বাংলাদেশ অনলাইন : | মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের অস্ত্রধারী রুশপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুটি অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে কার্যত ইউক্রেন দখলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করলেন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই নেতা। এখন বিদ্রোহীদের দুই অঞ্চলের স্বাধীনতার স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে সেখানে রাশিয়ার সেনা পাঠানোর সুযোগ তৈরি হলো। ২১ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে পুতিন ইউক্রেনকে রাশিয়ার ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বর্ণনা করেন। ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, পূর্ব ইউক্রেন এক সময় রাশিয়ার ভূমি ছিল। তিনি আত্মবিশ্বাসী যে, রাশিয়ার জনগণ তার এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাবে।
দীর্ঘ ভাষণে পুতিন ওই অঞ্চলের ইতিহাস তুলে ধরেন। অটোমান সাম্রাজ্য থেকে শুরু করে ন্যাটোর পূর্ব ইউরোপে সম্প্রসারণ নিয়ে সৃষ্ট সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিয়েও কথা বলেন তিনি। পুতিন বলেন, ‘আমি মনে করি একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। যে সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল। তা হলো অবিলম্বে দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক-এর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেওয়া।’
এর আগে পুতিন বলেছিলেন, ইউক্রেন যদি ন্যাটোতে যোগ দেয় তাহলে সেটা রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ক্রেমলিন জানিয়েছে, জার্মানি ও ফ্রান্সের নেতাদের ফোন করে পুতিন তার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। পরে ডিক্রিতে সই করে তিনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এ ভাষণ দেন। টেলিভিশন ভাষণের আগে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তিতেই স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এমন সময় এ পদক্ষেপ নিলেন যখন ইউক্রেনের সীমান্তে প্রায় দেড় লাখ রুশ সেনা মোতায়েন রয়েছে। মস্কো ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করলেও আমেরিকাসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো দাবি করছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেন দখল করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
এর আগে দোনেৎস্ক অঞ্চলের নেতা ড্যানিস পুশিলিন ও লোগানস্ক অঞ্চলের নেতা লিওনি পাসচেনিক সোমবারই তাদের নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য রাশিয়ার প্রতি আবেদন জানিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে রাশিয়ার জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ দুমা এক বিল পাস করে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনবাস অঞ্চলকে স্বাধীন অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য পুতিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।
দোনেৎস্ক ও লুহানস্কসহ রুশ বংশোদ্ভূত নাগরিকদের নিয়ে গঠিত আরো কয়েকটি অঞ্চলকে নিয়ে বৃহত্তর দোনবাস অঞ্চল গঠিত। ২০১৪ সালে কথিত রঙিন বিপ্লবের মাধ্যমে পাশ্চাত্যপন্থি সরকার ইউক্রেনের ক্ষমতা গ্রহণ করলে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক একতরফাভাবে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ অস্বীকার করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন সোমবার রাতে প্রায় এক ঘণ্টার টেলিভিশন ভাষণে বলেন, সোভিয়েত শাসনামলে রাশিয়ার ঐতিহাসিক ভূমি ইউক্রেনকে দিয়ে দেয়া হয় যার কারণ এখনও অজানা।
ইউক্রেনকে বিদেশিরা চালাচ্ছে- অভিযোগ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনের সংবিধানে দেশটিতে বিদেশি সেনা উপস্থিতি নিষিদ্ধ থাকলেও বর্তমানে সেদেশে ন্যাটোর প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে যার অর্থ ইউক্রেনে বিদেশি সেনা উপস্থিতি রয়েছে। ন্যাটো জোটে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তির ফলে রাশিয়ার নিরাপত্তা আরো বেশি হুমকিগ্রস্ত হবে জানিয়ে পুতিন বলেন, ইউক্রেনে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপিত হলে রাশিয়ার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড ওই ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় চলে যাবে।
Posted ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh