শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ | ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সর্বগ্রাসী থাবা

বাংলাদেশ রিপোর্ট :   |   বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সর্বগ্রাসী থাবা

ছবি : সংগৃহীত

শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ এন্ড অ্যানালিসিস উইং) এর প্রভাব বলয়ের বিষয়টি আবারও জোরেশোরে উঠে এসেছে। এমন কথাও প্রচলিত ছিল যে, ‘র’ অপারেটিভরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থান করেই আওয়ামী লীগ সরকারকে পরিচালনা করেছে। গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী বাংলাদেশে এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ থাবা বিস্তার করেনি।

ভারতের বাংলাদেশ বিরোধী গুপ্তচরবৃত্তি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ‘র’ এর তৎপরতা সম্পর্কে জানে, কিন্তু ভারতের অনুকূলে থাকে বাংলাদেশের যেসব রাজনৈতিক সরকার, তারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ‘র’ এর তৎপরতায় বাধা দিতে কার্যত নিরুৎসাহিত করে। বাংলাদেশে ‘র’ এর অশুভ তৎপরতা নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা আবু রুশদ, যিনি পরবর্তীতে সাংবাদিক হিসেবে তার পেশাজীবনে সামরিক বিষয়ে বহু অজানা তথ্য দেশবাসীর সামনে এনে জাতিকে সচেতন ও সতর্ক করেছেন।

আবু রুশদ বাংলাদেশে ভারতের গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান ‘র’ কর্মপরিধি ও অনুপ্রবেশের মাত্রা বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। এসব সাক্ষাৎকারেও উঠে এসেছে যে, ভারতের অপতৎপরতার সামনে বাংলাদেশ কতটা অসহায়। জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা বা এনএসআই-এর সাবেক এক মহাপরিচালক ব্রি: জে: (অব.) আমিনুল হক, বীর উত্তম এর মতে, বাংলাদেশে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে ‘র’ হাত বাড়ায়নি। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক সেক্টর ছাড়াও সামরিক এমনকি ধর্মীয় পর্যায়েও ‘র’ থাবা বিস্তার করেছে।

গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশে এদেশে ‘র’ এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ব্যাপক। তবে মূল উদ্দেশ্য হলো- ভারতের বাংলাভাষী রাজ্য পশ্চিম বাংলা ও বিচ্ছিন্নতাবাদ আক্রান্ত ‘সেভেন সিস্টার’ খ্যাত পার্বত্য রাজ্যগুলোর মাঝে অবস্থিত বাংলাদেশকে ভারতের প্রভাব বলয়ে রাখা, যাতে সেখানে ভারত বৈরী কোন শক্তির সাথে এমন কোন সম্পর্ক গড়ে না উঠে, যা এ অঞ্চলে ভারতের আধিপত্য বিস্তারের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ভারত সবসময় ‘বন্ধুভাবাপন্ন’ বাংলাদেশের বললেও আসলে তাদের ‘বন্ধুভাবাপন্ন’ কথাটি হচ্ছে বাংলাদেশ এমন পররাষ্ট্রনীতি, সমরনীতি গ্রহণ করুক, যা ভারতের নীতি আদর্শের সমান্তরাল। এমনটি হলে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য ভারতের অনুকূলে রাখার পরিপূরক।

ভারত যে বাংলাদেশের গৃহীত আদর্শকে তাদের পক্ষে দেখলেই কেবলমাত্র সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তার দৃষ্টান্ত ১৯৭১ সালেল শেষ দিকে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরুর মুহূর্তে ভারতীয় পার্লামেন্টে ইন্দিরা গান্ধীর বক্তব্য। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন, বাংলাদেশ সরকার ধর্মনিরপেক্ষমতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র-কে তাদের সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে’। এ চার নীতি ছিল ভারতীয় সংবিধানে অনুসৃত নীতির অনুরূপ। ভারত শুরু থেকে চেয়েছে যে, বাংলাদেশ তাদের পক্ষে থাকুক। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হোক ভারতের পররাষ্ট্রনীতির অনুকূল। এজন্য তাদের প্রয়োজন একটি ‘বন্ধুপ্রতিম’ বাংলাদেশ সরকার এবং অনুরূপ একটি সরকার গঠন বা ভারতের প্রতি নমনীয় মনোভাব গ্রহণে চাপ প্রয়োগের দায়িত্ব হচ্ছে ‘র’-এর।

বাংলাদেশে ‘র’ রাজনৈতিক অঙ্গনে সবসময় ভারতীয় আদর্শের সমান্তরাল মতাদর্শ বিস্তারে তৎপর। একইভাবে ‘র’ প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির বলয়; বলায় যায় বাংলাদেশের সাংস্কৃতি অঙ্গন পুরোপুরি ‘ভারতীয় মাউথপিস’। এসব সেক্টরে ‘র’ এর অনিয়মিত এজেন্টরা মাসিক ভাতা পায় বলে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে অনেকবার প্রকাশিত হয়েছে।

সংবাদ মাথ্যমে ‘র’ এমন প্রভাব আওয়ামী লীগের গত তিনটি মেয়াদের শাসনামলে ছিল সবচেয়ে বেশি। কিছুসংখ্যক মিডিয়াকে ‘র’ বিভিন্ন উপায়ে অর্থ বরাদ্দ দেয়। এছাড়া বিভিন্ন কলামিস্টকেও ‘র’ ভাতা দিয়ে, বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ দিয়ে, বা সম্মানসূচক খেতাব প্রদানের মাধ্যমে তাদের পক্ষে কাজ করিয়ে নেয়। ‘র’ বা ভারত যা বলতে চায়, ভাতাভোগী বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে তারা তা বলিয়ে নেয়। আবার ভুল-তথ্য পরিবেশন, প্রপাগান্ডা চালাতেও ‘র’ এদের কাজে লাগায়।

ভারত কখনো চায় না বাংলাদেশের কোন শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী থাকুক। ভারতীয় পত্র-পত্রিকা, বুদ্ধিজীবী, কলামিস্ট এবং টেলিভিশন টকশো’তে অংশগ্রহণকারী অনেক ভারতীয় বুদ্ধিজীবী মোটামুটি বলেই ফেলেন যে, ভারতের মত মিত্র থাকতে বাংলাদেশের শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনীর কোন প্রয়োজন নেই। ভারত যত এ ধরনের কথা বলে, বাংলাদেশের জনগণ তত বেশি ভারতীয় চক্রান্ত সম্পর্কে সচেতন হওয়ার সুযোগ পায়। সেদিক থেকে বলা যায়, ‘র’ বুদ্ধিজীবীদের মাথা কিনতে সক্ষম হলেও সাধারণ জনগণের ভারতের চক্রান্তমূলক আচরণের বিরোধিতায় সবচেয়ে বেশি সোচ্চার।

সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, বাংলাদেশের ছোট বড় প্রায় সব রাজনৈতিক দলেই ‘র’-এর অনুপ্রবেশ। তবে অবশ্য আওয়ামী লীগে ‘র’ এর অনুপ্রবেশ ঐতিহাসিক কারণেই সবচেয়ে বেশি। লক্ষ্যণীয় যে তদানীন্তন পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তানে যখন স্বাধিকার আন্দোলন দানা বেধে উঠে তখন ‘শত্রুর শত্রু বন্ধু’ এ থিয়োরীতে স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় গোয়েন্দারা পাকিস্তান বিরোধীদের একাংশের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তো ‘র’-এর স্পেশাল সার্ভিস ব্যুরো) মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। এছাড়া মুজিব বাহিনী নামে একটি কট্টর ভারতপন্থী বাহিনীও তারা গড়ে তোলে সংগোপনে মে. জে. উবানের নেতৃত্বে। স্বাধীনতার পর মুজিব বাহিনীর সদস্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রভাব প্রতিপত্তি দেশবাসীকে হতবাক করেছে, কারণ ‘র’ এর পরামর্শে তাদের নিয়েই গঠন করা হয়েছিল রক্ষিবাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের মধ্যেই ‘র’ অনুপ্রবেশ সবচেয়ে বেশি হয়েছিল, যা এখনো রয়ে গেছে। এজন্য দায়ী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের গুটিকয়েক কতিপয় ক্ষমতা ও অর্থলিপ্সু নেতা। কারণ তারা মনে করে ভারতের সাহায্য ছাড়া তাদের পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকা সম্ভব নয়।

Posted ১:৩৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1760 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.