বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১
করোনা মহামারীর বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার লক্ষে, বিশেষ করে যারা মহামারীর কারণে বিপুল অর্থনৈতিক ঘাটতির মুখে পড়েছেন এবং বাড়ি ভাড়া দেয়ার সামর্থ হারিয়ে ফেলেছেন, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য গত জুন মাসে নিউ ইয়র্ক স্টেট বিপুল কর্মসংস্থান ও অর্থ সহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাড়িভাড়া সহায়তার জন্য ফেডারেল আর্থিক সহায়তা থেকে ২.৭ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল পৃথক করে রাখা। কিন্তু নিউইয়র্ক স্টেটে এই তহবিল বন্টন ব্যবস্থায় গৃহীত প্রক্রিয়া অত্যন্ত মন্থর। গত প্রায় দুই মাসে নিউইয়র্ক স্টেটে এ তহবিল থেকে কোনো অর্থ ভুক্তভোগীর কাছে পৌছেছে বলে জানতে পারেনি নিউইয়র্ক টাইম। অথচ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিউইয়র্ক স্টেটের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ রহিতকরণের আদেশের কার্যকারিতা ফুরিয়ে যাবে।
স্টেটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে চলতি মাসে তারা ১ লাখ ১৭ হাজার ডলারের ছোট অংকের অর্থ বিতরণের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন এবং উচ্ছেদ স্থগিতকরণের মেয়াদ শেষ হওয়ার শেষ সপ্তাহ নাগাদ পুরো বিতরণ ব্যবস্থা সম্পন্ন হবে বলে তারা আশা করছেন। স্টেটের এ সংক্রান্ত সফটওয়ারে কিছু বিভ্রাটের কারণে এ অনাকাংখিত বিলম্ব ঘটেছে বলে হাউজিং টিমের অভিমত। অনেক ভাড়াটিয়া অনলাইনে ফরম পূরণে ভুল করেছেন, সেগুলো পুনরায় তাদের কাছে ফেরত পাঠানো হয়েছে সংশোধিত আকারে পাঠানোর জন্য, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফরম থেকে ভাড়াটিয়াদের দেয়া পুরো তথ্য মুছে গেছে, যা নতুন করে জমা দেয়ার জন্য ভাড়াটিয়াদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।
পুরো প্রক্রিয়াটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে গেছে। তাছাড়া বরাদ্দকৃত তহবিল যেহেতু সরাসরি বাড়ি মালিকের ব্যাংক একাউন্টে যাবে, সেজন্য বাড়ি মালিককেও কিছু ফরম ও আইআরএস এর ডব্লিউ-৯ ফরম পূরণ করতে হয়, অনেক মালিক তা দ্বিধাদ্বন্দ্বের সঙ্গে পূরণ করে এবং ভুলও করে, যা এক্ষেত্রেও ঘটেছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন যে ফরম পূরণ করা প্রক্রিয়া জটিল, যার ফলে অনেক সহায়তাপ্রার্থী কোনমতে ফরম পূরণ করেছেন। হাউজিং টিমের মতে, বাড়ি ভাড়া সহায়তার জন্য আবেদন প্রক্রিয়াটি একটু বেশি মাত্রায় অগ্রসর, অনেক বেশি পেপারওয়ার্ক জড়িত, পূরণ করতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়ার মধ্যে সফটওয়্যারটি এমন যে সেভ করার বা পুনরায় চালু করা সুযোগ রাখা হয়নি।
এসব জটিলতা ও বিলম্ব সত্বেও ভাড়াটিয়াদের পক্ষ সমর্থনকারী প্রবক্তারা বলছেন যে, মহামারীতে সংকটে পতিত ভাড়াটিয়াদের জন্য ফেডারেল আর্থিক সহায়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক লাইফলাইন। হাউজিং টিমের মতে এত বিশাল একটি কাজ সম্পন্ন করতে গেলে এ ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে স্টেটের নিজস্ব তহবিল থেকে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সহায়তা বিতরণ করার কাজ ছাড়াও আনএমপ্লয়মেন্ট অ্যাসিষ্ট্যান্সসহ বিভিন্ন ফেডারেল আর্থিক সহায়তা বন্টনের গুরু দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে এবং সেসবের প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত আছে।
কিন্তু বাড়িভাড়া সহায়তার অর্থ বিতরণ প্রক্রিয়ার মন্থর গতি ভুক্তভোগীদের উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি করছে। একদিকে তারা ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ার কারণে উদ্বিগ্ন, অন্যদিকে সরকারি কর্তৃপক্ষের ত্রুটির কারণে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের আসন্ন হুমকির মুখে থাকা ভাড়াটিয়ারা, বিশেষ করে যারা স্বল্প আয়সম্পন্ন মানুষের এলাকাগুলোতে বসবাস করেন তারা বেশি সংকটের মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এসব এলাকার অনেক বাসিন্দার পক্ষেই ইন্টারনেট অ্যাকসেস নেই এবং যেখানে ইংরেজি অধিকাংশ বাসিন্দার প্রথম ভাষা নয়, এমনকি অনেকের স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ পর্যন্ত নেই। সকল তথ্য সম্পর্কে তারা অবহিত নয় এবং কোথাও গিয়ে কারো সাহায্য নিয়ে ফরম পূরণ করার চেষ্টারও হয়তো ঘাটতি আছে। উচ্ছেদ মরাটরিয়ামের মেয়াদ শেষ হওয়া মাত্র উচ্ছেদের প্রথম শিকারে পরিণত হবে এই শ্রেণির ভাড়াটিয়ারা। সিটির ব্রঙ্কস বরোর ননপ্রফিট সেবা সংস্থা ‘ব্রঙ্কসওয়ার্কস’, যারা বাড়িভাড়া সহায়তা লাভের জন্য ভাড়াটিয়াদের ফরম পূরণে সহযোগিতা করছে, সেই সংস্থার অ্যাসিষ্ট্যান্ট গভর্নমেন্ট ডাইরেক্টর স্কট আওয়াটের তার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে, যদি সঠিকভাবে ফরম পূরণ না করা হয় তাহলে নিউইয়র্ক স্টেট ও বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটির অসংখ্য লোককে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়ে রাস্তায় নেমে আসতে হবে অথবা কোন শেল্টারে আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।
স্টেটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে বাড়ি ভাড়া সহায়তা পাওয়ার জন্য গত সোমবার পর্যন্ত ১ লাখ ৬০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে এবং এগুলো যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। তারা স্বীকার করেছেন যে অনেক স্টেট বেশ আগেই এই আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে সক্ষম হয়েছে বলে সেসব স্টেটে ভুক্তভোগীদের কাছে সহায়তা আগে পৌছেছে। কিন্তু ইতোমধ্যে ত্রুটিগুলো দূর করা হয়েছে এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সেটে ভাড়া বাড়িতে বাস করেন এমন পরিবার সংখ্য ৮ লাখ ৩০ হাজারের বেশি এবং এর প্রায় সবই বাস করেন নিউইয়র্ক সিটিতে। ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যানালিসিস গ্রুপ ন্যাশনাল ইক্যুইটি অ্যটলাসের জরিপ অনুযায়ী তাদের বকেয়া বাড়িভাড়ার পরিমাণ আনুমানিক ৩.২ বিলিয়ন ডলার।
Posted ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh