বাংলাদেশ অনলাইন : | সোমবার, ১৯ আগস্ট ২০২৪
ছবি : সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পড়ে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তার তিন দিন আগে ২ আগস্ট এক বৈঠকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে। সেখানে সেনাসদস্যরা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠক সম্পর্কে অবগত একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতের সাপ্তাহিক সংবাদ সাময়িকী দ্য উইক।
জুলাই মাস থেকে চলছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। আগস্টের শুরুতে তীব্রতা বেড়েছিল সেই আন্দোলনের। ছাত্র নেতৃত্ব দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল। দাবি তুলেছিল শেখ হাসিনার পদত্যাগের। তারপর ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এর আগে, পরিস্থিতি সামাল দিতে শেখ হাসিনা প্রশাসন মোতায়েন করেছিল সেনাবাহিনীকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২ আগস্ট এক কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছিলেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তরুণ অফিসারদের চরম ক্ষোভ সামাল দিতে হয়েছিল তাকে। বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সেনাকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ২ আগস্ট এক বৈঠকে ডেকেছিলেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান।
বৈঠক সম্পর্কে অবগত এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে দ্য উইক জানিয়েছে, সেখানেই বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ সেনা্বাহিনীর সদস্যরা। তখন তাদের সংযম রাখতে বলেছিলেন সেনাপ্রধান।সেনাপ্রধান বলেছিলেন, যদি অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতার হস্তান্তর করা হয়, তাহলে আমাদের দেশ কেনিয়া বা আফ্রিকার অন্যান্য দেশের মতো হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে ১৯৭০ সালের পর এমন গণ-বিক্ষোভ আর কখনও হয়নি। এটি একটি অনন্য ঘটনা। আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।
বৈঠকে সেনাপ্রধানের পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে তদন্তের আহ্বান আসে। তরুণ মেজর মো. আলী হায়দার ভূঁইয়া সেনা মোতায়েনকালে সেনাবাহিনী যে ভূমিকা রেখেছে, তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি পবিত্র কোরআন থেকে উদ্ধৃত করেন, তিনি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আল্লাহর করুণা ভিক্ষা করেন এবং এতে যুক্ত না হওয়ার কথা বলেন। একজন কনিষ্ঠ কর্মকর্তার এই আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শুধু বলেন, ‘আমিন’।
শুধু মেজর আলি হায়দার ভূঁইয়া একাই নন, সেনাবাহিনীর প্রতি জনসাধারণের ক্ষোভ যে ক্রমে বাড়ছে, তা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মেজর হাজেরা জাহান। সন্তান হারানোর শোক বেদনা এবং ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন তিনি। তার সঙ্গেও সম্মত হয়েছিলেন সেনাপ্রধান। এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব জানান, সেনাবাহিনীর প্রতি জনসমর্থন কমছে। তাই সেনা প্রত্যাহার করা উচিত। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের এক সেনাকর্তা পরামর্শ দেন, আহত ছাত্রদের সমর্থন করলে সেনাবাহিনী দ্রুত ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে পারবে।
এসময় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির এক কর্মকর্তা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কয়েকজন কর্মকর্তার ‘অগ্রহণযোগ্য’ কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন। জবাবে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, পরিস্থিতি ঠিক হলে এগুলো দেখা হবে। চূড়ান্ত বক্তব্যে সেনাপ্রধান যে সামাজিক চাপ এবং হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছেন, তা তুলে ধরেন এবং নিজের হতাশা প্রকাশে আইয়ুব বাচ্চুর একটি গানের কথা তুলে ধরেন।
Posted ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৯ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh