বাংলাদেশ অনলাইন : | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪
টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন জেলায় দেখা দিয়েছে বন্যা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার নোয়াখালী ভাসছে। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে হু হু করে ঢুকছে পানি। রাস্তাঘাট-বাড়িঘর তলিয়ে বিপাকে কয়েক হাজার মানুষ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
গত ২০ আগস্ট রাত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ভারি বৃষ্টি হয়। পাশাপাশি, বন্দরের পাশে বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকতে থাকে। এতে আখাউড়া স্থলবন্দর, বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, অমরপুর, রহিমপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগর, কর্নেল বাজার, মোগরা মনিয়ন্দসহ অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এর মাঝে, বীরচন্দ্রপুর গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার নামে এক গর্ভবর্তী নারীর মৃত্যু হয়। বন্যার্তদের সাহায্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বন্যা দুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খোয়াই নদীর সবগুলো পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। শহরতলীর জালালাবাদ এলাকার বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এতে রিচি ও লোকড়া ইউনিয়নের হাওরে রোপা আমন ও মৎস্য খামারিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
মৌলভীবাজার
কয়েক দিনের অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মনু ও ধলাই নদীর অন্তত পাঁচটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব ভাঙন দিয়ে প্রবল স্রোতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার টিলাগাঁও ইউনিয়নের হাজিপুর গুদামঘাট এবং কমলগঞ্জের ইসলামপুর, মখাবিল ও আদমপুর ইউনিয়নের কয়েকশ গ্রাম তলিয়ে গেছে। জেলার সবগুলো নদীর পানি এখন বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে।
সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জে বৃষ্টি, উজানের পাহাড়ি ঢল সুরমাসহ অন্যান্য নদীর পানি বাড়ছে। সুরমা নদীর পানি বুধবার ১২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এতে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়িতে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ভেঙে পড়েছে সিঙ্গিনালা গ্রামের ৪০ বছরের পুরানো সেতু। এতে মহালছড়ির সঙ্গে মুবাছড়ি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় খাগড়াছড়ির সঙ্গে রাঙামাটির সাজেক, লংগদু ও বাঘাইছড়ি সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। জেলায় পানিবন্দি এখনো প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। বন্যায় ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। নষ্ট হয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত। ৯৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে প্রশাসন। বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার, মোমবাতি, বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করছে বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীরা।
ফেনী
মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন স্থান দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করতে থাকায় একের পর এক জনপদ ডুবে যাচ্ছে ফেনীতে। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ফেনীর সাড়ে তিন লাখেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে জেলার বাসিন্দারা। ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট, আমজাদহাট ইউনিয়নের ৪০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পরশুরামের মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ এবং পৌরশহরসহ ৪৫টির বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ছাগলনাইয়ার পাঠান নগর, রাধানগর, শুভপুর ইউনিয়নেরও বেশ কয়েকটি গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে বন্যার।
নোয়াখালী
নোয়াখালীতে বুধবার ভোর থেকে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। ভেসে গেছে কয়েকশ মাছ ও মুরগির খামার, আমনের বীজতলা, শাকসবজির ক্ষেত। ঝড়ো বাতাসে ভেঙে পড়েছে গাছপালা। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে কয়েকটি এলাকা। ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
কুমিল্লা
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে গোমতী নদীর পানিতে কিং বাজেহুড়া গ্রামটি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বানভাসীদের সাহায্যে কাজ করছেন স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়া, বুধবার বিকেলে তিতাস উপজেলার আসমানিয়া বাজারসংলগ্ন কাঠের সেতু এলাকায় তীব্র স্রোতে গোমতী নদীর ওপর নির্মিত একটি বেইলি সেতু ভেঙে গেছে।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের পুরো ফটিকছড়ি উপজেলা পানির নিচে চলে গেছে। এতে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া, রাউজান উপজেলার প্রায় আটটি ইউনিয়ন এবং হাটহাজারী উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
Posted ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh