বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
থ্যাংকস গিভিং ডে আজ ২৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার। পৃথিবীর প্রতিটি সমাজ, সম্প্রদায় ও সংস্কৃতিতে ফসল উৎপাদনের আনন্দে নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী তাদের সৃষ্টিকর্তা, ইশ্বর বা দেবতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর যে রীতি পালন করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রেও অনুরূপ রীতি পালন শুরু হয় প্রায় চারশ বছর আগে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম দিকে আগত অভিবাসীরা ম্যাসাচুচেটস এলাকায় এ উৎসবের সুচনা করেছিলেন বলে জানা যায়। এখন এর দিবসটি জাতীয় ছুটি এবং ঘটা করে পালন করা হচ্ছে। অভিবাসী বাংলাদেশীরাও এখন পরিবারে টার্কি রোস্ট সহ ভিন্ন ধাঁচের খাবার আয়োজন করে থ্যাঙ্কস গিভিং ডে-তে। এবার দিবসটি সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী ৫কোটিরও অধিক মানুষ বেড়াতে বের হচ্ছে। এ ইতিহাস অনুযায়ী ১৬২০ সালে শতাধিক ব্যক্তি একটি জাহাজযোগে আটলান্টিক সাগর পাড়ি দিয়ে নতুন বিশ্বে আসে বসতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে। তাদের মধ্যে ধর্মীয় গ্রুপটি চার্চ অফ ইংল্যান্ডের উপর আস্থার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে এবং তা থেকে নিজেদের পৃথক করতে চায়। তারা বর্তমান ম্যাসাচুচেটস এ বসতি স্থাপন করেন। নতুন স্থানে তাদের প্রথম শীতকাল ছিল অত্যন্ত দুর্ভোগপূর্ণ। শীতের প্রারম্ভে পৌছেছিল বলে তারা কোন ফসল ফলাতে পারেনি, যে কারণে খাদ্যাভাব ও রোগব্যাধিতে প্রায় অর্ধেক লোক মারা যায়। পরবর্তী বসন্তে আদিবাসী আমেরিকান ইন্ডিয়ানরা তাদেরকে ভূট্টা ফলাতে শেখায়।
১৬২১ সালের হেমন্তে তারা প্রচুর পরিমাণে ভূট্টা, বার্লি, বীন, মিষ্টি কুমড়া ফলায়। তারা ইশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি একটি ভোজের আয়োজন করে, যেখানে তারা আমন্ত্রণ জানায় স্থানীয় আমেরিকান ইন্ডিয়ানদেরকে। ইন্ডিয়ানরা টার্কি, হরিণ ও অন্যান্য বুনো জন্তু নিয়ে আসে সেগুলো নবাগতদের রোস্ট করে খাওয়ানোর জন্য। তারা আদিবাসীদের কাছে তাদের রন্ধনপ্রণালী শিখে। পরবর্তী বছরগুলোতেও বসতি স্থাপনকারীরা শরতের ফসল উৎপাদনের পর ধন্যবাদসূচক ভোজের আয়োজন করে। প্রথম আনুষ্ঠানিক থ্যাংকস গিভিং ডে পালন করা হয় ১৬৩০ সালে, বার্ষিক উৎসব হিসেবে যার ধারাবাহিকতা চলে ১৬৮০ সাল পর্যন্ত। সপ্তদশ শতাব্দী জুড়ে আরো বসতি স্থাপিত হয় বিশাল উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে এবং সকল স্থানে থ্যাংকস গিভিং ডে উৎসব হিসেবে পালিত হতে থাকে। এই দিনটিতে যে শুধু ভোজের ব্যবস্থা থাকতো তা নয়, বরং প্রার্থনা ও উপবাস ব্রত পালনও এর সাথে যুক্ত ছিল। ১৭৭৭ সালে প্রথম কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসে দিবসটি সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্নপ্রকাশ করার পর বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে সমগ্র দেশে থ্যাংকসগিভিং উৎসব পালনের সুপারিশ করলে জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৮৯ সালে পরামর্শ দেন ২৬ নভেম্বর দিনটি পালন করতে। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর এরপর ১৮৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন আমেরিকানদের প্রতি আহবান জানান নভেম্বর মাসের শেষ বৃহস্পতিবারকে থ্যাংকস গিভিং ডে হিসেবে উদযাপনের জন্য নির্দিষ্ট করতে। তখন থেকে ১৯৩৯ সালে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট দিবসটি এক সপ্তাহ এগিয়ে আনেন। তার উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসাকে চাঙ্গা করার জন্য ক্রিসমাসের পূর্বে কেনাকাটার সময়কে দীর্ঘ করা। ১৯৪১ সালের পর কংগ্রেস স্থির করে যে নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার হবে প্রেসিডেন্ট ঘোষিত ফেডারেল ছুটি। তখন থেকে এই দিনে থ্যাংকসগিভিং ডে একটি নির্দিষ্ট দিনে উদযাপিত হয়ে আসছে।
মেসিস’র বর্ণাঢ্য বেলুন প্যারেড ২৮ নভেম্বর
নিউইয়র্ক : নভেম্বর মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ‘থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’ পালন উপলক্ষে আমেরিকার সর্বত্র এখন বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। তবে এই উৎসব আরো বণার্ঢ্য হয়ে উঠে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের ব্রডওয়েতে মেসিস’র ব্যক্তিক্রমধর্মী বেলুন প্যারেড এর মধ্য দিয়ে। এই প্যারেড দেখার জন্য কয়েক মিলিয়ন মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। আমেরিকার অন্য শহর এমনকি অন্য দেশ থেকেও অনেকেই আসেন এই প্যারেড উপভোগ করার জন্য। ৯২ বছর আগে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ফ্লাগশীপ স্টোর মেসিস’ এই প্যারেডের আয়োজন শুরু করে। এবার অনুষ্ঠিত হবে ৯৩তম প্যারেড। মেসিস’র প্যারেডের বিশেষত্ব হলো আমেরিকার মুভি ও টিভিতে যেসব কার্টুন চরিত্র দেখে এদেশের শিশুরা বেড়ে ওঠে, সেইসব কার্টুন চরিত্রগুলোকে বিশালকৃতির বেলুন তৈরি করে হিলিয়াম গ্যাস ভরে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া। এর সাথে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফ্লোট। এবছরের এই প্যারেডে নতুন সংযোজিত হবে এ্যাস্ট্রোনট সাজে স্নুপি, গ্রিন এগস এন্ড হ্যাম, স্মোকি বিয়ার, স্পঞ্জ বব। এছাড়াও থাকবে ডাইরি অব আ উইমপি কিড, ডিনো, দ্য এলফ অন দ্য শেলফ, ড. স্যুস দ্য গ্রিঞ্চ, গোকু, জেট বাই সুপার উইং, ওলাফ প পেট্রোল, পিকাচু, ফিলসবারি ডোবয়, পাওয়ার রেঞ্জার্স ইত্যাদি। থাকবে দুই ডজন ফ্লোট। থাকবে এক ডজন মার্র্চিং ব্যান্ডও।
উল্লেখ্য ১৯২৪ সালে নিউজার্সির ন্যুয়ার্কে শিশুদের প্যারেডের মধ্য দিয়ে থ্যাংকসগিভিং ডে প্যারেড শুরু হয়। তখন এর আয়োজক ছিল ব্যামবার্গার স্টোর। ব্যামবার্গার স্টোরটি পরে মেসি’স নামে আসে। তারাই এই প্যারেডের আয়োজন করে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় প্যারেড শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে। প্যারেড সরাসরি সম্প্রচার করবে এনবিসি টিভি চ্যানেল। সঞ্চালক থাকবেন টুডে শো’র সাভানাহ গুথরি, হোডা কাটবি ও আল রোকার।
শুক্রবার ব্ল্যাক ফ্রাইডে : প্রতি বছর থ্যাংকস গিভিং ডের পরের দিন শুক্রবারকে ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ হিসেবে উদযাপন করে আমেরিকানরা। ব্ল্যাক ফ্রাইডে আমেরিকার জনগণের কাছে বহু আকাঙ্খিত একটি দিন। এই দিনে আমেরিকার প্রায় সব ব্যবসায়ী তাদের পণ্য অস্বাভাবিক ডিসকাউন্ট মূল্যে বিক্রি করে। ফলে আমেরিকায় সারা বছর যে পরিমাণ বেচা-কেনা হয় তার প্রায় অর্ধেক পরিমাণ হয় শুধুমাত্র এই একটি দিনেই। এই একদিনে আমেরিকার অর্থনীতির সূচক এক লাফে অনেকখানি সামনে এগিয়ে যায়। ব্ল্যাক ফ্রাইডের সূচনা হয় ১৮৬৮ সালে আমেরিকার এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার ভেতর দিয়ে। অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উত্তরণের জন্য একটি পন্থা অবলম্বনের কথা চিন্তা করেন ব্যবসায়ীরা। একটি নির্দিষ্ট দিনে অবিশ্বাস্য অংকের মূল্য ছাড়ের ঘোষণা করবে জনগণের জন্য। ফলে সেদিন মানুষ পাগলের মতো কেনাকাটা করবে। ব্যবসায়ীদের এই প্রক্রিয়া বেশ ফলপ্রসূও হয়। প্রতিবছর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে দোকান খুলে মূল্যছাড়ে বিক্রি হবে আগের দিন বিকেল থেকেই দোকানের সামনে লাইন দেয় ছোট বড় সবাই। সেই সব লাইন বিশাল লম্বা হয়। ১৮৬৯ সালে চালু হওয়া এই ব্ল্যাক ফ্রাইডে এখনও চালু আছে। এই বেচাকেনা এখন শুধু দোকানেই সীমাবদ্ধ নয় অনলাইনেও হবে বেচাকেনা।
Posted ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh