্যূনতম তিন বছর পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সফল হলে তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশ গণপরিসরে টিকাটি প্রয়োগের অনুমতি দেবে। ভারত মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর টিকার পরীক্ষা করছে। বাংলাদেশে ১ বছরের শিশু থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদেরও প্রয়োগের পরিকল্পনা ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ইতিমধ্যে ব্রাজিল, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় টিকাটির তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হয়েছে।
দেশে দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের জন্য এনআইএইচ অর্থায়ন করেছিল। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ের জন্য অর্থায়নে সম্মত হয়নি। টিভি-০০৫ টিকা উৎপাদনের জন্য ভারতের দুটি টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে এনআইএইচ। তাদের মধ্যে প্যানাসিয়া বায়োটেক চূড়ান্ত ট্রায়াল শুরু করেছে। টিকার তৃতীয় পর্যায়ে খরচ ও কাজের পরিসর বড় হওয়ায় তাতে সাধারণত কোনো না কোনো ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জড়িত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার ঘাটতি এবং আগ্রহের অভাবে তারা অর্থায়ন করে না।
দেশে কোনো টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিষয় পর্যালোচনা করে সরকার গঠিত জাতীয় টিকাদান-সংক্রান্ত কারিগরি উপদেষ্টা গ্রুপ (নাইট্যাগ)। এই কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইসিডিডিআরবি তাদের কাজের সফলতা দেখিয়েছে।
Posted ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh