বাংলাদেশ অনলাইন : | রবিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২২
রাশিয়ার হামলা থেকে জীবন বাঁচাতে ১২৫ কিলোমিটার হেঁটে চার সন্তান নিয়ে ইউক্রেনের মারিউপোল থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন এক দম্পতি। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই নিজেদের বাঙ্কারে বন্দি করেছিলেন ইয়েভগেনের পরিবার। শুধু খাবার আনতে বাইরে বেরোতেন। খবর : এএফপির
কতটা পথ পেরোলে সন্তানদের সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ দিতে পারবেন— এ চিন্তায় ঘুম উড়েছিল মধ্যবয়সি ইউক্রেনীয় দম্পতির। একদিকে প্রিয় শহর মারিউপোল রুশ হামলায় প্রতিদিন ছিন্নবচ্ছিন্ন হয়ে চলেছে। আর নিজেদের অ্যাপার্টমেন্টের বাঙ্কারে বসে ইয়েভগেন টিশচেঙ্কো এবং তার স্ত্রী টেটিয়ানা ভেবে চলেছেন, কী করে এই মৃত্যুপুরী থেকে জীবন্ত বেরিয়ে সন্তানদের নিয়ে কোনো চলে যাওয়া যায়। মারিউপোলের রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা মৃতদেহ দেখাটা এই দুই মাসে প্রায় অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল ওই দম্পতির। কিন্তু গত রোববার সিদ্ধান্ত নেন মারিউপোলে আর থাকা যাবে না। পশ্চিমের কোনও শহরে চলে যেতে হবে গোটা পরিবারকে। কিন্তু যাওয়ার উপায় কী? একমাত্র রাস্তা হলো হাঁটা। ১২ থেকে ৬ বছরের চার সন্তানকে সেভাবেই বোঝান টেটিয়ানা।
তার কথায়, ওরা এটাকে অ্যাডভেঞ্চার মনে করেছিল। তাই রাজি হয়ে যায়। কিন্তু বাঙ্কার থেকে প্রথমবার বেরিয়ে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মৃতদেহের স্তূপ দেখে ওরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। টেটিয়ানা বলেন, খিদেয় মরার থেকে বোমায় মরে যাওয়া ঢের ভালো। মারিউপোলে এখন আর খাবার মিলছে না। তাই ওই শহর আমাদের ছাড়তেই হতো। রোববার সকাল হতে না হতেই গোটা সংসারটাকে পিঠে বেঁধে বেরিয়ে পড়েন ছজন মিলে। একটা ভাঙাচোরা ট্রলি জোগাড় করেছিলেন ইয়েভগেন। তাতে মালপত্রগুলো রাখা হয়। একদম ছোট মেয়েকে বসিয়েছিলেন ট্রাইসাইকেলে।
গোটা রাস্তা ট্রলি ঠেলেছেন ইয়েভগেন। আর সাইকেল ঠেলেছেন তার স্ত্রী। টানা পাঁচ দিন চার রাত হেঁটে ১২৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে পরিবারটি। মাঝপথে কোনো বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন রাতটুকু। সেখানে প্রতিটি পরিবার তাদের ভালো খাবার খাইয়েছে বলে জানান ইয়েভগেন। গত শুক্রবার জাপোরিঝিয়া শহরে পৌঁছায় ইয়েভগেন ও তার পরিবার।
১২৫ কিলোমিটার হাঁটার পরে এক আনাজ বিক্রেতা নিজের ট্রেলারে পরিবারটিকে জাপোরিঝিয়ায় পৌঁছে দেন। সেখান থেকে ভিড় ট্রেনে গাদাগাদি করে লিভিভে। তবে লিভিভে পাকাপাকি ভাবে থাকবেন না তারা। ইয়েভগেনদের গন্তব্য ইভানো-ফ্রাঙ্কিভিস্ক শহর। বছর সাইত্রিশের ইয়েভগেন জানালেন সেখানে পৌঁছে প্রথম কাজ হবে একটা চাকরি জোগাড় করা। তার স্ত্রী আপাতত ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করবেন। তাদের কোনো ভালো স্কুলে ভর্তি করার ইচ্ছে আছে ওই দম্পতির।
ইয়েভগেন জানালেন অসংখ্য রুশ চেক পয়েন্ট পেরোতে হয়েছে তাদের। তবে রুশ সেনারা তাদের সহযোগিতাই করেছে। তারা বলেছেন, মারিউপোল থেকে আসছে? তোমরা রাশিয়ার কোনো শহরে চলে যাও। ইউক্রেনে আর থাকা কেন?
তবে ইয়েভগেন জানিয়েছেন, প্রাণ বাঁচাতে প্রাণের শহর ছেড়েছেন, কিন্তু দেশ ছাড়বেন না। তাদের চার সন্তান মানুষ হবে ইউক্রেনের মাটিতে। সেই স্বপ্নই এখন দেখছেন টিশচেঙ্কো দম্পতি।
Posted ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh