বাংলাদেশ অনলাইন : | রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও বিমানযাত্রার মতো নয়। সে জন্যই উন্নত চিকিৎসায় তাঁর বিদেশযাত্রা বিলম্ব হচ্ছে। লন্ডনে চিকিৎসা নিতে যাওয়া-না যাওয়া এখন সম্পূর্ণই নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির ওপর। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলেই তাঁকে লন্ডনে নেওয়া হবে।
এদিকে, খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য কাতার সরকারের ব্যবস্থা করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি মঙ্গলবার ঢাকায় আসার অনুমতি চেয়েছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থাসহ সবকিছু ঠিক থাকলে পরদিন বুধবার তাঁকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ভ্রমণ করার মতো অবস্থা হয়নি। এটি কবে হবে– এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে বোর্ড আশাবাদী, তিনি উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ যেতে পারবেন। তাঁকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয় প্রতিদিন। মাঝেমধ্যে কথা বলার চেষ্টা করেন।
ওই চিকিৎসক বলেন, শনিবারও তাঁর বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট নিয়ে মেডিকেল বোর্ড পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে রাতে বৈঠক করে। প্যারামিটারগুলো কিছুটা ওপরে উঠছে। তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান দুইবার করে হাসপাতালে আসছেন। তিনিও মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন।’
খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার বলেন, ‘আমি সার্বক্ষণিক হাসপাতালে আছি। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ব্রিফ করেছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) সিসিইউতে মোটামুটি আছেন।’
বিএনপির চেয়ারপারসনকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য কাতার সরকারের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি মঙ্গলবার ঢাকায় আসার অনুমতি চেয়েছে। অনুমতি পেলে পরদিন ১০ ডিসেম্বর তাঁকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করবে।
এদিকে, খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ফ্লাইটটি ‘ভিভিআইপি’ উল্লেখ করে শিডিউল অনুমোদন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ফ্লাইট অবতরণের ক্লিয়ারেন্সও দিয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, জার্মান অ্যাভিয়েশন কোম্পানি এফএআই অ্যাভিয়েশন গ্রুপ আজ (শনিবার) তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অবতরণ ও ১০ ডিসেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার জন্য ফ্লাইট শিডিউল চেয়ে আবেদন করেছে।
বেবিচক জানায়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য জার্মানির এফএআই অ্যাভিয়েশন গ্রুপ থেকে এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছে কাতার সরকার। এটি দীর্ঘ দূরত্বের মেডিকেল ইভাকুয়েশন ফ্লাইটে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং জার্মানির শীর্ষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ও মিশন-ক্রিটিক্যাল অ্যাভিয়েশন সেবাদাতাদের দ্বারা পরিচালিত। এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স তার শক্তিশালী ট্রান্সকন্টিনেন্টাল সক্ষমতার জন্য পরিচিত, যা ঢাকা-লন্ডন মেডিকেল ট্রান্সফারের উপযোগী।
এর আগে সন্ধ্যায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি চেয়ারপারসনকে শনিবার সকালে হাসপাতালে দেখে এসেছি। তিনি সাড়া দিচ্ছেন। আশা করি, সবার দোয়ায় তিনি সেরে উঠবেন এবং উন্নত চিকিৎসায় লন্ডনে যাবেন।’
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাহিদ হোসেন। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া-না যাওয়া এখন সম্পূর্ণই নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির ওপর।
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডা. জাহিদ বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়ার জন্য কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আসতে পারেনি। তবে একটি মেডিকেল অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ড মনে করছে, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তাঁর বর্তমান শারীরিক সক্ষমতাকে। মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এ মুহূর্তে তাঁর ফ্লাই করা সঠিক হবে না।’
দীর্ঘ সময় বিমান ভ্রমণের জন্য শারীরিক সক্ষমতা না থাকায় খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রায় বিলম্ব হওয়ার কথা জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। ব্রিফিংয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত আছে। প্রস্তুত থাকলেও খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিরাপত্তা প্রাধান্য পাচ্ছে। আমাদের মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে আসা চিকিৎসকরা তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁর স্বাস্থ্য আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সে জন্য আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চিকিৎসকদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। দলও সে অনুযায়ী অধিকার দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা যখন বিমানে ফ্লাই করবেন, তখন অতি উচ্চতায় মানুষের শারীরিক যে পরিবর্তন হয়, সেটির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো একজন অসুস্থ মানুষের পক্ষে সব সময় সম্ভব হয় না। এ জিনিসটি খেয়াল রেখে আপনারা দয়া করে বিভ্রান্ত হবেন না; দয়া করে কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করবেন না।’
গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসা দিচ্ছে। এই মেডিকেল বোর্ডে তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমানও সদস্য হিসেবে রয়েছেন। তিনি লন্ডন থেকে শুক্রবার ঢাকায় নেমেই শাশুড়িকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান।
গতকাল বিকেল সোয়া ৩টার পরে ধানমন্ডির বাবার বাড়ি থেকে জোবাইদা রহমান এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বলে জানান বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন। তিনি সার্বক্ষণিক বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা দেখভাল করছেন।
Posted ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh