বাংলাদেশ অনলাইন : | মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছেন, যাদের জন্য দুই মাস ধরে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কেটেছে স্বজনদের। ১৪ মে (মঙ্গলবার) বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি-১) জেটিতে ভেড়ে নাবিকদের বহনকারী জাহাজটি। এরআগে ১৩ মে (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টায় কুতুবদিয়ায় নোঙর করে এমভি আবদুল্লাহ। সেখান থেকে লাইটার জাহাজ জাহান মনি-৩ নাবিকদের নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। তাদের জন্য আগে থেকেই জেটিতে অপেক্ষায় ছিলেন কারো মা, ভাই-বোন, কারো স্ত্রী-সন্তান। কেউ কেউ সঙ্গে এনেছেন জাতীয় পতাকা। তাই নেড়ে তারা নাবিকদের স্বাগত জানান।
জাহান মনি-৩ জেটির কাছকাছি আসার পর ২৩ নাবিক ডেক থেকে হাত নেড়ে অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের সাড়া দেন। নাবিকদের স্বাগত জানাতে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি জেটিতে উপস্থিত আছেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম সোহায়েল। নাবিকদরা জেটিতে নামার পরই তাদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়।
সাধারণত নাবিকরা ছয় মাস বা আরো বেশি সময়ের জন্য জাহাজে করে দেশ ছেড়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যান। জাহাজ ভেড়ে বিশ্বের নানা বন্দরে। তাই দীর্ঘ সময় প্রিয়জনদের অনুপস্থিতিতে খানিকটা অভ্যস্ত থাকেন নাবিকদের স্বজনরা।
কিন্তু এবারের ফেরা অন্য রকম। দুই মাস আগে ভারত মহাসাগরের সোমালিয়া উপকূলে সশস্ত্র সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে আবদুল্লাহ; নাবিকরা হন জিম্মি। পরিবারের সদস্যদের ফোন করে তারা জানান, মুক্তিপণ না দিলে তাদের একে একে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
সেই ১২ মার্চ থেকেই পরিবারের সদস্যদের ফিরে পেতে উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ আর অনিশ্চিত অপেক্ষার শুরু। এরপর সমুদ্র পথের নিরাপত্তায় থাকা আন্তর্জাতিক বাহিনীগুলো এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করে, অভিযান চালিয়ে জাহাজ মুক্ত করার আগ্রহ দেখায়। স্থলভাগ থেকে সোমালি পুলিশের জলদস্যুদের ঘিরে ফেলার খবর আসে। জিম্মি জাহাজে পানি ও খাবার ফুরিয়ে আসার খবর উদ্বেগ বাড়ায়। একের পর এক ঘটনায় নাবিকদের পরিবারে বাড়তে থাকে দুশ্চিন্তা।
জিম্মি হওয়ার এক মাস পর যখন মুক্তি পান নাবিকরা, তখন সেই উদ্বেগের অনেকটা লাঘব হয়। কিন্তু স্বজনদের কাছে পাওয়ার অপেক্ষার শেষ হয়নি তখন। মঙ্গলবার বিকালেনিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের জেটিতে সেই অপেক্ষার অবসান হল।
গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে সোমালিয়া উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। অস্ত্রের মুখে জাহাজ ও ২৩ নাবিককে জিম্মি করে দস্যুরা।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে ৩৩ দিন পার করার পর গত ১৩ এপ্রিল রাত ৩টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজ ছেড়ে চলে যায়। এরপর দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় জাহাজটি।
এমভি আবদুল্লাহ শুরুতে যায় সংযুক্ত আর আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে। সেখানে জাহাজে থাকা কয়লা খালাস করা হয়। এরপর ওই বন্দরেই পণ্য লোডের পর মিনা সাকার বন্দরে যায় আবদুল্লাহ। সেখান থেকে আরব আমিরাতের ফুজাইরা বন্দরে থেমেছিল জ্বালানি নিতে। এরপর দুবাই থেকে ৩০ এপ্রিল রওনা হয় চট্টগ্রামের উদ্দেশে। বাংলাদেশের জলসীমার মধ্যে জাহাজ প্রবেশের খবর আসে বৃহস্পতিবার।
জিম্মি দশার দুই মাস পর দেশে ফিরে এমভি আবদুল্লাহ এখন কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করা আছে। সোমবার রাতেই সেখানে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস শুরু হয়েছে। জাহাজে ৫৬ হাজার মেট্রিক টন পাথর আছে। দুই দিন পণ্য খালাসের পর আবার চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে আসার কথা রয়েছে। সেখানে বাকি পণ্য খালাস করা হবে।
Posted ৪:৫১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh