বাংলাদেশ অনলাইন : | শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল ও কঠিন হয়ে উঠছে। দেশটির হোম অফিসের কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে যুক্তরাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বিষয়টি কেবল ভর্তি বন্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটিকে লন্ডন ও ঢাকার শিক্ষা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো দেখছে বিশ্বাসভঙ্গের চরম মাশুল হিসেবে।
ভিসা জটিলতা, মিথ্যা তথ্যে আশ্রয় প্রার্থনা এবং পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজের সন্ধানে নেমে পড়ার মতো উদ্বেগজনক প্রবণতা—এই তিন কারণে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চ ঝুঁকির তালিকাভুক্ত করছে।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (হোম অফিস) নতুন ‘বেসিক কমপ্লায়েন্স অ্যাসেসমেন্ট’ (বিসিএ) নীতিমালার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ও রয়টার্স সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া এই নীতিতে বলা হয়েছে, কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্পনসর করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিসা বাতিলের হার যদি ৫ শতাংশের বেশি হয়, তবে সেই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। এর আগে এই সীমা ছিল ১০ শতাংশ।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর বাংলাদেশ থেকে আবেদনকৃত শিক্ষার্থী ভিসার প্রায় ২২ শতাংশই বাতিল হয়েছে। এই উচ্চ প্রত্যাখ্যান হারের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের লাইসেন্স বাঁচাতে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ থেকে আবেদন গ্রহণ বন্ধ রাখছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তাদের কোর্স শেষ করছেন না। উল্টো তারা স্টুডেন্ট ভিসা পরিবর্তন করে ‘কেয়ার ওয়ার্কার’ ভিসায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন অথবা রাজনৈতিক আশ্রয়ের (অ্যাসাইলাম) আবেদন করছেন।
যুক্তরাজ্যের সীমান্ত নিরাপত্তামন্ত্রী ডেম অ্যাঞ্জেলা ইগল সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, ব্রিটেনে স্থায়ী হওয়ার জন্য স্টুডেন্ট ভিসাকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। মূলত, পড়াশোনার নাম করে ব্রিটেনে ঢুকে আশ্রয়ের আবেদন করার প্রবণতা বাড়ার কারণেই এই কঠোরতা। গত বছর বাতিল হওয়া ২৩ হাজার ৩৬টি ভিসা আবেদনের অর্ধেকই ছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিকদের।
যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কঠোর অবস্থানে
একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে অথবা অঘোষিতভাবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অফার লেটার বা সিএএস দেওয়া বন্ধ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ভিসা বাতিলের হার বাড়ায় ইউনিভার্সিটি অব চেস্টার আগামী বছরের শরৎকাল (অটোমন) পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে ভর্তি স্থগিত করেছে এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তারা কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে, ইউনিভার্সিটি অব উলভারহ্যাম্পটন ও হার্টফোর্ডশায়ার বাংলাদেশ থেকে স্নাতক পর্যায়ে সরাসরি আবেদন নেওয়া বন্ধ রেখেছে।
উল্লেখ্য, লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি তাদের মোট ভিসা বাতিলের ৬০ শতাংশই বাংলাদেশি হওয়ায় তারা কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া সান্ডারল্যান্ড ইউনিভার্সিটি, অক্সফোর্ড ব্রুকস, টিসাইড ইউনিভার্সিটি এবং বিপিপি ইউনিভার্সিটিও একই পথে হাঁটছে বলে জানা গেছে।
যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রয়েছে নিজস্ব অর্থনৈতিক সংকট। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দেওয়া উচ্চ ফি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিকভাবে লাভবান হতে চাইলেও হোম অফিসের লাইসেন্স বাতিলের ভীতি তাদের হাত-পা বেঁধে রেখেছে। এটি যুক্তরাজ্যের অভিবাসন কমানোর রাজনৈতিক এজেন্ডারই অংশ। ঋষি সুনাকের সরকারের সময় নেওয়া কঠোর নীতির ধারাবাহিকতা বর্তমান লেবার সরকারও বজায় রাখছে। বিশেষ করে নেট মাইগ্রেশন বা মোট অভিবাসন সংখ্যা কমানোর চাপে।
যারা সত্যিকার অর্থেই পড়াশোনা করতে যুক্তরাজ্যে যেতে চান, তারা এখন সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছেন। শিক্ষা পরামর্শক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রে পরামর্শ দিচ্ছেন যেন শিক্ষার্থীরা ব্যাংক সলভেন্সি বা শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনও কাগজপত্রে বিন্দুমাত্র অসততা প্রদর্শন না করেন অর্থাৎ সঠিক তথ্য প্রদান করেন। একই সঙ্গে, তাদের উচিত হবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং তুলনামূলক ভালো এবং যারা এখনও আবেদন নিচ্ছে (যেমন রাসেল গ্রুপভুক্ত ইউনিভার্সিটি), সেগুলোকে বাছাই করে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করা।
Posted ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh