বাংলাদেশ অনলাইন : | সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
‘লুট করে আমেরিকা নিয়ে যাবেন, সব রেখে দেবে।’ পরিবেশ সংক্রান্ত এক রিটের প্রতিবেদন দাখিলের শুনানিতে এমন কথা স্পষ্ট স্মরণ করে দিলেন হাইকোর্ট। বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদী দখলমুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। দফায় দফায় সময় দেয়ার পরও বরিশালের জেলা প্রশাসক প্রতিবেদন জমা দেয়নি। ২৮ মে (রোববার) এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। এদিনও প্রতিবেদন জমা না দিয়ে সংশ্লিষ্ট ডিসির পক্ষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আবারও সময় আবেদন করা হয়। তখন এই সংক্রান্ত শুনানির এক পর্যায়ে হাইকোর্ট উপরিউক্ত মন্তব্য করেন।
এসময় জেলা প্রশাসকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেন, ডিসিরা নিজেরা রাজত্ব কায়েম করেছেন। তারা আদালতের আদেশ মানেন না। তাহলে এ আদেশ দিয়ে কী লাভ? এসময় আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে সময় আবেদন করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জুলফিয়া আক্তার।
জুলফিয়া আক্তার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ডিসির পক্ষে আবারও সময় চেয়ে আদালতকে বলেন, আমাদের সময় দিন, আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।
এসময় রিটকারীপক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আদেশ নিয়ে ডিসিরা এক ধরনের খেলা করেন। তখন আদালত বলেন, যা দেখবেন তাই তো শিখবেন। সচিবরাও তো তা-ই করেন। আদালত অবমাননার হাজার হাজার মামলা পড়ে আছে।
মনজিল মোরসেদ বলেন, আমরা তাহলে কোথায় যাব? আদালত বলেন, আপনারা কনটেম্পট (আদালত অবমাননা) কোর্টে যান। মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালতের আদেশ মানাতে হলে সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদের ক্ষমতা (আদালত অবমাননা সংক্রান্ত) চর্চা করতে হবে। সেটা না করলে আইনের শাসন থাকবে না। জনগণও কোনো বিচার পাবে না। রাষ্ট্র কলাপস করলে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এসময় হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের কাছে প্রতিবেদন না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমাদের সর্বশেষ আরো একটু সময় দিন।
তখন হাইকোর্ট বলেন, আপনি যদি একশ বছরও সময় নেন লাভ হবে না। দেশ এটাই, এখানেই থাকতে হবে। লুট করে আমেরিকা নিয়ে যাবেন, সব রেখে দেবে। তাই পরিবেশটা ঠিক রাখতে বলেন। শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ১৮ জুন তারিখ রাখলাম। জেলা প্রশাসককে ভালো করে বুঝিয়ে বলেন। সম্মানের জায়গাটা ঠিক রাখতে বলবেন। না হলে জবাব দিতে হবে।
এই বিষয়ে আজ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ভোরের কাগজকে বলেন, সন্ধ্যা নদীতে মাটি ভরাট করে গুচ্ছগ্রাম দখল করা হচ্ছিল। বিষয়টি আমরা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। হাইকোর্ট অনেকগুলো নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এই বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে। তারা প্রতিবেদন না দেয়ায় পাঁচ বছর পর আদালতে আবেদন করেছিলাম। গুচ্ছগ্রামের স্থাপনা অপসারণ করে প্রতিবেদন দেয়ার কথা ছিল। যাদের সেখানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তাদের সরকারি জমিতে অন্য কোথাও বরাদ্দ দিতে নির্দেশনা ছিল। বরিশালের যত নদ-নদী আছে, সেগুলো যেন দখল না হয়, সেজন্য মনিটরিং টিম গঠন করতে বলা হয়েছিল। এছাড়া অবৈধ মাটি ভরাট উচ্ছেদ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সেসব আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু জেলা প্রশাসক আদেশ অমান্য করে প্রতিবারই সময় নিচ্ছেন।
২৮ মে (রোববার) প্রতিবেদন দেয়ার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু প্রতিবেদন জমা দিয়ে সময় আবেদন করায় আদালত উষ্মা প্রকাশ করেন।
Posted ১২:০৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh