বাংলাদেশ অনলাইন : | শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪
সিলেটের বন্যা। ছবি : সংগৃহীত
সিলেটে পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশুসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। ২০ ও ১৯ জুন সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি বগাইয়া হাওড়ে গ্রামের ক্লাব ঘরের সামনে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনে জড়িয়ে জুয়েল মিয়া (১৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। জুয়েল ওই গ্রামের মান্নান মিয়ার ছেলে ও পেশায় একজন দর্জি বলে জানিয়েছেন গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম। এর আগে, ১৯ জুন দিনগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের কাপনা নদী থেকে নৌকা ডুবে নিখোঁজ যুবকের লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। মৃত মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন (২৬) ফতেহপুর প্রথম খ-গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে ওসি জানান, রাতে ফতেহপুরের বাংলাবাজার থেকে অন্যদের সঙ্গে নৌকায় বাড়ি ফিরছিলেন সাখাওয়াত। ফতেহপুরের লংপুর সড়ক এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ নৌকাটি ডুবে যায়। অন্যরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও সাখাওয়াত নৌকাসহ স্রোতে তলিয়ে যান। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর রাত ১২টার দিকে ঘটনাস্থলের পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে, বিছনাকান্দির হাদারপার বাজার সংলগ্ন উপরগ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নাজমিন আক্তার (১০) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। অন্য শিশুদের সাথে লুকোচুরি খেলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই নাজমিন মারা যায়। সে বিছনাকান্দি ইউনিয়নের উপরঘাম গ্রামের আব্দুলাহ মিয়ার দ্বিতীয় মেয়ে। ১৯ জুন বিকেল ৫টার দিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ঝালোপাড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মিনতি রানী (৪০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। মিনতি ঝালোপাড়ার নৃসিংহ জিউর আখড়ার পার্শ্ববর্তী বাসার বাসিন্দা।
মন্দিরের পানির পাম্পে সুইচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মিনতি রানী গুরুতর আহত হলে দ্রুত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দক্ষিণ সুরমা থানার কদমতলি ফাঁড়ির ইনচার্জ দেবাংশু পাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ১৯ জুন বিকেলে জকিগঞ্জ উপজেলায় মাছ ধরতে গিয়ে স্রোতে ভেসে যাওয়া আব্দুল হালিম (৫৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি মুহিদপুর গ্রামের মৃত রনই মিয়ার ছেলে ও পেশায় পিকআপ চালক। ঘটনাটি বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর এলাকায় ঘটেছে।
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন জানান, আব্দুল হালিম ভেলা নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সকাল থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে, বেলা ২টার দিকে শাহবাগ মুহিদপুর এলাকায় তার লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
২০ জুন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের শ্যামেরকোনা গ্রামে পানিতে ডুবে এক শিশু ও এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলো- উপজেলার পশ্চিম শ্যামেরকোনা গ্রামের পচন মিয়ার ছেলে ছাদি মিয়া (৮) এবং একই গ্রামের জমির মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (১৭)।
চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকতার উদ্দিন জানান, ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে শ্যামেরকোনা গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। দুপুরে পানিতে খেলতে নেমে সাঁতার না জানার কারণে দুজনই পানিতে ডুবে যায়। দুজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিদ্যুৎহীন ১২ হাজার গ্রাহক : বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেটে বিভিন্ন বিদ্যুৎ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলমান বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ১০ থেকে ১২ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। যার ফলে, এই অঞ্চলের বিদ্যুৎ বিভাগের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ২০ জুন বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকাশিক প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের বন্যায় প্রায় এক কোটি ৬৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বন্যার কারণে বিতরণ অঞ্চল, বাবিউবো, সিলেট অঞ্চলের সকল কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা/ কর্মচারীরা যার যার অবস্থান থেকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিতরণ জোনের আওতাধীন সকল এলাকাই কম-বেশি বন্যা কবলিত হওয়ায় বন্যার পানি কমার পর প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য নিরূপণ করা সম্ভব হবে বলেও জানানো হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ সার্বিকভাবে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং সদা সতর্ক রয়েছে। কোথাও ছেড়া বৈদ্যুতিক তার দেখলে নিকটস্থ বিদ্যুৎ অফিসে অবহিত করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়।
Posted ৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh