| বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০২৪
ছবি : সংগৃহীত
আইএমএফের পরামর্শে গত ৮ মে ডলার দরে ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করে এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে মধ্যবর্তী দর ঠিক করা হয় ১১৭ টাকা। এরপর দ্রুত বাড়ছিল রেমিট্যান্স। তবে বাড়তে থাকা প্রবাসী আয়ে গেল মাসে ছন্দপতন হয়েছে। জুলাই মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৯০ কোটি ডলার (২২ হাজার ৪২০ কোটি টাকার সমপরিমাণ) রেমিট্যান্স এসেছে। গত ১০ মাসের মধ্যে যা সর্বনিম্ন। এর আগে গত মে মাসে ২২৫ কোটি ডলার এবং জুনে ২৫৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতির আগে গত ১৮ জুলাই পর্যন্তও রেমিট্যান্সে উচ্চমুখী প্রবাহ ছিল।
এদিকে এক মাসের ব্যবধানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ (আইএমএফের ব্যালান্স অব পেমেন্ট ম্যানুয়াল-৬ অনুযায়ী) ১৩০ কোটি ডলার কমে জুলাই শেষে ২০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
অন্যদিকে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ নেমেছে ১৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। গত জুন শেষে বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। আর নিট রিজার্ভ ছিল ১৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। এর আগে প্রতি সপ্তাহে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক। জুলাই মাসের তথ্য প্রতি সপ্তাহে না করে একবারে প্রকাশ করা হলো। এখন থেকে প্রতি মাসে একবার করে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয়ের ধারা ঠিক রাখতে অনেক ব্যাংক এখন ১১৯ টাকা ৭০ পয়সা দরে রেমিট্যান্স কিনছে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১১৮ টাকার মধ্যে রেমিট্যান্স কেনার জন্য চাপাচাপি করছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে হঠাৎ দর বৃদ্ধির পর খোলাবাজারে ডলার বেড়ে হয়েছে ১২৫ টাকা ৫০ পয়সা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর আগে গত ১৮ জুলাই ব্যাংকের রেমিট্যান্স কেনার দর ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা ছিল। আর খোলাবাজারে ডলারের দর ছিল ১২০ টাকার মতো। তবে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহে ব্যাংক বন্ধ এবং ইন্টারনেট সেবা অচল রাখায় নতুন করে রেমিট্যান্স এসেছে খুব কম। এর মধ্যে প্রবাসীদের একটি অংশ এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠাতে বিভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছে। সব মিলিয়ে ডলার বাজারে সংকট বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রেমিট্যান্স কেনায় ডলারের দর বৃদ্ধির প্রভাবে আমদানিতেও খরচ আরও বেড়ে মূল্যস্ফীতিতে চাপ বাড়বে। দুই বছর ধরে দেশের মূল্যস্ফীতি রয়েছে ১০ শতাংশের মতো। এর মধ্যে রেমিট্যান্স কমলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে বাড়তি চাপ তৈরি হবে, যা অর্থনীতির সংকট বাড়িয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও ডলারের দর বৃদ্ধির প্রধান লক্ষ্য ছিল ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ানো। গত ৮ মে একবারে সাত টাকা দর বাড়ানোর ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছিল। আগে হুন্ডিতে পাঠাতেন এমন অনেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাচ্ছিলেন। যে কারণে রেমিট্যান্স দ্রুত বাড়ছিল।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতির আগে ১৮ জুলাই পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার এসেছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আসার কথা ছিল অন্তত ২৪৫ কোটি ডলার। তিনি মনে করেন, আগে থেকে যারা ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে অভ্যস্ত, তারা হয়তো অবৈধ পথে যাবে না। তবে নতুন করে যারা হুন্ডি ছেড়ে ব্যাংকে এসেছিল, তারা আবার হুন্ডিতে গেলে দর বৃদ্ধির সুফল নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈতির হতে পারে।
Posted ১০:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh