বাংলাদেশ অনলাইন : | রবিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শুরু হয়েছে। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য রাখছেন।
সূচনা বক্তব্য শুরুর আগে ট্রাইব্যুনালের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, আজকের দিনটি ঐতিহাসিক। পৃথিবীর ইতিহাসে শেখ হাসিনার মত কোনো স্বৈরাচারের জন্ম হয়নি। তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী স্বৈরাচার।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কোনো স্বৈরাচারকে মিথ্যার ওপর পিএইচডি করতে হলে শেখ হাসিনার কাছে শিখতে হবে। পৃথিবীর সব স্বৈরশাসকের যদি কোনো সমিতি করা হয়, শেখ হাসিনা হবেন তার সভাপতি। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে স্বৈরাচার ও তার সহযোগীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা চাই। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল পৃথিবীর কোনো স্বৈরাচারের কি পরিণতি হয়েছে, তা আদালতের সামনে তুলে ধরেন।
রোববার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ শুনানি শুরু হয়। আজকের বিচারকাজ ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহাম্মদ মোহিতুল হক।
এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য দুই আসামিরা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করার শর্তে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে, গত ১০ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে এই মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন ৩ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত। পাশাপাশি আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়।
মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।
সেদিন আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। তাদের পক্ষে ছিলেন— রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
অপর আসামি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ। এসময় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ গঠনের আগে ট্রাইব্যুনাল তাকে কথা বলার সুযোগ দেন। এসময় চৌধুরী মামুন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন।
তিনি ট্রাইব্যুনালে বলেন, জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালীন আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালীন যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই। এরপর ট্রাইব্যুনাল ৫টি অপরাধে অভিযোগ গঠন করে তিন আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ৭ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি। এর মধ্যে আবদুল্লাহ আল-মামুন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। সেদিন অভিযোগ গঠনের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের অব্যাহতির আবেদন করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
Posted ১:৫৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh