বাংলাদেশ অনলাইন : | রবিবার, ১৯ জুন ২০২২
সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে সিলেট জেলার ৩০ লাখ ও সুনামগঞ্জ জেলার ২০ লাখ লোক কঠিন সময় পার করছেন। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় সিলেট রেলস্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর বিদ্যুৎ না থাকায় বন্যার পানিতে ডুবে থাকা সুনামগঞ্জ এখনো অন্ধকারে রয়েছে।
এদিকে পানি প্রবেশ করায় ১৮ জুন (শনিবার) বেলা ১১টার দিকে কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটি নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে সিলেটে বিদ্যুত্সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও পানি নিষ্কাশন করে উপকেন্দ্রটি চালু করা হলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিলেটের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। বানভাসি এলাকাগুলোতে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও জ্বালানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবির উদ্ধার তত্পরতা চলছে।
সিলেট থেকে হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী জানান, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে সিলেট জেলার ৩০ লাখ ও সুনামগঞ্জ জেলার ২০ লাখ লোক কঠিন সময় পার করছেন। আশির ঊর্ধ্ব অনেকেই বলছেন, তারা ইতিপূর্বে এমন বন্যা দেখেননি। বন্যার পানি ক্রমেই বাড়ছে। সারা দিন অন্ধকার হয়ে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। কাঁচাবাজারসহ নিত্যপণ্যের দোকানে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় মালামাল নষ্ট হচ্ছে। বিভাগীয় শহরের জিন্দাবাজারে অনেক শপিংমলে পানি ঢুকেছে। ওসমানী হাসপাতালেও পানি ঢুকেছে। চারদিকে বন্যার্তদের আহাজারি চলছে। মসজিদে মসজিদে দোয়া চলছে। বহু মসজিদে পানি ঢুকেছে। এদিকে বন্যার্তদের উদ্ধার ও সহযোগিতায় প্রশাসনের সাথে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী কাজ করছে। বন্যাকবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জের ২৪টি উপজেলায় এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, মোমবাতি, দিয়াশলাই, টর্চ, ছাতা, লাইফ জ্যাকেট, নগদ টাকা। আর উদ্ধার কাজ চালানোর জন্য দরকার নৌকা।
সিলেটের সবগুলো উপজেলাই বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান সন্ধ্যায় ইত্তেফাককে বলেন, এ পর্যন্ত সিলেটের বন্যার্তদের জন্য ৬১২ টন চাল, ৪২ লাখ টাকা ও ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, অনেক এলাকায় নৌযানের অভাবে পানিবন্দি লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে পারছে না। তাদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী মাঠে নেমেছে। তারা কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে কাজ করেছন। তিনি জানান, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী মিলে হাজার খানেক লোককে দুর্গম এলাকা থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এখন ফাঁকা নেই। বেশির ভাগই তলিয়ে গেছে। বাকিগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে নগরের বাইরের প্রায় সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
গত ১৬ জুন থেকে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি চলছে। প্রবল বর্ষণ ও ঢলের চাপে সিলেটে মানবিক বিপর্যয় চলছে। অন্যদিকে শনিবার থেকে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় বন্যা বিস্তৃতি লাভ করছে। সিলেটের অনেক স্থানে সড়ক যোগাযোগ সরাসরি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া পানি উঠায় সিলেট রেলস্টেশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এখন মাইজগাঁও থেকে ট্রেন চলাচল করছে। এর আগে রানওয়েতে পানি প্রবেশ করায় শুক্রবার থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের বিমান উঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে সিলেট নগর ও জেলার সবকয়টি উপজেলায় পানি ঢুকে পড়েছে। সিলেটে শহরের উঁচু স্থানও প্লাবিত হচ্ছে। সিলেট ওসমানী হাসপাতালের নিচ তলায় হু-হু করে পানি ঢুকতে দেখা যায় গতকাল দুপুরে। জরুরি বিভাগ, বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানি প্রবেশ করে। অনেক রোগী হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। শহরের বিভিন্ন ছড়া ও খাল দিয়ে পানি ঢুকছে। সুরমা তীরবর্তী আবাসিক এলাকা উপশহর, সোবহানীঘাট, তেররতন, শেখঘাট, নবাব রোড, কুশিঘাট, তালতলা, কাজীরবাজার, শিবগঞ্জ, খরাদিপাড়া, তপোবন আবসিক এলাকা, আখালিয়া মাড়িয়ে পানি এখন মূল শহরের জিন্দাবাজারে পৌঁছেছে।
Posted ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৯ জুন ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh