বাংলাদেশ অনলাইন : | মঙ্গলবার, ০৬ আগস্ট ২০২৪
গণভবনে সাধারণ মানুষ। ছবি : এএফপি
জনতার দখলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন। শুধু বাসভবন না প্রধানমন্ত্রীর বেডরুমও রক্ষা পায়নি জনতার কাছ থেকে। অনেকেই শুয়ে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিছানায়। উল্লাস করতে করতে বলতে দেখা যায়, আমি এখন প্রধানমন্ত্রীর বিছানায়। মুহূর্তের মধ্যে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে ওই ছবি। প্রতিবেশী দেশ ভারতের অন্যতম বাংলা পত্রিকা আনন্দ বাজার তো লিখেই ফেলে হাসিনার বিছানাও দখল। এদিকে গণভবনের রান্নাঘরে দুপুরের খাবার রান্না করাও ছিল তাতে। সেখানে জায়গা পেয়েছে বিরিয়ানি ও মুরগির মাংস। তা খাওয়ার ছবি দিয়েছেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে ছবি ভিডিওতে ছয়লাব।
বেশ কয়েকটি পোস্টে দেখা যায়- আসিফ হাসান সাঁতার কেটেছেন সুইমিং পুলে। সে ছবিতে দেখা যায় আরও অনেকেই গা ভেজাচ্ছেন, করছেন উল্লাস। নিয়ামুল চৌধুরীর ছবিতে দেখা যায়- রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের সময় যে চেয়ারে বসতেন সে চেয়ারে পা তুলে বসা। ক্যাপশনে লিখেছেন- এই চেয়ারটা স্বৈরাচারের নয়, এই চেয়ারটা জনতার। অঙ্কিতা দেবনাথের ছবিতে দেখা যায়- গোল টেবিল বৈঠকখানার প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারটায় বসা। ভঙ্গিটা এমন যেন আদেশ দিচ্ছেন কাউকে। তিনি ক্যাপশনে লেখেন- এই জায়গায় বসে কতো যে দুর্নীতির আদেশ দিয়েছে হাসিনা। কৌশিক সরকারের একটি ভিডিওতে দেখা যায়- প্রধানমন্ত্রীর ঘরের কর্নার টেবিলে দাঁড়িয়ে আছেন। আর ফোনে আদেশ দিচ্ছেন ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালানোর। দুপুর থেকেই গণভবনের চারপাশে অবস্থান নিয়েছিলেন ছাত্র-জনতা। প্রধানমন্ত্রী দেশ ছাড়ার খবর আসার আগেই তারা বিজয় উল্লাস করছিলেন। সরজমিন দেখা যায়, সকাল থেকেই রাজধানীর গণভবনের চারপাশে তখনও নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বিরাজ করছিল।
ইন্টারনেট না থাকায় তথ্য পাচ্ছিলেন না ছাত্র-জনতা। তারা স্লোগান দিচ্ছিলেন- ‘চল যাই গণভবন’, ‘হই হই রই রই স্বৈরাচারী গেলি কই?’, ‘শেখ হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’ ইত্যাদি। ইন্টারনেট সচল হওয়ার পর সকলে জানতে পারেন বেলা দুটায় সেনাপ্রধান ভাষণ দেবেন এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর আসে। এটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিজয় উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে। তখনও নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি। এরপর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে লাখো লোকে পরিণত হয়। আড়াইটার দিকে একে একে চলে যেতে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তখন ছাত্র-জনতা চারপাশ দিয়ে গণভবনের দিকে এগোতে থাকে।
তারকাঁটার বাধা পেরিয়ে পুরানো বাণিজ্যমেলার সামনে দিয়ে মিছিল নিয়ে এগোতে থাকে একটি দল। সেই পথ ধরে এগিয়ে গিয়ে দেখা যায় পূর্বেই বিপুলসংখ্যক লোক ভেতরে প্রবেশ করেছেন। ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় বিভিন্ন কক্ষে অনেক জনতা। সেখানে থাকা কক্ষ থেকে যে যা পারছেন নিয়ে বের হচ্ছেন। আবার অনেকে তালাবদ্ধ কক্ষগুলো ভাঙছেন। বিশাল গণভবনের চারদিকে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় কিছু সময়ের মধ্যেই। গণভবনের সম্মুখভাগে একত্রে থাকা কয়েকটি কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, অতিথিদের জন্য রাখা চেয়ার তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে থাকা সোফা, চেয়ার টেবিল, লাইট-ফ্যান, এসি, সিসিটিভি ক্যামেরা, মনিটর, টেলিভিশন খুলে নিয়ে যায়। কয়েকটি আলমারি ভাঙতেই বেরিয়ে আসে থালাবাসন, চামচ, টিস্যু বক্স ইত্যাদি। আরেকটি আলমারি থেকে বের হয় শুকনা খাবার- বিস্কুট, চানাচুর, খেজুর ইত্যাদি।
গণভবনের মাঠে ছাত্র-জনতা একেক দল একেকবার দু’রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করেন। বাকি স্থানগুলোতে থাকা আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ফলক, ব্যানার, ক্রেস্ট ভাঙা শুরু করেন। বেরিয়ে এসে দেখা যায়, যে যা পাচ্ছেন নিয়ে বের হচ্ছেন। অনেকের হাতে দেখা যায়- হাঁস, মুরগি, খরগোশ, ছাগল, তিতির, রাজহাঁস, কাঁথা, কম্বল, ফ্রিজের মাছ, শুঁটকি। বাইরে বেরিয়ে দেখা যায় গণভবন থেকে আলমারি, ফ্রিজ, ফ্যান, ওয়াশিং মেশিন, এসি, ঝারবাতি নিয়ে যায়। অনেকে নিয়ে যায় শাড়ি, বাগান থেকে ফুলের টবসহ গাছ নিয়ে যেতে দেখা যায়। আবার একদল লোক শুধু বিভিন্ন ড্রয়ারে থাকা কাগজপত্র নিয়ে যায়। আবার উত্তেজিত জনতা বেশ কিছু কক্ষে, গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। দীর্ঘসময় ধরে গণভবনের আকাশে উড়তে থাকে ধোঁয়া। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জনতার দখলে ছিল এক সময়ের নি-িদ্র নিরাপত্তায় মোড়া প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন।
Posted ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৬ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh