বাংলাদেশ অনলাইন : | বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
ছবি : সংগৃহীত
কয়েক দিনের ব্যবধানে তৃতীয় দফা বন্যার কবলে সিলেট বিভাগ। সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় নতুন করে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। কেননা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও মৌলভীবাজারের নদনদীতে পানি বাড়ছেই। এই সব পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। চলমান বন্যায় সিলেট বিভাগের ২০টি উপজেলার পানিবন্দি মানুষেরা দারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন গত রবিবার থেকে। বারবার বন্যার আঘাত সিলেটবাসীকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। বানভাসী মানুষেরা বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করতে করতে হয়রান। তবে গত মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
গত ৩০ জুন থেকে প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নেমে সিলেটের বিভিন্ন এলাকা ডুবিয়ে দেয়। বিশেষ করে ভারতের বরাক নদীর ঢল কুশিয়ারা অববাহিকায় বেশি সংকট সৃষ্টি করে। বরাক নদী জকিগঞ্জের অমলসিদে দুই ভাগ হয়ে এক ভাগ কুশিয়ারায়, অপর ভাগ কানাইঘাটে সুরমায় মিলিত হয়েছে। সিলেট জেলায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় ১০ লক্ষধিক মানুষ পানিবন্দি হয়। জেলার ১২ উপজেলা ও সিলেট সিটিসহ ৯৭টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়। বিভাগীয় নগরীর বিভিন্ন জায়গা ও আবাসিক এলাকার অবস্থা বড়ই করুণ। এদিকে, ত্রাণ নিতে গিয়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সুরমা নদীতে মঙ্গলবার নৌকা ডুবির ঘটনায় মা, মেয়েসহ নিখোঁজ তিন জনের এখনো খোঁজ মেলেনি।
প্লাবিত উপজেলাগুলো হচ্ছে : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট সদর ও সিটি করপোরেশনের আংশিক এলাকা। সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, জামালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর। দ্বিতীয় দফার বন্যায় সিলেট বিভাগের ২১ লক্ষাধিক লোক আক্রান্ত হয়। সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা।
মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার আবারও বন্যার কবলে পড়েছে। গেল তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও চলমান বৃষ্টিতে জেলার নদী ও হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফের বন্যার কবলে পড়েছে জেলার নদী ও হাওর তীরের কয়েক লাখ মানুষ। জেলার সবকয়টি হাওর আবারও পানিতে টইটুম্বর হয়ে নতুন করে তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় আবারও বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়াও রাজনগর উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার রূপ নিয়েছে। দুই সপ্তাহের অধিক সময় থেকে পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে কুলাউড়া পৌরসাভার পাঁচটি ওয়ার্ড, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ, জুড়ী উপজেলা পরিষদসহ ঐসব এলাকার বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বুধবার কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে ১৭ সে. মি., মনুনদীর পানি শহরের চাঁদনীঘাট এলাকায় ২৬ সে. মি. ও জুড়ী নদীর পানি বিপত্সীমার ১৮৪ সে. মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীর পানি বিপত্সীমার ১ সে. মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের কারণে কুশিয়ারা, জুড়ী, ফানাই ও আন ফানাই নদী দিয়ে ঢল নেমে বন্যার পানি বৃদ্ধি পায়। সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় এসব এলাকার পানিবন্দি সাধারণ মানুষ এখন চরম ভোগান্তি পড়েছেন। বন্যার কারণে যারা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন তাদের বাড়ি ফেরা অনেকটা অনিশ্চিত রয়েছে। সরকারি হিসেবে ৪ লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছেন। দীর্ঘদিন বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে থাকায় সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় স্যানিটেশন, শিশুখাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে।
গত ৩ জুন সকালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনা এলাকায় কুশিয়ারার পানি উপচে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জনপদে প্রবেশ করেছে। এ এলাকায় কুশিয়ারার স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নেই। গ্রামীণ সড়কটিই প্রতিরক্ষা বাঁধ হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আসছে। বাঁধের ১৫ থেকে ২০ ফুট জায়গা ভেঙে গেছে।
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সেই সঙ্গে ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়া পৌর শহরের রাস্তাঘাট থেকেও পানি নেমে গেছে। তবে এখনো পানিতে তলিয়ে আছে নিম্নাাঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক ও কিছু ঘরবাড়ি। সেই সঙ্গে দুর্গাপুর, শক্তিয়ারখলা সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গত চার দিন ধরে জেলা শহরের সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে, এমনকি দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সুরমা, লক্ষ্মীপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের। এতে পানি কমলেও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ২ লক্ষাধিকের বেশি মানুষ বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো আতঙ্ক কমেনি হাওর অঞ্চলের মানুষদের।
Posted ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh