বাংলাদেশ অনলাইন : | শুক্রবার, ২৩ আগস্ট ২০২৪
দেশের ভয়াবহ বন্যায় বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে নৌকা-স্পিডবোট নিয়ে বন্যায় প্লাবিত এলাকার মানুষজনকে উদ্ধারে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী মানুষজন। অনেকে কভার্ড ভ্যান, ট্রাক, পিক-আপ ভরে নিয়ে যাচ্ছেন শুকনো খাবার, জরুরি ওষুধ, নিরাপদ পানি, চাল-ডাল। কিছু জায়গায় বানভাসিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থ। আবার বন্যার্তদের সহযোগিতায় অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কর্মীরা একদিনের বেতন দান করেছেন। লাইন ধরে দাঁড়িয়ে দাতা প্রতিষ্ঠানে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা পৌঁছে দিতেও দেখা গেছে। অর্থাৎ যে যার জায়গা থেকে যেভাবে পারছেন সেভাবেই দাঁড়াচ্ছেন বানভাসি মানুষদের পাশে। অনেকেই বলছেন, দুর্যোগ ঘিরে এমন ‘একতাবদ্ধ বাংলাদেশ’ আগে দেখেননি তারা।
ত্রাণ দিয়ে শতশত মানুষ যুক্ত হচ্ছেন। কেউ নিয়ে আসছেন জামাকাপড়। কেউ আনছেন শুকনো খাবার—বিস্কুট, মুড়ি, চিড়া, কেক, পাউরুটি, বিশুদ্ধ পানি, মোমবাতি আরও অনেক সামগ্রী। কারও হাতে আবার সেনেটারি ন্যাপকিন। এমনকি, বাচ্চাদের ডায়াপার নিয়ে হাজির হয়েছেন অনেকে। ত্রাণ তহবিলে এসেছে বিভিন্ন খাবার সেলাইনসহ বিভিন্ন ওষুধ। যারা খাবার সামগ্রী দিতে পারেননি তারা দিয়েছেন নগদ অর্থ।
বিপুলসংখ্যক মানুষ সারিবদ্ধভাবে ত্রাণ দিচ্ছে। সেখানে থাকা শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে সেই ত্রাণ সংগ্রহ করছে। সেগুলো সাজিয়ে বন্যা দুর্গত এলাকার জন্য ত্রাণ নিয়ে ছুটছে আরেক দল। আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) এমনই চিত্র দেখা গেছে টিএসসি এলাকাতে। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ যেন দেখা গেল আজ।
শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সীরাই স্বাগ্রহে অংশ নেন কর্মসূচিতে। শিশুদের অনেককে দেখা গেছে, বহুদিন ধরে জমানো ব্যাংক নিয়ে আসতে। বন্যার্তদের পাশে থাকতে পেরে যেন তাদের চোখেমুখে আনন্দ। এমন দৃশ্য মন ছুঁয়ে গেছে কার্যক্রমে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের। প্রত্যাশার চেয়ে এত সাড়া পেয়ে মুগ্ধ তারা। সবাই একত্র হয়ে বিপদের ঢাল হওয়ার বিষয়টিকে চোখের শান্তি বলেও মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রমের নগদ অর্থ তোলার বুথে কাজ করছিলেন। তিনি জনগণের এত সাড়া পাওয়া নিয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, এত মানুষ অংশ নেবে, এত কিছু নিয়ে আসবে সবাই, এটা আসলে আশা করিনি। সবাই যার যার মতো এগিয়ে আসছেন। এই দৃশ্য আবারও প্রমাণ করল, বাংলাদেশের মানুষ মানুষের জন্য। আশা করি, ভিডিও বার্তা দেখে আরও মানুষ অনুপ্রাণিত হবে। সবাই এগিয়ে আসবে। সবাই এক হয়ে এই বিপদও কাটিয়ে উঠব আমরা।
হাসিব নামের আরেক স্বেচ্ছাসেবক বলেছেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা থেকেও আমরা বেশি সাড়া পাচ্ছি। মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে ত্রাণ সংগ্রহ। মধ্যরাতে বাকিসব একত্র করে আমরা বন্যাদুর্গত এলাকায় পাঠাব। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে সেটার ওপর নির্ভর করছে কতদিন এই কার্যক্রম চলবে। মানুষ সবাই বিপদে যেভাবে এগিয়ে এসেছে এটা অবিশ্বাস্য। এখানে সবই এসেছে। এখন বেশি বেশি লাইফ জ্যাকেট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
স্নিগ্ধা নামের এক শিক্ষার্থী এই কার্যক্রমের অংশ হয়ে উচ্ছ্বসিত। তার ভাষায়, ‘এই ত্রাণ সংগ্রহের কার্যক্রমে অংশ নিয়ে মনে হচ্ছে আমি আমার দেশের জন্য কিছু করতে পারছি। শুধু আমি নই, যারাই আসছেন খুবই আগ্রহ নিয়ে কাজ করছেন। সবাই দেশের জন্য এক হয়ে কাজ করছে। আসলে এই পরিস্থিতিতে ঘরে বসে থাকা সম্ভব না। এখন এক হয়ে দেশের জন্য করার সময়। সবাই ত্রাণ নিয়ে হাজির হচ্ছে। এমন দৃশ্য অবাক করার মতো।’
আরেক সেচ্ছাসেবক বলেছেন, ‘কেউ জামা কাপড় দিচ্ছে, কেউ বাচ্চাদের ডায়াপার দিচ্ছে, মেয়েদের জন্য স্যানেটারি ন্যাপকিন দিচ্ছে। সবাই এতকিছু নিয়ে আসছে, এতটা আমরা আসলে আশা করিনি। এখন পানি-চিনি-গুড় ও লাইফ জ্যাকেট দিয়ে সহায়তা করতে পারেন। তাহলে আমরা সারভাইভ করতে পারব।’
সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখে আসা চিত্র অনুযায়ী, নগদ অর্থের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের ত্রাণসামগ্রী জমা পড়েছে। সময়ের সঙ্গে ত্রাণ দেওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। সবাই স্বেচ্ছায় বন্যার্তদের পাশের দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশে এই চিত্র নতুন করে দৃষ্টান্ত তৈরি করল।
Posted ১১:২২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৩ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh