নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১
গত বছরের মার্চ মাস থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে করোনা ভাইরাস যেভাবে হানা দিয়েছিল তা থেকে নগরবাসী স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলতে শুরু করেছিল ভাইরাসের প্রকোপ হ্রাসের ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক ধারণসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ শিথিল করায়। দীর্ঘ পনের মাসের প্রায় আত্মবন্দী জীবনের পর সিটিজুড়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু এরই মধ্যে দু:সংবাদ হিসেবে সিটিতে করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিস্তারের খবর। যার ফলে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে সিটিজুড়ে যেখানে দৈনিক গড়ে মাত্র ২০০ জন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে কয়েক দিন যাবত সিটিতে দৈনিক গড়ে ৪০০ বা আরও বেশি সংখ্যককে করোনা টেস্টে পজেটিভ পাওয়া যাচ্ছে, যা কয়েক সপ্তাহ আগের চেয়ে দ্বিগুণ বা তারও বেশি। ০.৬ শতাংশ থেকে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে টেস্টে পজেটিভ বৃদ্ধি ১.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভনশন (সিডিসি) এই বৃদ্ধিকে এখনো ন্যূনতম বলে উল্লেখ করলেও বৃদ্ধির হারকে দ্রুত বলেছে এবং সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বিস্ময় ও উদ্বেগ বোধ করছেন। কারণ তারা ধারণা করেননি যে গত জুন মাস জুড়ে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত সংখ্যা এত দ্রুত বেড়ে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে বয়স্ক লোকদের ৬৪ শতাংশ ইতোমধ্যে দুই ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন এবং মহামারী বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ পূর্ববর্তী দুটি পর্যায়ের মত বিপজ্জনক হবে না। কিন্তু সিটিতে সংক্রমণ হার বৃদ্ধিতে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কিউনি গ্রাজুয়েট স্কুলের পাবলিক হেলথ এন্ড হেলথ পলিসির সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডেনিস নাশ বলেছেন, ভাইরাসের বিস্তারকে “আশঙ্কাজনক” বর্ণনা করা হয়তো সঠিক নয়, তবে আমি বলতে চাই সংক্রমণ বৃদ্ধির এই প্রবণতা “উদ্বেগজনক”। কারণ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট করোনা ভাইরাসের প্রকৃত রূপের চেয়ে অধিক সংক্রামক। এমনকি “বি.১.১.১ ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও বেশি মাত্রায় সংক্রামক, যা প্রথমে যুক্তরাজ্যে সনাক্ত করা হয়েছিল এবং এটিকে ‘আলফা’ নামকরণ করা হয়। নিউইয়র্ক সিটি করোনা ভাইরাসের দুটি পর্যায়ে এবং বিশেষ করে দীর্ঘ দ্বিতীয় পর্যায়েও ‘আলফা’ ভেরিয়েন্ট থেকে মুক্ত ছিল।
গত ফেব্রুয়ারিতে ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায়ে নিউইয়র্ক সিটিতে কিছু সংখ্যক রোগীকে পাওয়া গেছে, যারা ডেলটা ভেরিয়েন্টে সংক্রমিত হয়েছিলেন। কিন্তু এর পরের দু’মাসে আর কারও মাঝে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সনাক্ত হয়নি এবং সিটিতে সার্বিক সংক্রমণ হারও কমে এসেছিল। কিন্তু মে মাসের শেষ দিকে সিটিতে যারা করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে তাদের ৮ শতাংশের মধ্যে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু জুনের মাঝামাঝি তা বেড়ে ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যদিও পুরো জুন মাসে সংক্রমণ হার দৈনিক ২০০ জনের মধ্যে সীমিত ছিল। ডেল্টা ভেরিয়েন্ট বৃদ্ধির প্রবণতা সত্বেও এবং এই ভেরিয়েন্ট কতটা সংক্রামক তা নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ তেমন বিস্মিত নন। কারণ ডেল্টার কারণে বিশ্বের অনেক দেশে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়েছে। যুক্তরাজ্যে ভ্যাকসিনেশনের হার যুক্তরাষ্ট্রের হারের চেয়েও বেশি হওয়া সত্বেও সেখানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ের প্রফেসর ড. ওয়াফা আল-সদর বলেছেন, সংক্রমণ হার যাই হোক না কেন, দেখার বিষয় হলো হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু হার। সেদিক থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অত্যন্ত কম। গত এক সপ্তাহে নিউইয়র্ক সিটিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে দৈনিক ভর্তি সংখ্যা দৈনিক গড় ছিল ২০ জন এবং করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মত্যু হার ছিল দৈনিক গড়ে চার থেকে পাঁচ জন। সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বলেছেন, সিটিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও টেস্টে পজেটিভ সংখ্যা কিছু বৃদ্ধি পেলৌ হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
তবে সিটি প্রশাসন ভ্যাকসিন নেয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। কারণ যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি সংক্রমণের আশঙ্কা তাদেরই বেশি। সেজন্য এখনো ভ্যাকসিন গ্রহণ করেনি, তাদেরকে ভ্যাকসিন নেয়ার আহবান জানিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সেবা সংস্থাগুলো। সিটিতে নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনেশন সেন্টার ছাড়াও বহুসংখ্যক ডাক্তারের অফিসে ও সিটির ভ্রাম্যমান ভ্যাকসিন সেন্টারে ভ্যাকসিন দেয়া অব্যাহত রয়েছে। ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে লড়তেও ভ্যাকসিন উচ্চ মাত্রার প্রতিরোধ। সিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভ্যাকসিন নেয়ার দিক থেকে ম্যানহাটানের লোয়ার হাফ, কুইন্স ও ব্রুকলিনের একটি অংশ এগিয়ে থাকলেও কৃষ্ণাঙ্গ ও গোঁড়া ইহুদি বসতিপূর্ণ স্থাগুলোতে ভ্যাকসিন নেয়ার হার খুব কম। তবে সিটি কতৃৃপক্ষ ডেল্টা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ বিস্তারের কারণে পুনরায় বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা বিবেচনা করছে না।
Posted ১২:৩৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh