বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

পাহাড়ের নির্জনতায় জেগে থাকা এক গ্রাম!

আবদুল্লাহ মাহফুজ   |   রবিবার, ২১ জুন ২০২০

পাহাড়ের নির্জনতায় জেগে থাকা এক গ্রাম!

এক সময় চাকরি সূত্রে নেত্রকোনার বিরিশিরি গ্রামে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে কবি রফিক আজাদ লিখেছিলেন, ‘ঠিকানা আমার পূর্ব-পুরুষের ছিল গারো-পাহাডইে/ আমি তো এসেছি ফিরে / শিকডরে টানে।’
রফিক আজাদের মতো ভ্রমণপিয়াসী অনেকেরই নজর কেড়েছে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত গ্রাম বিরিশিরি। যে এলাকাটিতে এক সময় পর্যটকদের আনাগোনা ছিল না, সেটিতেই এখন বিভিন্ন উৎসবে রাষ্ট্রীয় ছুটির দিনগুলোতে লেগে যায় ভিড়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ও গণমাধ্যমের কল্যাণে গ্রামটির পরিচিত এখন দেশজুড়ে।
কোলে গারো পাহাড় আর বুকে সোমেশ্বরী নদীকে নিয়ে বেড়ে ওঠা বিরিশিরিতে আছে চীনা মাটির পাহাড়, স্বচ্ছ নীল পানির লেক, গারো পাহাড়, স্রোতস্বিনী সোমেশ্বরী নদী, সুসং রাজার ঐতিহাসিক বাড়ি।

বহু কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় অনাবিল সৌন্দর্যের আঁধার নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার গ্রামটিতে। গ্রামটা যাতায়াতের রাস্তাগুলো এখনো এতটা ভালো হয়নি। ট্রেনে গেলে দীর্ঘ সময়ের ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে হয়। সেই সাথে লোকাল ট্রেনের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা না থাকলে পোহাতে হবে কষ্ট। আর সড়কপথে বাসে গেলে ময়মনসিংহের পর বেশ খানিকটা এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা পার হতে হবে। খুব বিলাসী আরামদায়ক বাস নেই এই রুটে। বিরিশিরিতে অবস্থানের জন্য নেই খুব ভালো মানের হোটেলও।
একটু কষ্ট করেই পৌঁছাতে হয় বিরিশিরিতে। তবুও একটু অবসর খোঁজা মানুষ ছুটে যায় বারবার। এবারের দুর্গা পুজা ও আশুরার ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছিল বিরিশির পথে। সব হোটেলই বুকিং হয়ে গিয়েছিল। বিরিশিরির বিভিন্ন স্পটে দেখা গেছে নানা বয়সী পর্যটকদের ভিড়।


কী আছে ওই গ্রামে? কেন বারবার ছুটে যাওয়া? এমন প্রশ্ন করেছিলাম বিরিশিরিতে বেড়াতে যাওয়া পর্যটক সোহান ফেরদৌসের কাছে। তিনি জানান, ‘আমি ছয় মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো এলাম এখানে। আমার কাছে বিরিশিরিকে শুধু চোখে দেখার নয়, উপলব্ধি করারও বিষয় আছে। চোখজুড়ানো সবুজের সাথে আপনি অনুভব করবেন অপার্থিব নিঃশব্দতা। এখানে আসা পর্যটকরা যদি শুধু হৈ-হুল্লোড় করেই ফিরে যায়, কিন্তু এর নীরবতা, নিঃশব্দতার সৌন্দর্য টের না পায়, তাহলে এখানে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।’
গতবারের ভ্রমণের বিষয়ে সোহান জানান, ‘গতবার যখন এসেছিলাম,তখন ঢাকা থেকে আসা একটি পিকনিক টিমকে দেখেছি এখানে। তারা বেশ আনন্দ উল্লাস করেছে। খুবই ভালো কথা। সন্ধ্যার পর শুরু হলো ডিজে পার্টি। আমার কাছে মনে হয়েছে তারা আসলে উপভোগ করতে জানে না। ঢাকার সেই যান্ত্রিকতা থেকে আপনি যদি নিস্তার পেতে ছুটে আসতে চান, তাহলে উচিত হবে ঢাকার সেই জীবনযাপনকে ঢাকাতেই রেখে আসা। বিরিশিরি গ্রামের নিজস্ব একটা শব্দ আছে। সেই সুরকে আপনি বুঝতে না পারলে এখানে আসাটাই বৃথা থেকে যাবে।’
সোহানের কথার রেশ ধরেই বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় নেমে এলাম বিরিশিরির পথে। রাত ৮টার পর পরই আস্তে আস্তে বন্ধ হতে থাকে দোকানপাট। খাবারের দোকানগুলো রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার ভেতর বন্ধ হয়ে যায়। চায়ের দোকানগুলো প্রায় বন্ধ হবে হবে করছে। দুই-একজন কাস্টমার আছে। গণমানুষের শোরগোল-হট্টগল নেই তেমন। সব কোলাহল বন্ধ হয়ে জেগে উঠে নির্জনতার কোলাহল। নানা রকম পোকা ডেকে চলছে।

বিরিশিরির অপরূপ সৌন্দর্যের মধ্যে যেমন রয়েছে নদী, পাহাড়সহ প্রাকৃতিক নানা দৃশ্য, তেমনি এলাকাটির পরিবেশ, জীবনযাপনেও রয়েছে আলাদা সৌন্দর্য। পুরো রূপ-বৈচিত্র্য উপভোগ করতে হলে মিশে যেতে হবে এখানকার পরিবেশের সঙ্গে। কয়েকটি নির্দিষ্ট স্পট নয়, বরং পুরো বিরিশিরির পথ-ঘাট জীবনযাপনকে তার মতো করে দেখতে পারলে সবটাই হয়ে উঠতে পারে ভ্রমণপিপাসু মনের তৃষ্ণা মেটানোর খোরাক। এই এলাকা মূলত গারো অধ্যুষিত গ্রাম। এখানকার বেশির ভাগ বাসিন্দারা গারো সম্প্রদায়ের। সেই সঙ্গে আছে বাঙালি হিন্দু-মুসলিম ও হাজং সম্প্রদায়ের বসবাস।


উৎরাইল বাজার থেকে রিকশা নিয়ে কিছু দূর এগুলোতেই চোখে পড়ল সোমশ্বরীর একটি শাখা নদী। বর্ষায় নদীর পানি বেড়ে টইটুম্বুর হয়ে আছে। স্রোতস্বিনী সোমেশ্বরী যেন তার রূপ যৌবনের অহংকার নিয়ে গম্ভীরভাবে বয়ে যাচ্ছে।

নদীর এ অংশে গড়ে ওঠা একটি সংযোগ সেতুর ওপর আমাদের রিকশা পৌঁছাতেই রিকশাচালক বাবুল হেসে বললেন ‘এখানে বসবেন মামা?’ তাঁর কথা মতো আমরা কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে রাতের নির্জনতা দেখছিলাম। সেতু ওপর ল্যাম্প পোস্টগুলোতে সোডিয়াম বাতি। বৃষ্টি ভেজা রাতে বয়ে চলা সোমেশ্বরীর বুকে যেন হাজার বছরের কোনো গল্প ঢেউ খেলে যায়। দূরে সেই ঢেউয়ের তালে তালে নৌকার বুকে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা আলো দুলতে থাকে। দৈনন্দিন জীবনের ঘোর থেকে বের হতে পারলে সে আলোর দিকে তাকিয়ে মনে হতে পারে কেউ একজন ডাকছে, যার সঙ্গে আপনার হাজার বছরের পরিচয়


advertisement

Posted ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২১ জুন ২০২০

Weekly Bangladesh |

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.