বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১
কুইন্সের এক ক্ষুদ্র বাড়ি মালিকের জন্য বাড়ির মালিকানা পরিণত হয়েছে এক দু:স্বপ্নে। কানেকটিকাটের এক হাসপাতালে এক চিকিৎসকের সহকারী ভেনি মঙ্গল, যিনি করোনা মহামারীর অন্ধকার দিনগুলোতে অসহায় মানুষের সেবায় কাজ করেছেন; কিন্তু কাজ শেষে যখন কুইন্সের ওজোন পার্কে তার বাড়িতে ফিরেছেন স্বস্থি লাভের আশায়। কিন্তু তিনি বাড়ি ফিরে বরং আরো অস্বস্থির মধ্যে কাটান। বাড়িটি তার ৭০ বছর বয়স্কা মায়ের এবং দেখাশোনা করেন ভেনি মঙ্গল। তিন ইউনিটের বাড়ির বেসমেন্ট ও প্রথম তলা ভাড়া দিয়েছেন। পনের মাস যাবত ভাড়া পরিশোধ করেনি ভাড়াটিয়ারা। তার উপর তারা বাড়ি মালিকের উপর হম্বিতম্বি করেন। ফলে অপরিশোধিত ভাড়ার পরিমাণ বেড়ে চলেছে এবং উদ্ধত ভাড়াটিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বও বেড়ে চলেছে। ভাড়া পরিশোধ না করলে হাউজিং আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার বিধান থাকলেও মহামারীর কারণে ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের উপর ফেডারেল সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের কোন প্রক্রিয়া শুরু করাও সম্ভব হয়নি তার পক্সে।
প্রথম তলার ভাড়াটিয়া দম্পতি রোজানা বাসগিথ ও ফিল গারনেট ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ভেনি মঙ্গলের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে আসেন। গত বছরের মার্চ মাস থেকে তারা ভাড়া প্রদান করা বন্ধ করেন। বর্তমানে এই দম্পতির কাছে ভেনির পাওনার পরিমাণ ২৪ হাজার ডলার। এছাড়া অপরিশোধিত গ্যাসবিলের পরিমাণ ১,৭০০ ডলার। হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীদের প্রতি তার সেবার কর্তব্য পালন শেষে ক্লান্ত অবসন্ন ভেনি মঙ্গল বাড়ি ফিরে রাত কাটান। ভাড়াটিয়া এসে বেল টিপে, দরজা খুললে চিঠি, প্যাকেট লুকিয়ে রাখার অভিযোগ করে। কখনো চিৎকার ও গালিগালাজ করে। রাতে নিরুদ্বিগ্ন নিদ্রাও হারাম হয়ে যায়।
বেসমেন্টে ভাড়া নিয়েছেন এক মা ও মেয়ে। ২০১৬ সালে তারা এই বাড়িতে এসেছেন এবং করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর ভাড়া পরিশোধ করা বন্ধ করেছেন। সিকিউরিটি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় ভাড়াটিয়া অনিকা মহাবীর ভেনি মঙ্গলের গাড়ির দরজায় চাবি ঢুকিয়ে খোলার চেষ্টা করছে এবং বাড়ি মালিকের নামে আসা প্যাকেট গার্বেজ বিনের কাজে ফেলে রেখেছে। এই ভাড়াটিয়া মা ও মেয়েখে অবশেষে গত ডিসেম্বর মাসে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়। কিন্তু তারা তাদের কাছে পাওনা ৯,০০০ ডলার পরিশোধ করেনি।
এহামারীর কারণে ফেডারেল সরকারের দেয়া মরাটরিয়াম না থাকলে ভেনি মঙ্গলের পক্ষে আদালতে অভিযোগ করে সহজে উদ্ধত ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ করা সম্ভব হতো। কিন্তু চলতি জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত ফেডারেল ও ৩১ আগস্ট পর্যন্ত স্টেট মরাটরিয়াম বহাল থাকায় তিনি ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। মঙ্গল ইতোমধ্যে বাড়িমালিকদের একটি গ্রুপের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন, যেসব ক্ষুদ্র বাড়ি মালিক ভেনি মঙ্গলের মত একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। তারা বাড়ি ভাড়াও পাচ্ছেন না, আবার উচ্ছেদ করার জন্য আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারছেন না মরাটরিয়ামের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
ভেনি মঙ্গল গত ডিসেম্বরে প্রথম তলার ভাড়াটিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলাটি করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে দায়েরকৃত ৫৯ হাজার উচ্ছেদ মামলার মধ্যে আটকে আছে। এসব মামলা নিস্পত্তি হতে বহু বছর সময় লেগে যেতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে। সরকার ভাড়াটিয়াদের জন্য যে তহবিল বরাদ্দ করেছে, তাতে ভেনি মঙ্গল ভাড়াটিয়ার অপরিশোধ ৩৬ হাজার ডলার পেতে পারেন। কিন্তু এই আইনের বিধান অনুযায়ী অপরিশোধিত ভাড়া পাওয়ার পর বাড়ি মালিককে উক্ত ভাড়াটিয়াকে আরো একবছর বাড়িতে থাকতে দিতে হবে, যা ভেনি মঙ্গল চান না। কারণ এই ভাড়াটিয়া সম্পতির দ্বারা তিনি নানাভাবে নিপীড়িত ও নিগৃহীত হয়েছেন।
ভেনি মঙ্গল সম্পতি একটি নোটিশ পেয়েছেন যে ভাড়াটিয়া ফেডারেল ইমার্জেন্সি রেন্টাল রিলিফেওে জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু এখ নপর্যন্ত তিনি কোনো অর্থ পাননি। বাড়ি ভাড়া না পেয়ে ভেনি মঙ্গলকে যে আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়তে হয়েছে, বিশেষ করে বাড়ির মর্টগেজ পরিশোধ করার জন্য তাকে সিটির ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্রে ১৩ ঘন্টার শিফটে দ্বিতীয় একটি চাকুরি নিতে হয়েছে।
Posted ১২:০৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh